কিশোরদের বিরুদ্ধে মামলায় অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন আমলে নিল আদালত

ফেইসবুকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারের’অভিযোগে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরসহ সাতজনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন আমলে নিয়েছে আদালত।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Sept 2021, 10:59 AM
Updated : 12 Sept 2021, 12:59 PM

আলোচিত এ মামলায় পুলিশের দেওয়া অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে ঢাকার সাইবার ট্রাইবুনালের বিচারক আসসামছ জগলুল হোসেন পলাতক আসামিদের নিয়ে পুলিশ প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৩০ সেপ্টেম্বর তারিখ রেখেছেন।

তদন্ত কর্মকর্তার সুপারিশ অনুযায়ী বিচারক এদিন প্রয়াত লেখক মুশতাক আহমেদসহ চারজনকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেন বলে এ ট্রাইবুনালে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নজরুল ইসলাম শামীম জানান।

মামলার দ্বিতীয় তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) আফছর আহমেদ গত ১০ মে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এই অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

সেখানে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, ‘রাষ্ট্রচিন্তার’ সদস্য দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়া, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক পরিচালক ও ব্রোকারেজ হাউজ বিএলআই সিকিউরিটিজের কর্ণধার মিনহাজ মান্নান ইমন, হাঙ্গেরি প্রবাসী সামিউল ইসলাম খান সামি, নেত্র নিউজের সম্পাদক সুইডেন প্রবাসী তাসনিম খলিল, ব্লগার আশিক মোহাম্মাদ ইমরান এবং মো. ওয়াহিদুন্নবী ওরফে স্বপন ওয়াহিদকে আসামি করা হয়।

লেখক মুশতাক আহমেদ মারা যাওয়ায় এবং এজাহারের আসামিদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক শাহেদ আলম ও জার্মানিতে থাকা ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ না পাওয়ায় মামলা থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

এছাড়া ফিলিপ শুমাখার নামে ফেইসবুক ব্যবহারকারী যাকে এজাহারে আসামি করা হয়েছিল, তার পরিচয় বা ঠিকানা না পাওয়ায় তাকেও মামলা থেকে বাদ দিতে বলেন দ্বিতীয় তদন্তকারী কর্মকর্তা।

মামলার আসামিদের মধ্যে কিশোর, দিদারুল এবং মিনহাজ মান্নান এদিন ট্রাইবুনালে হাজির হয়ে জামিন নেন। আর আদালতে উপস্থিত না থাকায় তাসনিম খলিল, সামি, আশিক ইমরান ও স্বপন ওয়াহিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন বিচারক।

মৃত্যু হওয়ায় মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে মুশতাক আহমেদের নাম

মহামারীর মধ্যে গত বছর ৬ মে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর এবং ব্যবসায়ী-লেখক মুশতাক আহমেদকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। পরে ওই দুজনসহ ১১ জনকে আসামি করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ওই মামলা দায়ের করেন র‌্যাব-৩ এর ডিএডি আবু বকর সিদ্দিক।

পরদিন মিনহাজ মান্নান ও দিদারুলকেও এ মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। ফেইসবুক ব্যবহার করে জাতির জনক, মুক্তিযুদ্ধ, করোনাভাইরাস মহামারী সম্পর্কে গুজব, রাষ্ট্র/সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অভিপ্রায়ে অপপ্রচার বা বিভ্রান্তি ছড়ানো, অস্থিরতা-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারার অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে।

ফেইসবুকে ‘I am Bangladeshi’ পেইজে সম্পৃক্ত হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয় কিশোর, মুশতাক, দিদারুলকে, যে পেইজ থেকে রাষ্ট্রের সুনাম ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে বিভিন্ন পোস্ট দেওয়া হচ্ছিল বলে তখন দাবি করে র‌্যাব।

হোয়াটস অ্যাপ ও ফেইসবুক মেসেঞ্জারে কিশোর ও মুশতাকের সঙ্গে তাসনিম খলিল, জুলকারনাইন সায়ের খান, শাহেদ আলম, আসিফ মহিউদ্দিনের ‘ষড়যন্ত্রমূলক চ্যাটিংয়ের প্রমাণ’ পাওয়ার দাবিও করা হয় মামলার এজাহারে।

দিদারুল ও মিনহাজ ফেইসবুকে মুশতাকের ‘ফ্রেন্ড’ উল্লেখ করে মামলায় বলা হয়, “তাদের সাথে হোয়াটস অ্যাপ ও ফেইসবুক মেসেঞ্জারে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক চ্যাটিংয়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে।”

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক পরিচালক ও ব্রোকারেজ হাউজ বিএলআই সিকিউরিটিজের কর্ণধার মিনহাজ মান্নান চার মাস কারাগারে থাকার পর জামিনে মুক্তি পান। রাষ্ট্রচিন্তার দিদারুলকেও সে সময় জামিন দেয় হাই কোর্ট। তবে কিশোর ও মুশতাকের জামিন আবেদন সে সময় বার বার প্রত্যাখ্যাত হয়।

রমনা থানা পুলিশ তদন্তের পর শুধু মুশতাক, কিশোর ও দিদারকে আসামি করে গত ৪ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দেন মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানার এসআই মহসীন সর্দার। বাকি আটজনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেন তিনি।

এদিকে ফেব্রুয়ারির শুরুতে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরায় সেনাপ্রধানকে নিয়ে ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার’স মেন’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে সামিউল ইসলাম খান সামি ওরফে সায়ের জুলকারনাইন ওরফে সামির নাম আলোচনায় আসে।

অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন খানের ছেলে সামি থাকে হাঙ্গেরিতে। তিনি ছিলেন ওই প্রতিবেদনের ‘মূল তথ্যদাতা’।  আর সুইডেন প্রবাসী তাসনিম খলিলকেও ওই প্রতিবেদনে কথা বলতে দেখা যায়।

পুলিশ তাদের নাম মামলা থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করায় সে সময় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। পরে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে গত ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আসসামছ জগলুল হোসেন এ মামলায় অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন।

ওই মাসের শেষ দিকে মুশতাক আহমেদ কারাবন্দি অবস্থায় মারা গেলে সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিও তখন নতুন করে জোরালো হয়ে ওঠে। পরে ৩ মে হাই কোর্ট জামিন দিলে কারাগার থেকে মুক্তি পান কিশোর।  

এর এক সপ্তাহ পর মামলার দ্বিতীয় তদন্ত কর্মকর্তা প্রথম অভিযোগপত্র থেকে বাদ পড়া পাঁচজনকে আসামির তালিকায় ফিরিয়ে এনে সাতজনের বিরুদ্ধে অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।

সেখানে মিনহাজ মান্নান, সামি, তাসনিম খলিল, ইমরান ও স্বপন ওয়াহিদের নাম ফিরিয়ে আনা হয়, আগের অভিযোগপত্রে যাদের বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল।

গত মার্চে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর কার্টুনিস্ট কিশোর অভিযোগ করেন, বাসা থেকে তুলে নিয়ে গ্রেপ্তার দেখানোর আগে তার ওপর ‘নির্যাতন’ করা হয়। ওই অভিযোগে একটি মামলার আবেদনও তিনি করেছেন। 

পুরনো খবর-