দেশে কোভিড টিকার মজুদ ৯৬ লাখ ডোজ: প্রধানমন্ত্রী

দেশে গত ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯৬ লাখ ৫৪ হাজার ১১৯ ডোজ করোনাভাইরাসের টিকার মজুদ ছিল বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Sept 2021, 08:04 AM
Updated : 15 Sept 2021, 08:43 AM

বুধবার জাতীয় সংসদে পিরোজপুর-৩ আসনের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য  তুলে ধরেন সংসদ নেতা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বর্তমানে ১৮ বছরের উপরে সকল বাংলাদেশি নাগরিককে করোনার টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। সেজন্য বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা থেকে টিকা সংগ্রহের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।”

তিনি জানান, ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দুই কোটি নয় লাখ ২২ হাজার ৭১৫ জনকে প্রথম ডোজ এবং তাদের মধ্যে এক কোটি ৩৮ লাখ ৫৫ হাজার ৪৬ জনকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে মোট তিন কোটি ৪৭ লাখ ৭৭ হাজার ৭৬১ ডোজ টিকা।

বর্তমানে সাধারণভাবে ২৫ বছর ও তার বেশি বয়সীদের টিকা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া শিক্ষার্থীরা ১৮ বছর বয়স হলেই টিকার জন্য নিবন্ধন করতে পারছেন। প্রাধিকারের তালিকায় যারা আছেন, তাদের ক্ষেত্রেও বয়সের সীমা রাখা হয়নি।  

প্রধানমন্ত্রী বলেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে মোট জনসংখ্যার ৫০ শতাংশকে টিকার আওতায় আনার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসরণ করে ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার।

১২ বছর ও তার বেশি বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনা, প্রতিবন্ধীদের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সুবর্ণ কার্ডের মাধ্যমে নিবন্ধন করে টিকা দেওয়া এবং শ্রমিকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেওয়া নিয়ে সরকারের পরিকল্পনার কথাও তিনি জানান।

দেশে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসের আটটি টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন পেয়েছে। এগুলো হল: ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ‘কোভিশিল্ড’, রাশিয়ার তৈরি ‘স্পুৎনিক-ভি’, চীনের সিনোফার্মের তৈরি ‘বিবিআইবিপি-সিওরভি’ (BBIBP-CorV), চীনের সিনোভ্যাকের টিকা ‘করোনাভ্যাক’, যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি ফাইজার ও জার্মান জৈবপ্রযুক্তি কোম্পানি বায়োএনটেকের তৈরি কোমির্নাটি, মডার্নার ‘স্পাইকভ্যাক্স’, জনসন অ্যান্ড জনসনের ‘জ্যানসেন কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন’।

এছাড়া চীনের ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল বায়োলজি অব দ্য চাইনিজ একাডেমি অব মেডিকেল সায়েন্স (আইএমবি ক্যাম্পস) উদ্ভাবিত নতুন একটি টিকা, যা এখনও পরীক্ষামূলক প্রয়োগের পর্যায়ে রয়েছে।

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি ডোজ টিকা কেনার জন্য বাংলাদেশ চুক্তি করলেও এ পর্যন্ত এসেছে ৭০ লাখ ডোজ। এছাড়া চীনের সিনোফার্মের কাছ থেকে টিকা কিনছে বাংলাদেশ।

ভবিষ্যতে জনসনের টিকা কেনার জন্য আলোচনার কথা এর আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন। এছাড়া টিকার আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্স থেকে ফাইজার, বায়োএনটেক, মডার্নার পাশাপাশি সিনোফার্ম এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাও আসছে।

সংসদে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “টিকা সংগ্রহের জন্য সম্ভাব্য সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারের গৃহীত এ সকল কার্যক্রমের ফলে এ পর্যন্ত (১২ সেপ্টেম্বর) ২৪ কোটি ৬৫ লাখ ১৩ হাজার ৬৬০ ডোজ টিকা সংগ্রহের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

“আর ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দ্বিপাক্ষিক ক্রয় চুক্তি এবং উপহার হিসাবে মোট ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৩১ হাজার ৮৮০ ডোজ টিকা পাওয়া গেছে। করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে টিকা সংগ্রহ ও বিনামূল্যে টিকাদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাশিয়া থেকে ১ কোটি ডোজ স্পুৎনিক-ভি টিকা কেনার চুক্তি ‘চূড়ান্ত পর্যায়ে’ রয়েছে। তাছাড়া কোভ্যাক্সের মাধ্যমে তিন কোটি ডোজ সিনোফার্ম ও সাড়ে সাত কোটি ডোজ সিনোভ্যাক টিকা আনার বিষয়টিও প্রায় চূড়ান্ত।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য পূরণের আশা প্রকাশ করে সরকার প্রধান বলেন, দেশে ৬৭৩টি টিকা কেন্দ্রের মাধ্যমে টিকা দেওয়া হচ্ছে এবং তা ইউনিয়ন পর্যন্ত বিস্তৃত করা হয়েছে। এজন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে।

“সকলের সহযোগিতায় চলমান এই বৈশ্বিক মহামারীকে সফলভাবে মোকাবেলা করতে সক্ষম হব। পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। এ জন্য টিকা গ্রহণের পাশাপাশি সবাইকে নির্ধারিত স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।”