শুক্রবার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে তিনি এই প্রত্যাশার কথা বলেন।
বঙ্গবন্ধুর মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “সারা বিশ্বে শান্তি ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার এই মহান সংস্থার সামনে বিগত প্রায় ৪৬ বছর আগে আমার পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যার ন্যায়বিচার পাওয়ার প্রত্যাশার কথা তুলে ধরতে চাই।”
বাংলাদেশের স্বাধীনতার মাত্র চার বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে সেনাবাহিনীর একদল সদস্য।
বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব,তাদের তিন ছেলে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল ও দশ বছরের শেখ রাসেল; বঙ্গবন্ধুর ভাই মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবু নাসেরসহ পরিবারের ১৮ জন সদস্য ও নিকটাত্মীয়কে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় সেই রাতে।
বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার দশ দিনের মাথায় সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পাওয়া জিয়াউর রহমানও ওই হত্যাকাণ্ডে ‘পুরোপুরি’ জড়িত ছিলেন বলে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সে সময় দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। কিন্তু পরিবারের সবার নিহত হওয়ার খবর পেয়েও তারা দেশে ফিরতে পারেননি।
সে কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “৬ বছর আমরা দেশে ফিরতে পারিনি। মিলিটারি ডিকটেটর আমাদের দেশে আসতে দেয়নি। স্বজন হারানোর বেদনা বুকে নিয়ে বিদেশের মাটিতে নির্বাসিত জীবন কাটিয়েছি। এরপর জনগণের সমর্থন নিয়ে দেশে ফিরে আসার সুযোগ পাই।
“দেশে এসে আমি আমার দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম শুরু করি। অনেক ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে আমাকে চলতে হয়েছে। বার বার মৃত্যুর মুখে পড়তে হয়েছে। কারাবরণ করতে হয়েছে। থেমে থাকিনি, পথ চলেছি।”
এরপর ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। সে সময় ২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড নিক্ষেপ করে শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়।
২০০৭ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করে তাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও চালানো হয়। তবে তাকে আটকে রাখা যায়নি।
২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। তারপর টানা তৃতীয় মেয়াদে এখন সরকার প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
জাতিসংঘ অধিবেশনে বিশ্ব নেতাদের সামনে তিনি বলেন, “আমার একটাই লক্ষ্য, আমার পিতা, জাতির পিতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যে স্বপ্ন দেখেছিলেন সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করবেন, আমি সেই কাজ আন্তরিকতার সাথে করে যাচ্ছি।
“যতদিন বেঁচে থাকব, মানুষের কল্যাণের জন্য, নিজের জীবনকে আমি উৎসর্গ করেছি, মানুষের জন্য কাজ করে যাব। ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশের মানুষ উন্নত জীবন পাবে।”
১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় ফেরার পর ইতিহাসে চিহ্নিত কালো ওই অধ্যাদেশ বাতিলের পর জাতির পিতার খুনের বিচারের পথ খোলে।
এরপর দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে আদালতের চূড়ান্ত রায় অনুযায়ী ছয় খুনির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তবে মৃত্যুদণ্ড মাথায় নিয়ে পাঁচজন এখনও রয়েছেন পলাতক।