শিক্ষা দিবসে ‘বাণিজ্যমুক্ত ও গণমুখী’ শিক্ষাব্যবস্থা দাবি 

শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ আর বেসরকারিকরণ বন্ধ করে গণমুখী বৈজ্ঞানিক শিক্ষাব্যবস্থার দাবি জানিয়েছে বাম ধারার ছাত্র সংগঠনগুলো।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Sept 2021, 07:14 PM
Updated : 17 Sept 2021, 07:46 PM

শুক্রবার বিকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শিক্ষা দিবস উপলক্ষে আটটি বাম ছাত্র সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘ছাত্র-গণসমাবেশে’ এ দাবি জানানো হয়।

সমাবেশ থেকে করোনাভাইরাস মহামারীকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সকল প্রকার বেতন-ফি মওকুফ, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর আরোপিত কর প্রত্যাহার, চলতি বছর থেকেই পিএসি-জেএসসি পরীক্ষা বাতিল, মহামারীর কারণে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে রাষ্ট্রীয় প্রণোদনা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়।

১৯৬২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর স্বৈরশাসক আইয়ুব খান গঠিত শিক্ষা কমিশনের শিক্ষানীতি তথা শিক্ষা সংকোচন নীতির প্রতিবাদে তৎকালীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে দেশব্যাপী হরতাল পালিত হয়।

ছাত্রদের ডাকা হরতালে পুশিলের লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় শহীদ হন গোলাম মোস্তফা, বাবুল ও ওয়াজিউল্লাহ। সেই থেকে ছাত্র সমাজ দিনটিকে সংগ্রাম ও ঐতিহ্যের মহান শিক্ষা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।

দিবসটি উপলক্ষে শুক্রবার সকালে হাইকোর্ট মোড়ে শিক্ষা অধিকার চত্বরে ফুল দিয়ে বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায় ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র অধিকার পরিষদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টসহ বিভিন্ন সংগঠন।

বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্র সংগঠনগুলো শোভাযাত্রা, সমাবেশ ও আলোচনা সভার আয়োজন করে।

শহীদ মিনারে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর সমাবেশে সংহতি জানিয়ে ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অনিক রায় বলেন, “শিক্ষা আন্দোলনের ৫৯ বছর পরও শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ চলছে।

“আর তাই সেই শিক্ষা আন্দোলনের মিছিল এখনও চলমান, যতদিন সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত না হচ্ছে, যতদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো গবেষণাগারে পরিণত না হচ্ছে, ততদিন আমাদের আন্দোলন চলবে।”

এখন আবারও শিক্ষাব্যবস্থার বড় পরিবর্তনের কথা বলা হচ্ছে উল্লেখ করে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) সভাপতি মাসুদ রানা বলেন, “প্রশ্নহীন-আনুগত্যশীল একটি জাতি তারা নতুন এই শিক্ষানীতির মাধ্যমে তৈরি করতে চায়।”

ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা বলেন, “১৯৬২ সালে গণতান্ত্রিক শিক্ষার জন্য শিক্ষার্থীরা রক্ত দিলেও আজও আমরা সেই অধিকার পাইনি।”

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (বাসদ-মার্কসবাদী) সভাপতি মাসুদ রানার সভাপতিত্বে এবং ছাত্র কাউন্সিলের সহসভাপতি সায়েদুল হক নিশানের সঞ্চালনায় সমাবেশে ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি আরিফ মঈন উদ্দিন, চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি সুবাশিষ চাকমা, বিল্পবী ছাত্র যুব আন্দোলনের সভাপতি আতিফ অনিক, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক দিলীপ রায় বক্তব্য দেন।

ছাত্র ইউনিয়নের আলোচনা সভা

শিক্ষা দিবসে চার দফা দাবি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে আলোচনা সভা করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন।

দাবিগুলো হচ্ছে- সেশনজট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা, সকল শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত ও হেলথ কার্ড প্রদান করা, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপর কর প্রত্যাহার করা, টিকার আওতায় এনে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া।

সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, “৬২তে ছাত্রদের রক্তের সাথে শ্রমিকের রক্ত মিশে শিক্ষা আন্দোলন সফল হয়েছল।

“বর্তমান সময়েও কোনো আন্দোলন শুধু ছাত্রদের রক্ত দিয়ে সফল হবে না, শ্রমিক-কৃষকদের রক্তও ছাত্রদের রক্তের সাথে মিশতে হবে। তবে সেরকম আন্দোলন করতে হলে ছাত্রদের আগে শুরুটা করতে হবে।”

তিনি বলেন, “আজ বাষট্রির শিক্ষা আন্দোলনের এত বছর পরও দেশে প্রাইভেট মেডিকেল হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে, আর সেখানকার বেতন আর সরকারি বেতনের মধ্যে পার্থক্য আছে।

“সবচেয়ে দুঃখের বিষয় সরকার আপনাকে তো পড়াতে পারছে না, উল্টো ভ্যাট আদায় করছে। সরকার নির্বাচনী ইশতেহারে বলেছিল, বিএ ক্লাস পর্যন্ত লেখাপড়া অবৈতনিক করবে। কিন্তু এখন স্কুলও আপনার হাতের টাকার উপর নির্ভর করে।”

এসব রুখতে একটা বিরাট আন্দোলন করতে হবে জানিয়ে অধ্যাপক আকাশ বলেন, “একইসাথে আপনাদের একটা দাবি তুলতে হবে যে, শিক্ষায় জাতীয় বাজেট জিডিপির চার শতাংশ বরাদ্দ দিতে হবে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক কাবেরী গায়েন বলেন, “১৯৭৪ সাল থেকে শিক্ষাকে অসাম্প্রদায়িক, বিজ্ঞানভিত্তিক ও সার্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থার কথা বলা হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।

“দেশে বর্তমান সময়ে প্রায় ১০ ধরণের শিক্ষা পদ্ধতি প্রচলিত আছে। করোনার সময় এই বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করেছে।"

ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দীপক শীলের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ।