হাই কোর্টে জামিন পাননি সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম

ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির জবানবন্দির ভিডিও করে ছড়িয়ে দেওয়ার মামলায় দণ্ডিত সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন হাই কোর্ট থেকে জামিন পাননি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Sept 2021, 08:22 AM
Updated : 22 Sept 2021, 08:22 AM

আট মাস আগে তার যে জামিন আবেদনটির শুনানি মুলতবি রাখা হয়েছিল, সে আবেদনটিই বুধবার কার্যতালিকা থেকে বাদ দিয়েছে বিচারপতি হাবিবুল গনি ও বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন খানের হাই কোর্ট বেঞ্চ।

মোয়াজ্জেমের জামিন আবেদনের শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মুরাদ রেজা। তার সঙ্গে ছিলেন রেদওয়ান আহমেদ রানজীব।

আইনজীবী রেদওয়ান আহমেদ রানজীব পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ২০১৯ সালে ২৮ নভেম্বর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় মোয়াজ্জেম হোসেনকে আট বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয় বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনাল। ওই রায়ের বিরুদ্ধে গত বছরের ১৮ অগাস্ট মোয়াজ্জেম হোসেনের আপিল গ্রহণ করে হাই কোর্ট।

“এরপর নভেম্বরে এই জামিন আবেদনটি করা হয়েছিল। গত ফেব্রুয়ারিতে আদালত জামিন আবেদনটির শুনানি তিন মাসের জন্য মুলতবি করেছিল। সে আবেদনটিই আজ কার্যতালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন।”

এখন হাই কোর্টের অন্য কোনো বেঞ্চে জামিন আবেদনটি নিয়ে যাবেন বল জানান এই আইনজীবী।

সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত ২০১৯ সালের মার্চে অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ দৌলার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করেন। সে সময় সোনাগাজী থানায় তার জবানবন্দি নেন তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন।

তার কয়েক দিন পর মাদ্রাসার ছাদে অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাতের গায়ে আগুন দিলে সারাদেশে আলোচনা শুরু হয়। তখন নুসরাতের ওই জবানবন্দির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাতের মৃত্যু হলে ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল ওসি মোয়াজ্জেমকে আসামি করে ঢাকায় বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।

পরিদর্শক মোয়াজ্জেমই ওই ভিডিও ছড়িয়েছেন- পিবিআইয়ের এমন প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এ মামলার বিচার শুরু হয়।

মামলার শুনানিতে আত্মপক্ষ সমর্থনে দাঁড়িয়ে ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর সোনাগাজীর সাবেক ওসি নুসরাতের জবানবন্দি ভিডিও করার বিষয়টি স্বীকার করলেও বলেছিলেন, জ্ঞানতঃ তিনি কোনো অপরাধ করেননি।

পরে বেআইনিভাবে নুসরাতের জবানবন্দির ভিডিও করার দায়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬ ধারায় মোয়াজ্জেমকে দোষী সাব্যস্ত করে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারক। আর সেই ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ায় ২৯ ধারায় তাকে দেওয়া হয় তিন বছরের কারাদণ্ড।

দুই ধারার শাস্তি একটির পর একটি কার্যকর হবে বলে মোট আট বছর জেল খাটতে হবে বরখাস্ত এই পুলিশ কর্মকর্তাকে।

কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাকে দুই ধারায় পাঁচ লাখ করে মোট দশ লাখ টাকা জরিমানা করা হয় ওই রায়ে। জরিমানার এই টাকা নুসরাতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিতে বলা হয়। ওই টাকা দিতে ব্যর্থ হলে তাকে আরও ছয় মাস করে মোট এক বছর সাজা খাটতে হবে।

নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার মামলায় তার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাসহ ১৬ জনকে ২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর মৃত্যুদণ্ড দেয় ফেনীর নারী ও শিশুনির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। সেই রায় ডেথ রেফারেন্স হিসেবে শুনানির জন্য ইতোমধ্যে হাই কোর্টে এসেছে।