ই-অরেঞ্জের গ্রাহকরা রাস্তায়, পুলিশের লাঠিপেটা

ই-কমার্স কোম্পানি ই-অরেঞ্জে টাকা খাটিয়ে বিপদে থাকা গ্রাহকদের বিক্ষোভ মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিশ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Sept 2021, 08:20 AM
Updated : 23 Sept 2021, 08:22 AM

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে সহস্রাধিক নারী-পুরুষের একটি দল মিছিল নিয়ে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে মৎস্যভবনের দিকে এগিয়ে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। তার সেখানে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ লাঠিপেটা করে তাদের সরিয়ে দেয়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার হারুন অর রশিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিক্ষোভকারীদের নেতৃত্ব নিয়ে নিজেদের মধ্যে দলাদলির কারণে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। তারপর আমরা লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছি।”

অন্তত ১২টি ই-কমার্স কোম্পানি ব্যাপক মূল্যছাড়ে পণ্যবিক্রির প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে; এর মধ্যে ই-অরেঞ্জ একটি। 

ই-অরেঞ্জের মালিক সোনিয়া মেহজাবিন, তার স্বামী মাসুকুর রহমান, কোম্পানির চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) আমান উল্লাহ এক গ্রাহকের করা ১১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন।

মিছিলে অংশ নেওয়া আমিনুর রহমান নামে এক গ্রাহক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আর ২০/২৫ জনের সঙ্গে তিনি ঝালকাঠি থেকে এসেছেন বিক্ষোভে অংশ নিতে। মিছিল নিয়ে বাণি জ্যমন্ত্রণালয়ে যাওয়ার লক্ষ্য ছিল তাদের। কিন্তু মৎস্যভবনের কাছে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

আমিনুর বলছেন, পণ্য কিনতে ই-অরেঞ্জকে তিনি ৪ লাখ টাকা অগ্রিম দিয়েছিলেন। ওই দামে তার বাজারমূল্যে প্রায় আট লাখ টাকার পণ্য পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোনো পণ্যই তিনি বুঝে পাননি। টাকাও ফেরত পাচ্ছে না। আগের মালিক কোম্পানি হাতবদল করে বিদেশে চলে গেছে। নতুন মালিকদের কয়েকজনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কোম্পানি এখন পুরোপুরি বন্ধ।

ই-কমার্স কোম্পানি ই-অরেঞ্জে টাকা খাটিয়ে বিপদে থাকা গ্রাহকরা বৃহস্পতিবার মিছিল নিয়ে ঢাকার মৎস্য ভবন মোড়ে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

যাত্রাবাড়ি থেতে আসা শহিদুল ইসলাম জানান, ই-অরেঞ্জে গ্রাহকদের একটি অনলাইন গ্রুপে আমন্ত্রণ পাওয়ার পর তিনি যাত্রাবাড়ী থেকে মিছিলে এসেছেন।

মৌ আক্তার নামের পান্থপথের এক বাসিন্দা জানান, সদ্য নতুন সংসারে প্রবেশ করার পর ফ্রিজ, টিভিসহ অন্যান্য গৃহস্থালির পণ্য কিনতে ই-অরেঞ্জে সাত লাখ টাকা দিয়েছেন তিনি। কোনো পণ্য পাননি, এখন কোম্পানি ধরাছোঁয়ার বাইরে।

তিনি বলেন, “সরকারকে এই প্রতারণার দায় দায়িত্ব নিতে হবে। আমরা আমাদের টাকা ফেরত চাই। ই-কমার্সের নামে প্রকাশ্যে দিবালোকে এ ধরনের প্রতারণা কিভাবে চলছিল এতোদিন?”

বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী বললেন, জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা ই-অরেঞ্জর প্রচার ও বিজ্ঞাপনে অংশ নিয়েছিলেন। মাশরাফির উপস্থিতি দেখে তাদের মনে হয়েছিল, এখানে প্রতারিত হওয়ার ঝুঁকি নেই।

মাশরাফি অবশ্য প্রতারকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন গ্রাহকদের।

তিনি বলেছিলেন, “যদিও আমি মাত্র ছয় মাসের জন্য এই ই অরেঞ্জের সাথে ছিলাম। গত জুলাইয়ের পর থেকে আর ওদের সঙ্গে নেই। তারপরেও মানবিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে ভুক্তভোগী গ্রাহকের পক্ষে আইনি প্রচেষ্টা চালাব।”