কেয়া গ্রুপের মালিক ও স্ত্রীর আগাম জামিন

অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় কেয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল খালেক পঠান ও তার স্ত্রী ফিরোজা বেগমকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন দিয়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Sept 2021, 09:33 AM
Updated : 19 Sept 2021, 09:33 AM

তবে তাদের ছেলে মো. মাসুম পাঠান এবং দুই মেয়ে খালেদা পারভীন ও তানসিন কেয়াকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এই পরিবারের জামিনের পাঁচটি আবেদন নিষ্পত্তি করে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি এম এম মজিবুর রহমানের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ রোববার এ আদেশ দেয়।

আবদুল খালেক পাঠানের ছেলে মো. মাসুম পাঠান ও মেয়ে তানসিন কেয়া ‘কেয়া কসমেটিকস লিমিটেড’ এর পরিচালক। আরেক মেয়ে খালেদা পারভীন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

আদালতে জামিন আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী নিতাই রায় চৌধুরী। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে শুনানিতে ছিলেন মো. খুরশীদ আলম খান, এ কে এম ফজলুল হক, সাজ্জাদ হোসেন, ওমর ফারুখ, অসিফ হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।

দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আবদুল খালেক পঠান ও তার স্ত্রীকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন দিয়েছেন হাই কোর্ট। তবে তাদের পাসপোর্ট আদালতে জমা রাখতে হবে। আদালতের অনুমতি ছাড়া তারা বিদেশ যেতে পারবেন না। আর এক ছেলে ও দুই মেয়েকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে।”

এ আদেশের বিরুদ্ধে দুদক আপিল বিভাগের যাবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা কমিশনকে হাই কোর্টের আদেশ জানিয়েছি। কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।”

‘অবৈধ সম্পদের’ মালিক হওয়ার অভিযোগে কেয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল খালেক পাঠান, তার স্ত্রী ও তিন সন্তানের বিরুদ্ধে গত মঙ্গলবার পাঁচটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

এসব মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ১৮৩ কোটি ৮৪ লাখ ৮০ হাজার ২৬৪ টাকার ‘অবৈধ সম্পদ’ অর্জন এবং ৯৬ কোটি ২৯ লাখ ৭২ হাজার ৭৩৯ টাকার সম্পদের ‘তথ্য গোপনের’ অভিযোগ আনা হয়েছে।

এর আগে ওই পাঁচজনের সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দিতে নোটিস পাঠিয়েছিল দুদক। এরপর ২০১৯ সালের ২৩ জুন দুদক সচিবের কাছে তারা সম্পদের হিসাব দাখিল করেন।

দুদক বলছে, সেই সম্পদ বিবরণী যাচাই ও সংশ্লিষ্ট নথিপত্র পর্যালোচনা করে ‘অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপন করার প্রমাণ’ তারা পেয়েছে।  

আবদুল খালেক পাঠানের বিরুদ্ধে করা মামলায় বলা হয়, সম্পদ বিবরণীতে তার নামে স্থাবর-অস্থাবরসহ মোট ৪৪৬ কোটি ৮৮ লাখ ৫৩ হাজার ৯৩৭ টাকার সম্পদ রয়েছে বলে তিনি হিসাব দিয়েছেন।

কিন্তু ওই হিসাব যাচাই করে তার নামে ৪৯৬ কোটি ২৮ লাখ ৬ হাজার ৪২৪ টাকার সম্পদ থাকার তথ্য পেয়েছে দুদক। অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি ৪৯ কোটি ৩৯ লাখ ৫২ হাজার ৪৮৭ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন।

এছাড়া তার ১৩৩ কোটি ৭৩ লাখ ৯ হাজার ২৪৫ টাকার সম্পদের ‘কোনো বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি’ উল্লেখ করে এজাহারে বলা হয়, “এই সম্পদ তার জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ এবং অসাধুভাবে তিনি অর্জন করেছেন।”

আবদুল খালেক পাঠানের স্ত্রী এবং কেয়া গ্রুপ ও কেয়া কসমেটিসকের পরিচালক ফিরোজা বেগমের বিরুদ্ধে মামলায় ২৫ কোটি ৯৬ লাখ ৬৩ হাজার ২৮৭ টাকার ‘জ্ঞাত আয় বহির্ভূত’ সম্পদ অর্জন এবং ১৭ কোটি ১১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৮৪ টাকার সম্পদের ‘তথ্য গোপন’ করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

আবদুল খালেক পাঠানের ছেলে কেয়া কসমেটিকস লিমিটেডের পরিচালক মো. মাসুম পাঠানের বিরুদ্ধে মামলায় পাঁচ কোটি ৪৭ লাখ ৭৬ হাজার ১৮৫ টাকার ‘জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের’ অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া তিনি দুই কোটি ৭২ লাখ ৬৪ হাজার ৮৯৩ টাকার সম্পদের ‘তথ্য গোপন করেছেন’ বলে এজাহারে বলা হয়েছে।

খালেক পাঠানের মেয়ে কেয়া কসমেটিকসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খালেদা পারভীনের বিরুদ্ধে মামলায় ‘অবৈধভাবে’ দুই কোটি ৩৫ লাখ ৫১ হাজার ১৮০ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। তিনি এক কোটি ৯৬ লাখ ৩২ হাজার ৩৬১ টাকার সম্পদের ‘তথ্য গোপন’ করেছেন বলে এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে।

খালেক পাঠানের আরেক মেয়ে কেয়া কসমেটিকস লিমিটেডের পরিচালক তানসিন কেয়ার বিরুদ্ধে মামলায় ১৬ কোটি ৩১ লাখ ৮০ হাজার ৩৬৭ টাকার ‘জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের’ এবং ২৫ কোটি ৯ লাখ ৮৭ হাজার ১১৪ টাকার ‘সম্পদের তথ্য গোপনের’ অভিযোগ রয়েছে।

এসব মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন- ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭(১) এবং অর্থপাচার প্রতিরোধ আইন- ২০১২ এর ৪(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।