'কোভিড টিকার মেধাস্বত্ব তুলে নেওয়ার' প্রস্তাব জাতিসংঘে দেবেন প্রধানমন্ত্রী

করোনাভাইরাসের টিকার মেধাস্বত্ব উঠিয়ে নেওয়া ও জীবনরক্ষাকারী এই ওষুধ তৈরির উপকরণের ন্যায্যতাভিত্তিক বণ্টনের আহ্বান জানানোর লক্ষ্য নিয়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Sept 2021, 04:09 PM
Updated : 16 Sept 2021, 06:28 PM

মঙ্গলবার থেকে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে শুরু হওয়া ৭৬তম সাধারণ পরিষদ সভার উচ্চ পর্যায়ের বিতর্ক অধিবেশন শুরু হবে ২১ সেপ্টেম্বর।

ওই অধিবেশনে যোগ দিতে শুক্রবার দেশ ছাড়বেন সরকার প্রধান; ফিনল্যান্ডের হেলসিংকিতে ব্যক্তিগত সফর শেষে ১৯ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে পৌঁছাবেন তিনি।

বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসূচির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

তিনি বলেন, ২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাধারণ বিতর্ক পর্বে বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য দেবেন শেখ হাসিনা। প্রতিবারের মত এবারও তার বক্তৃতা হবে বাংলায়।

বক্তৃতায় বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নয়ন অগ্রযাত্রা, অন্তর্ভূক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও স্বাস্থ্যখাতে সাফল্য সম্পর্কে আলোকপাত করবেন প্রধানমন্ত্রী।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “পাশাপাশি বিশ্বশান্তি, নিরাপদ অভিবাসন, করোনাভাইরাসের টিকার ন্যায্যতাভিত্তিক বণ্টন, বৃহৎ পরিসরে করোনাভাইরাসের টিকা উৎপাদনের লক্ষ্যে পেটেন্টসহ মেধাস্বত্ব উন্মুক্তকরণ, ফিলিস্তিনি ও বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিক সংকট এবং জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্পর্কিত বিষয়সমূহ তার বক্তৃতায় উঠে আসবে।”

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নিউ ইয়র্কে পৌঁছানোর পর দিন ২০ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ও জাতিসংঘ মহাসচিবের আমন্ত্রণে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন।

”সিভিএফ চেয়ার এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকির সম্মুখীন দেশ হিসেবে এটি বাংলাদেশের জুন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই সভায় প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরবেন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি নিরসনে সম্মিলিত বৈশ্বিক উদ্যোগের আহ্বান জানাবেন।”

একই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে জাতিসংঘ সদর দপ্তর চত্বরে বৃক্ষরোপণ করার কথাও রয়েছে বঙ্গবন্ধুকন্যার।

২২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক আয়োজিত ’হোয়াইট হাউজ গ্লোবাল কোভিড-১৯ সামিট: এন্ডিং দ্য প্যান্ডেমিক অ্যান্ড বিল্ডিং ব্যাক বেটার’ শীর্ষক এক উচ্চ পর্যায়ের সভায় বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী।

একই দিনে বাংলাদেশ কর্তৃক আয়োজিত ‘রোহিঙ্গা ক্রাইসিস: ইম্পারেটিভস ফর এ সাসটেইনেবল সল্যুশন’ শীর্ষক একটি উচ্চ পর্যায়ের সাইড ইভেন্টে অংশ নেওয়ার কথা শেখ হাসিনার।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে এই অনুষ্ঠান আয়োজনে ওআইসি, আসিয়ান এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর পক্ষ থেকে সাড়া পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ ছাড়াও গাম্বিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, তুরস্ক, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং ওআইসি অনুষ্ঠানটির সহ-আয়োজক।

”আমরা রোহিঙ্গা সমস্যার পঞ্চম বছরে পদার্পণ করেছি কিন্তু পাঁচ বছরে এক জনকেও মিয়ানমারে পাঠানো সম্ভব হয়নি। অথচ বাংলাদেশের জন্য রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তন এক নম্বর অগ্রাধিকার ইস্যু।”

এই সাইড ইভেন্টের মাধ্যমে বাংলাদেশের এই বক্তব্যই বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার ইচ্ছার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, "শুধু কথা বলে নয়, সত্যিকার অর্থে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বিশ্ব যেন আমাদের পাশে দাঁড়ায় বাংলাদেশ সেই আহ্বান জানাবে।”

