অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ফজলুর রহমান শুক্রবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এই তালিকায় যারা আছে, তাদের কঠোর নজরদারির মধ্যে রেখে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”
এর আগেও বিভিন্ন সময়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্যোগে মাদক কারবারিদের তালিক করে অভিযান চালানো হয়েছে।
গতবছরের শুরুর দিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরই তিন হাজার মাদক কারবারির তালিকা তৈরি করেছে বলে সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছিল। দেখা যাচ্ছে, গত দেড় বছরে সেই তালিকা আরও দীর্ঘ হয়েছে।
বাংলাদেশে শুরুর দিকে মাদক হিসেবে আফিম ও গাঁজাই চলত। গত শতকের আশির দশকে সেগুলো নিষিদ্ধ করা হয়। ওই সময়ে কোডিন মিশ্রিত কফ সিরাপ নিষিদ্ধ হওয়ার পর চোরাই পথে আসা ফেনসিডিল হয়ে ওঠে মাদকসেবীদের কাছে তুমুল জনপ্রিয়।
প্রায় দুই দশক হলো ফেনসিডিলের জায়গা দখল করেছে ইয়াবা। ফেনসিডিল মূলত আসত ভারত থেকে, আর ইয়াবা আসছে মিয়ানমার থেকে।
ইয়াবা সহজে বহনযোগ্য বলে দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে। ২০১৮ সালে মূলত ইয়াবা ঠেকানোর লক্ষ্য নিয়েই মাদকের বিরুদ্ধে বড় অভিযানে নেমেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেই অভিযানে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে কয়েকশ সন্দেহভাজন।
বন্দুকযুদ্ধে নিহতের ওই ঘটনায় র্যাব-পুলিশকে ব্যাপক সমালোচনায় পড়তে হলেও সেই অভিযানেও ইয়াবা পাচার বন্ধ হয়নি। প্রায় প্রতিদিনই ইয়াবা ধরার খবর আসছে।
এর মধ্যে মহামারীর লকডাউনে মাদকের কারবারেও কিছুটা ভাটা পড়েছে বলে গতবছর খবর দিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে চোরাকারবারিরাও নতুন নতুন কৌশলে আবার সক্রিয় হয়েছে, দেশে এখন আলোচনা চলছে ‘এলএসডি’, ‘আইসের’ মতো মাদক নিয়ে, যেগুলো আগে এ দেশে কম প্রচলিত ছিল।
তিনি জানান, তাদের মোহাম্মদপুর ও ধানমন্ডি সার্কেলের তিনটি দল বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত এই অভিযান চালিয়ে ওই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে।
এরা হলেন- জাকারিয়া আহমেদ অমন (৩২), তারেক আহমেদ (৫৫), সাদ্দাম হোসেন (৩১), শহীদুল ইসলাম খান (৪৮) ও জসিম উদ্দিন (৫০)। তাদের কাছ থেকে আইস ছাড়াও ১২০০ ইয়াবা পাওয়া গেছে।
বুধবার গ্রেপ্তার হওয়া দুইজনকে বৃহস্পতিবার এবং বাকিদের শুক্রবার আদালতে হাজির করা হয়েছ বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক জানান, ২০০৭ সালে এদেশে প্রথম ‘আইস’ ধরা পড়ে। তারপর দীর্ঘ বিরতি। এর পর ২০১৯ সালে এটা মাদকের বাজারে দেখা যায়। সে বছর আবার ধরা পড়ে। এর পরই ধীরে ধীরে প্রসার ঘটে।
চলতি বছর ৯ অগাস্ট একজনকে গ্রেপ্তারের পর তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ২০ এবং ২১ অগাস্ট অভিযান চালিয়ে ১০ জনের একটি ‘সিন্ডিকেট’ অধিদপ্তরের জালে ধরা পড়ে। ‘উল্লেখযোগ্য পরিমাণ’ আইসও উদ্ধার করা হয়।
“এই ১০ জনের দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে নিজেদের কৌশল এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করে গুলশান, ভাটারা, কুড়িল এবং রমনা এলাকা থেকে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।”
ফজলুর রহমান বলেন, প্রথমে বুধবার রাতে জাকারিয়া আহমেদ অমন এবং তারেক আহমেদকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা বেশ কিছু তথ্য দেন। সেই তথ্যের ভিত্তিতে পরের রাতেই অভিযান চালিয়ে সাদ্দাম, শহীদুল ও জসিমকে গ্রেপ্তার করা হয়।