ইভ্যালির রাসেল ফের রিমান্ডে, শামীমা কারাগারে

গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ধানমণ্ডি থানার মামলায় ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ইভ্যালির এমডি মোহাম্মদ রাসেলকে এক দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছে আদালত।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Sept 2021, 09:56 AM
Updated : 21 Sept 2021, 11:49 AM

তবে তার স্ত্রী কোম্পানির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশের রিমান্ড আবেদনের শুনানি করে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম হাসিবুল হক মঙ্গলবার এই আদেশ দেন।

রাসেল ও শামীমার পক্ষে তাদের আইনজীবীরা জামিন আবেদন করলেও বিচারক তাতে সাড়া দেননি।

গুলশান থানার প্রতারণার মামলায় তিন দিনের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এদিন রাসেল ও শামীমাকে ঢাকার হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। তাদের দুজনকেই ধানমণ্ডি থানার মামলায় সাত দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করেন এসাই নাজমুল হুদা। অন্যদিকে দুই আসামির পক্ষে জামিনের আবেদন করেন তাদের আইনজীবীরা। 

রাষ্ট্রপক্ষে রিমান্ড আবেদনের শুনানি করেন মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি সাজ্জাদুল হক শিহাব ও তাপস পাল। অন্যদিকে দুই আসামির পক্ষে আইনজীবী ব্যরিস্টার এম মনিরুজ্জামান আসাদ রিমান্ডের বিরোধিতা করে জামিন শুনানি করেন।

আরিফ বাকের নামে এক গ্রাহক গত ১৬ সেপ্টেম্বর গুলশান থানায় রাসেল ও শামীমার বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করার পর সেদিনই মোহাম্মদপুরের বাসায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

পরদিন পুলিশ তাদের আদালতে হাজির করলে ঢাকার মহানগর হাকিম আতিকুল ইসলাম তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে ওই দম্পতিকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।  

রাসেল ও শামীমা রিমান্ডে থাকা অবস্থায় ধানমণ্ডি থানায় তাদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে আরেকটি মামলা করেন কামরুল ইসলাম চকদার নামের এক গ্রাহক। সেই মামলাতেই মঙ্গলবার রাসেলকে নতুন করে রিমান্ডে পাঠাল আদালত।

এ মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, চুক্তির মাধ্যমে বাদীর চারটি কোম্পানি থেকে ইভ্যালিকে মোট ৩৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকার পণ্য সরবরাহ করা হলেও দাম পরিশোধ করা হয়নি। এসব পণ্যের দাম বাবদ ইভ্যালি চেক দিলেও অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় তা দুই বার ফেরত আসে।

মঙ্গলবার এ মামলায় পুলিশের রিমান্ড আবেদনের বিরোধিতা করে আসামিপক্ষের আইনজীবী মরিুজ্জামান আসাদ বলেন, “টাকা নেওয়ার বিষয়ে আমরা অস্বীকার করছি না। আমরা পণ্য দেব না সে কথাও বলিনি। প্যানডেমিক সিচুয়েশনের কারণে আমরা পণ্য সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়েছি। আর মামলার বিষয়ে দায়টি দেওয়ানি প্রকৃতির। এ বিষয়ে বাদী ড্যামেজ স্যুট, মানি স্যুট করতে পারতেন। এটা কোনোভাবেই ক্রিমিনাল মামলা নয়।”

এ কথার সমর্থনে উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত তুলে ধরে এই আইনজীবী বলেন, “বিজনেস ট্রান্সজেকশন থেকে ফৌজদারি অপরাধের সৃষ্টি হয় না।”

আসামিদের জামিন চেয়ে তিনি বলেন, “এখানে একজন নারী অভিযুক্ত রয়েছেন। ফৌজদারি কাযবিধির জামিনের বিধানে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা বিশেষ সুযোগ পান।”

যে কোনো শর্তে, প্রয়োজনে পাসপোর্ট জমা রেখে হলেও আসামিদের জামিন দেওয়ার আবেদন করেন তাদের আইনজীবী।

অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী কে এম সাজ্জাদুল হক শিহাব বলেন, নয় মাস আগে পণ্য কেনার টাকা দেওয়া হলেও আসামিরা বাদীকে পণ্য সরবরাহ করেননি।

প্রায় আধা ঘণ্টা দুই পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারক দুই আসামির জামিন আবেদন নাকচ করে রাসেলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একদিনের  রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আদেশে বলা হয়, রিমান্ড বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মানতে হবে তদন্ত কমকর্তাকে।

আর শামীমাকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে করাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।

শুনানির সময় আসামিদের কয়েকজন আত্মীয়কে এজলাসে ও বারান্দায় কান্নাকাটি করতে দেখা গেলেও রাসেল ও শামীমা ছিলেন স্বাভাবিক। 

এদিকে রাসেল ও তার স্ত্রীর মুক্তিসহ সাত দফা দাবিতে ঢাকার হাকিম আদালতের সামনে মানববন্ধন করেছে একদল লোক, যারা নিজেদের ইভ্যালির গ্রাহক হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে।

মঙ্গলবার  সকালে বাংলাদেশ ই-কমার্স মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে এ মানববন্ধন শুরু করেন তারা। পরে বেলা ১১টার দিকে পুলিশ এসে তাদের সরিয়ে দেয়।

পুরনো খবর