‘ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইন’ নিয়ে টিআইবির শঙ্কা

ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষায় সরকার নতুন যে আইন করার উদ্যোগ নিয়েছে, তা ‘বিরুদ্ধ মত নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার ও স্বাধীন মতপ্রকাশের বাধা’ হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Sept 2021, 03:17 PM
Updated : 16 Sept 2021, 03:17 PM

বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জার্মানভিত্তিক দুর্নীতি বিরোধী সংস্থাটির বাংলাদেশ চ্যাপ্টার বলেছে, “আইনটি জনসাধারণের তথ্যের সুরক্ষার পরিবর্তে কোনোভাবেই যাতে সরকারের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড, দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে জনমত সৃষ্টি এবং ব্যক্তির মতপ্রকাশ ও বাকস্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত না হয়।”

সেজন্য সরকারকে সংশ্লিষ্ট অংশীজনকে নিয়ে আলোচনা ও মতামতের ভিত্তিতে ‘জনবান্ধব’ আইন প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বিবৃতিতে বলেন, “প্রস্তাবিত আইনটি যাতে অধিকতর জনবান্ধব, ব্যক্তিতথ্যের সুরক্ষা এবং স্বাধীন মত ও ভাব প্রকাশের সহায়ক হয়, তা নিশ্চিতে বৃহৎ পরিসের সকল পক্ষের অংশগ্রহণে আলোচনা ও মতামতের ভিত্তিতে আইনটি করায় সরকারকে আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে।”

এ আইনের একটি খসড়া ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সির সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হলেও কোনো ‘অনির্দিষ্ট কারণে’ তা পরে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানান টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।

তিনি বলেন, “এ পদক্ষেপ আইনটি নিয়ে সাধারণের মধ্যে আলোচনা ও মতামতের সুযোগকে বঞ্চিত করার প্রয়াস বলা যায়, যদিও সাধারণের বৃহত্তর কল্যাণে আইনটি প্রণয়ণের কাজে হাত দিয়েছে সরকার।

“এক্ষেত্রে সকল সংশয় দূর করতে শীঘ্রই খসড়া আইনটি সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রকাশের মাধ্যমে সর্বসাধারণের মতামতের জন্য উন্মুক্ত করতে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে।”

প্রস্তাবিত আইনে জনসাধারণের তথ্যের দেখভাল করার জন্য ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান ও একজন সরকারি কর্মকর্তাকে ‘মহাপরিচালক’ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “সময়ের প্রয়োজনে আইনটি যদি প্রণয়ন করা হয়, তাহলে সেটা দেখভাল করার দায়িত্ব মহাপরিচালকের অধীনে থাকা এজেন্সির হাতে নয়, বরং একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের মাধ্যমে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির স্বার্থ সুরক্ষাসহ ব্যক্তির গোপনীয়তা ভঙ্গকারী অভিযুক্ত যে কোনো পক্ষকে যাতে আইনের আওতায় আনা যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।”

সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ‘ডেটা নিয়ন্ত্রণ করার উদ্দেশ্যে’ প্রস্তাবিত আইনে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ‘দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা’ নির্ধারণ ও মহাপরিচালকের প্রতি দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার কথা বলা হচ্ছে মন্তব্য করে বিবৃতিতে বলা হয়, “এর ফলে গবেষণা ও অধিপরামর্শমূলক কার্যক্রম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের কাজকে ভীষণভাবে বাধাগ্রস্ত করবে।”

সরকার ফেইসবুক ও ইউটিউব থেকে তথ্য চেয়ে মাত্র ৪০ শতাংশ পেয়েছে বলে একজন মন্ত্রীর বক্তব্য থেকে উদ্বৃতি করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “প্রস্তাবিত আইনটির মাধ্যমে কী সরকার সামাজিক যোগযোগমাধ্যমের শতভাগ নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়! শত প্রতিকূলতার মাঝেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসমূহের কল্যাণে কিছুটা হলেও জনমত তৈরি ও প্রতিবাদমুখর হতে দেখা যায়।”

‘ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইনটি’ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে টিআইবির বিবৃতিতে বলা হয়, “আইনটির মধ্যে অনেক নিবর্তনমূলক ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যাতে করে স্বাধীন মতপ্রকাশ ও সরকারের সমালোচনাকারীদের নির্বিচারে একহাত নেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।”

২০১৮ সালে মোবাইল অপারেটরদের ‘মিথ্যা বলে’ বিটিআরসি তথ্য সংগ্রহ করেছে অভিযোগ করে টিআইবি বলেছে, “নতুন আইনের অধীনে তা আরও সহজে করার শঙ্কা পুরো মাত্রায় রয়েছে, যার রাজনৈতিকভাবে অপব্যবহারের নতুন সুযোগই বাড়াবে।

“আর ব্যক্তি তথ্যের সুরক্ষার নামে এমনটা ঘটলে দীর্ঘমেয়াদে রাষ্ট্র পিছিয়ে পড়বে, জনকল্যাণ, বাকস্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের সাংবিধানিক অধিকার চর্চা আরো পিছিয়ে যাবে, যা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সম্পূর্ণ বিরোধী।”