আগের রাতে তাকে গ্রেপ্তারের পর শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।
রাজধানীর তোপখানা রোড এলাকা থেকে রাগীব ও তার সহযোগী আবুল বাশার খানকে (৩৪) গ্রেপ্তারের পর সংবাদ সম্মেলনে আল মঈন জানান, রাগীব আহসানের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে করা অন্তত ১৫টি মামলা চলমান রয়েছে। তার বিরুদ্ধে ১৭ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।
১৭ হাজার কোটি টাকার হিসাব জানতে চাইলে র্যাব কর্মকর্তা বলেন, রাগীব এমএলএম কোম্পানির চাকরি বাদ দিয়ে নিজেই এধরনের কোম্পানি তৈরি করে ২০০৮ সালে ১০ হাজার গ্রাহক সংগ্রহ করেন।
“বর্তমানে তার গ্রাহক লক্ষাধিক এবং তাদের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত ১১০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে। তদন্ত করলে আরো বের হবে।”
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, যে ১৫টি মামলা চলমান রয়েছে, সেগুলোতে লাখ লাখ টাকা প্রতারিত হয়েছে বলে ভোক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন। তাকে গ্রেপ্তারের পর আরও কিছু ভোক্তভোগী মামলা করছেন।
তিনি জানান, হাটহাজারীর একটি মাদরাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস ও খুলনার একটি মাদ্রাসা থেকে মুফতি ডিগ্রি নেওয়া রাগীব প্রথম জীবনে মাদ্রাসায় চাকরি করতেন। পরে মসজিদের ইমামতি শুরু করেন। পাশাপাশি ২০০৬-২০০৭ সালের দিকে একটি এমএলএম কোম্পানিতে ৯০০ টাকা বেতনের চাকরি নেন।
“সেখানে এমএলএম বিষয়ে আদ্যোপান্ত জেনে নিয়ে নিজেই তেমন একটি কোম্পানি খুলে বসেন এবং ওয়াজ মাহফিলসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রভাবিত করে তার প্রতিষ্ঠানে টাকা বিনিয়োগ করান রাগীব।”
কমান্ডার মঈন বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষ, ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যুক্ত ব্যক্তিবর্গ, ইমাম শ্রেণি ও অন্যান্যদের টার্গেট করে প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করে ‘শরিয়তসম্মত সুদবিহীন বিনিয়োগ’ বলে প্রচারণা চালিয়ে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতেন।
“পাশপাশি তিনি লক্ষ টাকার বিনিয়োগে মাসিক মাত্রাতিরিক্ত টাকাপ্রাপ্তির প্রলোভনও দেখাতেন।”
র্যাবের মুখপাত্র বলেন, মাঠ পর্যায়ে তার প্রায় ৩০০ কর্মীর একটি বাহিনী ছিল, যাদের বেতন না দিয়ে শুধু বিনিয়োগকারী জোগাড় করলে শতকরা ২০ ভাগ টাকা দেওয়ারও লোভ দেখাতেন রাগীব আহসান।
বিনিয়োগকারীরা ছাড়াও মাঠ পর্যায়ের কর্মী বাহিনীও এখন রাস্তায় আন্দোলনে নেমেছে জানিয়ে র্যাবের কর্মকর্তা জানান, পিরোজপুর ছাড়াও ঢাকা, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ এলাকায় মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও সংবাদ সম্মেলন করছেন তারা।
রাগীব আহসানের এহসান গ্রুপের ১৬টি প্রতিষ্ঠানের সন্ধান পেয়েছে র্যাব। এগুলো হচ্ছে- এহ্সান পিরোজপুর বাংলাদেশ (পাবলিক) লিমিটেড, এহসান রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমেটেড, নুর-ই মদিনা ইন্টারন্যাশনাল ক্যাডেট একাডেমি, জামিয়া আরাবিয়া নূরজাহান মহিলা মাদরাসা, হোটেল মদিনা ইন্টারন্যাশনাল (আবাসিক) আল্লাহর দান বস্ত্রালয়, পিরোজপুর বস্ত্রালয়-১ ও ২, এহ্সান মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড, মেসার্স বিসমিল্লাহ ট্রেডিং অ্যান্ড কোং, মেসার্স মক্কা এন্টারপ্রাইজ, এহ্সান মাইক অ্যান্ড সাউন্ড সিস্টেম, এহ্সান ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস, ইসলাম নিবাস প্রজেক্ট, এহ্সান পিরোজপুর হাসপাতাল, এহ্সান পিরোজপুর গবেষণাগা ও এহ্সান পিরোজপুর বৃদ্ধাশ্রম।
এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সবাই তার পরিবারের সদস্য, যাদের মধ্যে বাবা, শ্বশুর, ভাই, ভগ্নিপতিও রয়েছেন বলে জানান র্যাব কর্মকর্তা।
এসব অর্থ জঙ্গি কর্মকাণ্ডে ব্যবহার হত কিনা সে ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
“রাগীব আহসানের সম্পদ, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সরকারে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে তদন্ত করে দেখার জন্য র্যাবের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হবে।”