শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার রায় এই অভিযোগ করেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “আমরা গভীর উদ্বেগেরে সাথে অবগত করছি যে, গত প্রায় তিন দশক যাবৎ একটি বিশেষ মহল বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের পারিবারিক বন্ধন ও সম্প্রীতিকে ধ্বংস করার গভীর চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে।
“সে পথ ধরেই কতিপয় স্বার্থান্বেষী এনজিও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হিন্দু নারীদের সম্পদে অধিকার নেই, এ বাহনা তুলে হিন্দু সম্প্রদায়ের শাস্ত্রীয় বিধি-বিধান পরিবর্তনের প্রচেষ্টার মাধ্যমে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা ও হিন্দু পরিবারগুলোকে ধ্বংস করার গভীর চক্রান্তে নতুন করে মেতে উঠেছে।”
হিন্দু নারীদের পিতা ও স্বামীর সম্পত্তিতে অধিকার নিয়ে ওই বিশেষ মহলটি ‘এনজিওর অর্থায়নে’ পুনরায় সোচ্চার হয়েছে মন্তব্য করে শ্যামল কুমার রায় বলেন, “মহলটি পিতৃসম্পত্তিতে হিন্দু নারীদের অধিকাররের নামে অনাকাঙ্খিত কিছু বিষয় উত্থাপনের পাঁয়তারা চলছে। হিন্দু ধর্মীয় তথা বিবাহ সংক্রান্ত আইন পরিবর্তনের ব্যাপারে অতি উৎসাহী হয়ে উঠেছে।”
গত ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতেই এক সংবাদ সম্মেলনে হিন্দু আইন ‘বৈষম্যমূলক’ মন্তব্য করে এ আইন সংস্কারের দাবি জানায় ‘বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদ’ নামে আরেকটি সংগঠন।
আইন সংস্কার পরিষদের দাবি, হিন্দু আইন ব্রিটিশ আমলে করা, তা প্রচলিত প্রথানির্ভর এবং আজকের বাস্তবতায় তা নারী, প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জন্য ‘বৈষম্যমূলক’।
এসব অভিযোগ করে তা সংস্কার প্রয়োজন বলে বেশ কিছু যুক্তিও তুলে ধরা হয় সেই সংবাদ সম্মেলনে।
সংগঠনটির সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ময়না তালুকদার সেদিন বলেন, “বাংলাদেশে প্রচলিত প্রথানির্ভর হিন্দু আইনে নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী এবং তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ সুদীর্ঘকাল নানভাবে বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার হয়ে আসছে। আইনগুলো প্রায় শতাব্দীকাল যাবত অসংশোধিত রয়ে যাওয়ায় এবং কোডিফায়েড না হওয়ায় আদালতে মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে এবং সুবিচার প্রতিষ্ঠায় ব্যাঘাত ঘটছে।”
তবে প্রচলিত হিন্দু আইনে সম্পত্তির অধিকারে কোনো ‘বৈষম্য’ নেই বলে দাবি করেন আইন পরিবর্তন প্রতিরোধ সম্মিলিত পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল।
তিনি বলেন, “সনাতন ধর্মে বিবাহ একটি ধর্মীয় সংস্কার তথা পবিত্রব্রত। শাস্ত্রীয় পন্থায় গোত্রান্তরপূর্বক কন্যা সম্প্রদান করা হয় বলে পিতৃসম্পত্তি থেকে প্রথাগতভাবে এক পুত্রের সমান সম্পত্তি অর্থমূল্যের সমপরিমাণ কন্যাকে অলঙ্কারাদি ও সংসার রচনার জন্য প্রয়োজনীয় ও সম্ভবমত যাবতীয় দ্রব্যসামগ্রী উপঢৌকন হিসেবে দান করা হয়, যা ‘স্ত্রীধন’ হিসেবে পরিগণিত ওই কন্যারই।”
অন্যদিকে স্বামীর পরিবারের চাবি কন্যার হাতে তুলে দিযে প্রতীকীভাবে তাকে ‘কর্তৃত্বাভিষিক্ত’ করা হয় বলে শ্যামল কুমারের ভাষ্য।
তিনি বলেন, শাস্ত্রীয় বিধান অনুযায়ী স্ত্রী মৃত স্বামীর সম্পত্তির মালিকানা পায় এবং ভোগদখল, প্রয়োজনে আইন অনুসারে সম্পত্তি হস্তান্তর ও বিক্রিও করতে পারেন।
শাস্ত্রীয় বিধানগুলোর জন্য হিন্দু পরিবারে বিয়ে বিচ্ছেদ ‘নেই বলেলেই চলে’ মন্তব্য করে হিন্দু সম্প্রদায়ের এই নেতা বলেন, “এরপরও যারা অন্যপন্থা বেছে নিতে চান, তাদের জন্য ১৮৭২ সালের বিশেষ বিবাহ আইন রয়েছে।”
প্রচলিত হিন্দু আইন পরিবর্তন করে এ সংক্রান্ত নতুন কোনো আইনের ‘প্রয়োজন নেই’ দাবি করে তিনি আইন পরিবর্তনের দাবি তোলা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তোলেন।
সংবাদ সম্মেলন হিন্দু আইন পরিবর্তন প্রতিরোধ সম্মিলিত পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট জে কে পাল, সমন্বয়ক হিরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সম্পাদক এম কে রায়, ইস্কন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক চারুচন্দ্র দাস ওরফে চণ্ডীদাস বালাসহ ধর্মীয় বিভিন্ন সংগঠনের একাধিক নেতা উপস্থিত ছিলেন।