১৮ বছর পর্যন্ত শিশু বিবেচনা নিয়ে প্রশ্ন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর

জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের সঙ্গে মিল রেখে দেশের শিশু আইনে ১৮ বছর পর্যন্ত সবাইকে শিশু ধরা হলেও এক্ষেত্রে পরিবর্তন চাইছেন আইন-শৃঙ্খলা সংশ্লিষ্টরা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Sept 2021, 12:12 PM
Updated : 23 Sept 2021, 12:14 PM

১৮ বছর বয়স পর্যন্ত সবাইকে শিশু ধরায় কিশোর অপরাধ দমনের কাজটি বিঘ্নিত হচ্ছে বলে দাবি করেছেন তারা।

বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে আইজিপি বেনজীর আহমেদসহ পুলিশ ও র‌্যাব কর্মকর্তাদের এই বক্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালও।

তিনি বলেন, শিশু আইনের এই সময়সীমাটা নিয়ে নতুন করে চিন্তা করার সময় এসেছে।

ঢাকার মগবাজারের মধুবাগে বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান কমপ্লেক্সে কিশোর অপরাধবিরোধী সামাজিক প্রচার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে র‌্যাবের তৈরি একটি টিভি বিজ্ঞাপনের (টিভিসি) উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এই প্রসঙ্গটি ওঠে।

সভায় র‌্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, শিশু আইন অনুযায়ী ১৮ বছরের কমবয়সী যে কাউকে গ্রেপ্তারের পর প্রবেশন অফিসারের জিম্মায় দিতে হবে। এই প্রবেশন অফিসারের কাছে দেওয়া নিয়ে প্রায়ই বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। উপজেলা পর্যায়ে একটা ছেলেকে গ্রেপ্তারের পর সঙ্গে সঙ্গেই একজন প্রবেশন কর্মকর্তাকে হাতের কাছে পাওয়া বেশ জটিল ও কঠিন বিষয়।

পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীরও বলেন, “মুশকিল হচ্ছে যে বাংলাদেশে কোথায় কোন প্রবেশন অফিসার আছে, তা আমরা জানি না। এই আইনটা বলবৎ করতে কত সংখ্যক প্রবেশন অফিসার থাকতে হবে, সে বিষয়টিরও এখনও সুরাহা হয়নি।

“যদি পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রবেশন অফিসার না থাকে, তাহলে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে সেই প্রবেশন অফিসার নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। আবার বললেই নিয়োগ হয় না। আমাদের বর্তমান পদ্ধতিতে একটা পিয়ন নিয়োগ করতে হলেও ১৩ ধাপ অতিক্রম করতে হয়। তাই চাইলেই যে এখন প্রবেশন অফিসার নিয়োগ করা যাবে, তাও নয়। আবার কিশোর অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে জেলেও পাঠানো যাবে না। তাদের পাঠাতে হবে সংশোধনাগারে। সংশোধনাগারও অপ্রতুল।”

এর ফলে অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে বলে দাবি করেন বেনজীর।

তিনি আরও বলেন, “১৮ বছরে কিন্তু আমাদের দেশে ছেলে-মেয়েরা পূর্ণ যুবকের পর্যায়ে পৌঁছে যায়। তাকেও কিন্তু এখন শিশু হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ কারণেই কিশোর গ্যাংদের বিরুদ্ধে যেভাবে আগে আমরা আইন প্রয়োগ করেছি এখন সেভাবে করা সম্ভব হচ্ছে না।”

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন অনুষ্ঠানে বলেন, বর্তমানে একটি বড় সমস্য কিশোর অপরাধ। কিশোরের সংখ্যা দণ্ডবিধিতে আছে এক রকম, আবার শিশু আইনে আছে আরেক রকম, আবার শ্রম আইনে আছে আরেক রকম। এসব আইনের মধ্যে একটা সামঞ্জস্য আনা দরকার।”

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমাদের আজকে মনে হচ্ছে এই ১৮ বছর সময়সীমাটা চিন্তা করার সময় এসেছে। যদিও আমরা আন্তর্জাতিক একটা আইনের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ, সেই জায়গাটিতে আমাদের করণীয় কী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেটা চিন্তা করবেন। সেই জায়গা থেকে দেখার বিষয় রয়েছে বলে আমি মনে করি।”

অনুষ্ঠানে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম, স্থানীয় স্কুল কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়।

অনুষ্ঠানে বক্তারা কিশোর অপরাধ দমনে অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার তাগিদ দেন।