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ২৩ সেপ্টেম্বর ইউএন ফুড সিস্টেমস সামিট শীর্ষক উচ্চ-পর্যায়ের সভায় যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। খাদ্য খাতে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সাফল্য তুলে ধরার জন্য এই সম্মেলন হবে একটি অনন্য উপলক্ষ্য।

একই দিনে ’ইউএন কমন এজেন্ডা: অ্যাকশন টু অ্যাচিভ ইকুয়ালিটি অ্যান্ড ইনক্লুশন’ শীর্ষ শীর্ষক একটি উচ্চপর্যায়ের সাইড-ইভেন্টে বক্তব্য দেবেন শেখ হাসিনা।

প্রতি বছরের মত এবারও, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশিরা প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে একটি অভ্যর্থনা অনুষ্ঠান আয়োজন করবেন। কোভিড মহামারীর প্রেক্ষিতে ভার্চুয়াল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে।

মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ, ভিয়েতনামের রাষ্ট্রপতি নগুয়েন জুয়ান ফুক, বার্বাডোজের প্রধানমন্ত্রী মিয়া আমর মটলি, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মাইকেলসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকও রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচিতে।

এছাড়া প্রতিবারের ন্যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের আয়োজনে একটি গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, "এই বৈঠকে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ পরিবেশ ও সুযোগ সুবিধার বিষয় সমূহ তুলে ধরবেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগ প্রস্তাব বাংলাদেশের নিকট তুলে ধরবেন। এর মাধ্যমে দুদেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটি সংযোগ তৈরি হবে।”

এবারের সাধারণ পরিষদ অধিবেশনের উল্লেখযোগ্য দিক তুলে ধরতে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, “এবারের অধিবেশনের একটি বড় অংশ জুড়ে থাকবে কোভিড-১৯ ও পরবর্তী টেকসই পুনরুদ্ধার ও পুনঃনির্মাণ। কোভিড-১৯ অতিমারি হতে মুক্তিলাভের জন্য, বিশ্বব্যাপী ‘ভ্যাকসিন বৈষম্য’ দূরীকরণের বিষয়টি এবারের অধিবেশনে বিশেষভাবে আলোচিত হবে।

আসন্ন সাধারণ অধিবেশনে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়টিও প্রাধান্য পাবে জানিয়ে তিনি বলেন, ২৬তম আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলন (কপ২৬) থেকে বিশ্ব যাতে একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা পেতে পারে সে বিষয়েও এবারের সাধারণের পরিষদের অধিবেশনে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ আলোচনা করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।

”ইতোমধ্যে জাতিসংঘ মহাসচিব ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী যৌথ উদ্যোগে জলবায়ু বিষয়ে সোচ্চার দেশগুলোকে নিয়ে একটি সভা আয়োজন করছে।”

তিনি বলেন, “কোভিড-১৯ অতিমারির কারণে বিশ্বব্যাপী দেশসমূহের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ঠ অর্জনে যে অগ্রযাত্রা-তা অনেকাংশেই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠে সম্মিলিতভাবে টেকসই বিনির্মাণের বিষয়ে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ আলোচনা করবেন।

”এসডিজির প্রতিটি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে ভিত্তি করে কোভিড পরবর্তী পুনরুদ্ধারের বিষয়টি তাই এ অধিবেশনে বিস্তারিত আলোচনা হবে।”

এবারের সাধারণ অধিবেশনে ইউএন ফুড সিস্টেমস সামিট শীর্ষক একটি উচ্চ-পর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

”এই সভার মূল লক্ষ্য হল টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ঠের অন্তর্ভুক্ত- ক্ষুধা, জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র্য এবং বৈষম্যের মতো বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলির সাথে বৈশ্বিক খাদ্য ব্যবস্থার আন্তঃসম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে, উক্ত উন্নয়ন অভীষ্ঠসমূহ অর্জন তরান্বিত করা।”

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে গত বছর ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৫তম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

মহামারীর ধাক্কা কিছুটা কমে আসার মধ্যে এবারের সরাসরি অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীদের তালিকা সংক্ষিপ্ত রাখা হয়েছে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

এক প্রশ্নে রাষ্ট্রাচার প্রধান আমানুল হক বলেন, সরকারিভাবে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হচ্ছেন ৭৯ থেকে ৮০ জন। আর ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের সংখ্যা ব্যবসায়ীরা ঠিক করবেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যক্তিগত সফরে ওয়াশিংটনেও যাবেন বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ১ অক্টোবর দেশে ফেরার কথা রয়েছে তার।