শরীয়তপুরের ছামাদ মাস্টার হত্যায় ৪ জনের মৃত্যুদণ্ড

শরীয়তপুরে ইউপি নির্বাচনে বিরোধের জের ধরে পরাজিত প্রার্থী স্কুল শিক্ষক আব্দুস ছামাদ আজাদকে হত্যার দায়ে চার আসামির ফাঁসির রায় দিয়েছে আদালত।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Sept 2021, 08:33 AM
Updated : 15 Sept 2021, 08:33 AM

বুধবার ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মনির কামাল ১১ বছর আগের এ মামলার রায়ে আরও নয় আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- নুরুজ্জামান খান, জাহাঙ্গীর মাতবর, জুলহাস মাতবর ও চান মিয়া। সর্বোচ্চ সাজার পাশাপাশি তাদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন বিচারক।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, “রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে এ হত্যা। জঘন্যতম এ অপরাধে হত্যাকারিরা অনুকম্পা পেতে পারে না। তাদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা হওয়া দরকার।”

শরীয়তপুর সদর উপজেলার চিকন্দী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হালিম মোল্লা, আজিজুল মাতবর, ফারুক খান, আজাহার মাতবর, মীজান মীর, আকতার গাজী, জলিল মাতবর, এমদাদ মাতবর ও লাল মিয়াকে যাবজ্জীবন সাজার পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। ওই টাকা দিতে না পারলে তাদের আরও ৬ মাস জেল খাটতে হবে।

হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণিত না হওয়ায় এ মামলার আসামিদের মধ্যে আজিবর বালী, আব্দুল খন্দকার, খোকন বেপারী, আজাহার মোল্লা ও ছোরাব মোল্লাকে খালাস দেওয়া হয়েছে রায়ে।

এ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর মাহবুবুর রহমান জানান, আব্দুস ছামাদ আজাদ ছিলেন শরীয়তপুর সদর উপজেলার চিকন্দী সরফ আলী উচচ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। চিকন্দী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। সেই বিরোধের জেরে ২০১০ সালের ১৫ জানুয়ারি তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

রায়ের বিবরণে বলা হয়, নির্বাচনে তৎকালীন চেয়ারম্যান হালিম মোল্লার কাছে অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন আব্দুস ছামাদ আজাদ ওরফে ছামাদ মাস্টার। পরবর্তী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য তিনি এলাকায় পোস্টার লাগানো শুরু করলে ক্ষুব্ধ হন হালিম মোল্লা।

২০১০ সালের ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় শরীয়তপুর জেলার পালং থানাধীন সন্তোষপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় প্রকাশ্যে রাস্তায় কুপিয়ে হত্যা করা হয় আব্দুস ছামাদ আজাদকে।

তাকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে রহিম পেদা, অজিত  শীল, সেলিম ফকির, ইসাহাক মুন্সী ও বিশ্বজিৎ শীল গুলিবিদ্ধ হন।

ওই ঘটনায় তৎকালীন চেয়ারম্যান হালিম মোল্লা ও সাবেক চেয়ারম্যান আজিবর বালীসহ ৩০ জন এবং অজ্ঞাতামানা আরও ১৫/২০ জনের বিরুদ্ধে পালং থানায় মামলা করেন নিহত ছামাদ মাস্টারের স্ত্রী।

থানার এসআই শহীদুল ইসলাম তদন্ত শেষে ওই বছর ১৪ অগাস্ট ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন।

কিন্তু বাদী ওই প্রতিবেদনে আপত্তি জানালে আদালত অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেয়। অধিকতর তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ১১ মে এসআই সুলতান মাহমুদ ১৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন।

মামলাটি পরে বিচারের জন্য ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে আসে। দীর্ঘ বিচারে রাষ্ট্রপক্ষে মোট ১৪ জনের সাক্ষ্য শুনে বিচারক বুধবার ১৩ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দিলেন।

রায়ের পর মামলার বাদী ফেরদৌসী আজাদ আদালতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মামলার ২ নম্বর আসামি আজিবর বালী  ঘটনার প্রধান নায়ক। আদালত  তাকে খালাস দিয়েছেন । আমি তাতে ক্ষুব্ধ। যাই হোক, রায় যেন কার্যকর করা হয়।”

অন্যদিকে দণ্ডিতদের আইনজীবীরা এ রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আপিল করার কথা বলেছেন।