২৮ বছর বয়সী মাসুদ আল মাহদী ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করেন।
চাকরির প্রস্তুতি নিতে চানখারপুল নাজিমউদ্দীন রোডের স্বপ্ন ভবনের অষ্টম তলার একটি কক্ষে আরও দুজনের সঙ্গে থাকতেন তিনি।
সোমবার বিকেলে ওই কক্ষ থেকেই তার মরদেহ উদ্ধার করা হয় বলে ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. জসীম উদ্দিন মোল্লা জানান।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “ওই কক্ষে মাহদী ছাড়াও আরও দুজন থাকতেন। তারা সকাল ৯টার দিকে বেরিয়ে যান। বেলা ২টার দিকে বাসায় ফিরে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ পান।
“অনেকক্ষণ ডাকাডাকির পর তারা আশপাশের লোকজনকে নিয়ে দরজা ভেঙে ফ্যানের সঙ্গে মাহদীর ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান বলে আমাদের জানিয়েছেন।”
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, পাশের কক্ষের একজন বেলা ১২টার দিকেও মাহদীর সঙ্গে কথা বলার কথা পুলিশকে জানিয়েছেন।
“তার মানে ওই দুপুরের দিকেই ঘটনাটা ঘটেছে। মৃতের সুরতহাল রিপোর্ট করা হয়েছে। পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হবে।
“সেখানে রিপোর্টে জানা যাবে তিনি কীভাবে মারা গেছেন। সেটার উপর ভিত্তি করে এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।”
মাসুদ আল মাহদী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি থাকতেন মাস্টার দা সূর্যসেন হলে। তার বাড়ি পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদে।
৪১তম বিসিএস পরীক্ষায় প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হয়ে লিখিত পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন মাহদী। গত তিন মাস ধরে চানখারপুলের ওই মেসেই থাকছিলেন।
জহিরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতিদিনের মত আমি সকাল ৯টায় বাসা থেকে বের হয়ে কাজে যাই। ইমরানও দশটার দিকে বেরিয়ে যায়। আমি যখন গেলাম, মাহদী তখনও ঘুমাচ্ছিল।
“দুপুর অফিস শেষে বাসায় আসার পর দেখি দরজা বন্ধ। অনেক বার ফোন দিয়েছি। ফোন রিসিভ করে না। দরজার ফাঁক দিয়ে দেখি গামাছায় ঝুলছে। পরে আশপাশের লোকজনকে ডেকে দরজা ভেঙে ওই অবস্থা দেখে ৯৯৯ এ ফোন করে পুলিশকে খবর দিয়েছি।"
মাহদীর বন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী আবু সাঈদ ওই মেসের অন্য একটি কক্ষে থাকতেন।
তিনি বলেন, “দুপুর ১২টার দিকে আমি স্কচটেপ আনতে ওর রুমে গিয়েছিলাম। তখন দরজা খোলা ছিল, ও শুয়ে শুয়ে মোবাইল টিপছিল। আমাকে বলছিল ওরপড়ালেখা হচ্ছে না বাসায়, লাইব্রেরিতে যাওয়া দরকার।
“আমি চলে আসার পর দুপুর ২টার দিকে ওর রুমমেট জহিরুল এসে আমাকে ডেকে নিয়ে যায়। আরও কয়েকজন মিলে দরজা ভেঙে আমরা তার ঝুলন্ত লাশ দেখতে পাই।”
এক প্রশ্নের জবাবে আবু সাঈদ বলেন, “ওর আত্মহত্যা করার কোনো কারণ দেখি না আমি। চাকরি পাওয়া নিয়ে কিছুটা হতাশা ছিল। কিন্তু আত্মহত্যা করার মত কিছু দেখিনি। ও কোনো কিছুতে এডিক্টেডও ছিল না।”