যুক্তরাজ্যের রেডলিস্টে বাংলাদেশ, ‘বৈষম্যমূলক’ বললেন মোমেন

করোনাভাইরাস সংক্রমণ কম থাকার পরও যুক্তরাজ্যের অতি ঝুঁকিপূর্ণ তালিকা ’রেড লিস্টে’ বাংলাদেশকে রাখার সিদ্ধান্তকে ‘বৈষম্যমূলক’ হিসেবে অভিহিত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Sept 2021, 02:11 PM
Updated : 9 Sept 2021, 02:25 PM

লন্ডনে ব্রিটিশ হাউজ অব লর্ডস ও হাউস অব কমন্সের সদস্যদের উপস্থিতিতে এক অনুষ্ঠানে এমন অভিমত দেওয়ার কথা বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের জানান তিনি।

ইউরোপের তিন দেশে দীর্ঘ সফর নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক ব্রিফিংয়ে তিনি রেড লিস্ট বিষয়ক যুক্তরাজ্যের পরবর্তী সভায় বাংলাদেশ তালিকা থেকে বের হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, “রেড-লিস্ট মানে, ব্রিটিশ নাগরিক বাংলাদেশ থেকে গেলেও ১০ দিন তাকে কোয়ারেন্টিন করতে হবে। ২ হাজার ২৮৫ পাউন্ড আগে আগে জমা দিয়ে দিতে হবে। এটা বৈষম্যমূলক।

“আমি বলেছি, আপনারা মেম্বারস অব পার্লামেন্ট, মেম্বারর্স অব হাউজ অব লডস, আপনাদের এটা নিয়ে কথা বলা উচিত। এটাতো খুবই অন্যায়। আপনাদের ‘সাবজেক্টটাই’ অসুবিধায় পড়তেছে। এটা খুবই দুঃখজনক। আপনাদের বৈষম্যহীন হওয়া উচিত। ব্রিটিশদের কাছে আমরা এটা প্রত্যাশা করি না।”

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের উচ্চ হার বিবেচনায় নিয়ে গত ৯ এপ্রিল বাংলাদেশকে রেড লিস্টে অন্তর্ভুক্ত করে যুক্তরাজ্য, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত যে তালিকায় ছিল ৬২ দেশ।

এ তালিকাভুক্ত দেশের নাগরিকদের বাইরে থেকে ঢুকতে দিচ্ছে না দেশটি। এসব দেশ থেকে ব্রিটিশ নাগরিকরা ঢুকতে পারলেও থাকতে হচ্ছে ১০ দিনের বাধ্যতামূলক হোটেল কোয়ারেন্টিনে।

সোমবার ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাবের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশকে রেড লিস্ট থেকে সরানোর অনুরোধ জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে তিনি বলেছিলেন, “বাংলাদেশের জোরালো টিকাদান কর্মসূচি ও কোভিড সংক্রমণের হার ৯ দশমিক ৮২ শতাংশে কমে আসা এবং সাত হাজারের বেশি ব্রিটিশ-বাংলাদেশির আটকেপড়ার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাজ্যের উচিত বাংলাদেশকে কোভিড লাল-তালিকাভূক্ত দেশ থেকে বাদ দেওয়ার বিষয় বিবেচনা করা।”

এর জবাবে সিদ্ধান্ত পর্যালোচনার আশ্বাস দিলেও এ ধরনের তালিকার পেছনে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পর্যালোচনা মুখ্য থাকার কথা বলেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

রাব বলেছিলেন, “আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি আমাদের দু’দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব এবং বাংলাদেশের জিনোম সেকুয়েন্সিং ডেটার আরও ঘনঘন প্রকাশের ওপর ভিত্তি করে ব্রিটিশ সরকার বাংলাদেশকে রেড লিস্টে রাখার বিষয়টি পর্যালোচনা করবে।”

দুই ব্রিটিশ-বাংলাদেশি পার্লামেন্ট সদস্য রুশনারা আলী ও আফসানা বেগমের সঙ্গে বৈঠকেও তাদের সরকারের কাছে রেড লিস্ট থেকে বাংলাদেশের নাম প্রত্যাহারের বিষয়টি তুলে ধরার আহ্বান জানিয়েছেন মোমেন।

তিনি বলেন, “তাদেরকে বলেছি, আপনারা জোরালো আওয়াজ তোলেন, কেন বাংলাদেশ রেড লিস্টে আছে। ভারত থেকে আমাদের লোকের মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কম। কিন্তু ওদেরকে বাদ দিয়েছে কিন্তু আমাদের রেখেছে।”

ব্রিটিশদের কাছে বিষয়টি তুলে ধরার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আপনারা বলেছেন, আপনার দেশের লোকদের রক্ষা করবেন। এগুলোতো আপনার দেশের নাগরিক… স্কুল-কলেজ শুরু হয়ে গেছে, যেতে পারে না, দিস ইজ নট ফেয়ার।

”উনাদের কাছে এটা আমি তুলেছি। আমার ধারণা যে, পরবর্তী সভায় আমাদের থেকে রেড উঠে যাবে।”

বাংলাদেশকে রেড লিস্টে রাখার বিষয়ে যুক্তরাজ্য কী যুক্তি দেখিয়েছে, এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আপনারা এই প্রশ্ন ব্রিটিশদের বলেন, কেন আমরা রেডলিস্টে। ইন্ডিয়া আমাদের থেকে বেশি লোক মরলেও, অতিমারি বেশি হলেও তারা বের হয়েছে।

”তারা হয়ত এক ধরনের যুক্তিটুক্তি দেবে, নিজের অবস্থান শক্ত করার জন্য। কিন্তু ফ্যাক্ট টু দ্য ম্যাটার ইজ- আমাদের অত লোক মরেও নাই, আমাদের অতিমারি তো তাদের ওখান থেকে আসছে। তারা পার পেয়ে গেছে, আমরা এখন ঝামেলায় আছি।”

যুক্তরাজ্য থেকে টিকা প্রাপ্তি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ডমিনিকসহ অন্যদের বলেছি, আপনারা ভ্যাকসিন এখানে তৈরি করলেন, আর আমাদের দেন না। (ব্রিটিশ) প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, তিনি ১০০ মিলিয়ন ডলারের ভ্যাকসিন দেবেন, কোভ্যাক্সের অধীনে।

”শুধু শুনতেছি, চেহারাতো দেখি না। আমি তাদেরকে বললাম, আমার লোক মরে গেলে দেবেন নাকি!”

বাংলাদেশের চাহিদার কথা আলোচনায় তুলে ধরার কথা উল্লেখ করে মোমেন বলেন, “আমাদের ২৭০ মিলিয়ন ডোজ দরকার। আমরা কিনতেছি কিছু। কিন্তু আমরা ইংল্যান্ডের মত ভালো বন্ধুদের কাছে আরও আশা করি।”