বুধবার দুপুর আড়াইটা। রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোডের রেললাইনের ধারে জটলা। রেলের ধাক্কায় সদ্যমৃত এক ব্যক্তিকে ঘিরে আছে মানুষ। জটলা থেকে আফসোসের সুরে যিনি কথা বলছিলেন তার নাম ফাতেমা বেগম।
এদিন দুপুরে রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোডের বটতলা এলাকায় রেললাইনের ওপর দিয়ে কানে হেডফোন গুঁজে কথা বলতে বলতে যাচ্ছিলেন ৩৭ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি।
ট্রেন আসার শব্দ শুনে আশপাশের লোকজন চিৎকার করে সাবধান করার চেষ্টা করেছিলেন। ট্রেনটিও তীব্র শব্দে হর্ন বাজিয়েছিল কয়েকবার। তবে কোনো কিছুই কানে ঢোকেনি তার; হয়নি শেষ রক্ষাও।
দ্রুতগামী ট্রেনের ধাক্কায় লাইনের পাশে ছিটকে পড়েন লোকটি। হাতে থাকা মোবাইল, ঘড়ি ছিটকে পরে এদিক ওদিক। খুলি ফেটে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার।
ঘটনার আরেক প্রত্যক্ষদর্শী মাঝ বয়সী আক্কাস আলী ২০ বছরের বেশি সময় ধরে ওই এলাকায় থাকেন। তিনি জানান, মাসে অন্তত একটা লাশ তারা এই এলাকায় দেখেন। ১৭-১৮ দিন আগেও এই ঘটনাস্থল থেকে আধা কিলোমিটার দূরে আরেক ব্যক্তি লাইন পার হওয়ার সময় ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যান।
“এখন লাইনের ওপর দিয়ে মোবাইলে কথা বলতে বলতে কাউকে হেঁটে যেতে দেখলেই সবাই মিলে স্থানীয়রা নিষেধ করি। অনেকে এটাকে খারাপভাবেও নেন,“ যোগ করেন তিনি।
শুধু যে রাজধানী ঢাকার এই পয়েন্টে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটছে তা নয়, নগরীর অনেক স্থানে ট্রেনে কাটা পড়ে ভয়ঙ্কর পরিণতি হচ্ছে প্রায় সব বয়সী মানুষের। দিন কয়েক পরপরই এমন খবর শিরোনাম হচ্ছে।
ঢাকার বাইরে দেশজুড়েও এমন ঘটনার সংবাদ দেখা যায় অহরহ। সামান্য অসতকর্তাতেই ঘটছে সর্বনাশ।
বুধবারের দুর্ঘটনার খবর পেয়ে বটতলা এলাকায় আসেন রেলপুলিশের সদস্য আমিনুর রহমান। সেখানে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “লাশের সুরতহাল করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। নিহতের পরিচয় নিশ্চিত করা যায়নি।
“মানিব্যাগে যে জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া গেছে সে অনুযায়ী তার নাম মো. ফজলু, বাবার নাম আলতাফ হোসেন মোল্লা। তার মুঠোফোনটি মনে হয় হাতে ছিল। সেটি ভেঙে চৌচির হয়ে, বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যার কারণে মুঠোফোনের মাধ্যমেও পরিচয়টি বের করা যায়নি। এখন ওই ফোনের সিমকার্ডটি অন্য ফোনে নিয়ে স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।“
স্থানীয়রা মাঝবয়সী ওই ব্যক্তির হেডফোনে কথা বলার বর্ণনা দিলেও পুলিশ সেটি খুঁজে পায়নি।
মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আক্কাস আলী জানান, কানে হেডফোন গুঁজে কথা বলতে বলতে যাচ্ছিলেন ওই ব্যক্তি। ট্রেন আসতে দেখে কয়েকজন লাইনের অপরপাশ থেকে চিৎকার করে লোকটিকে সতর্ক করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তিনি কিছুই শোনেননি।
স্থানীয় বটতলায় চায়ের দোকান আছে নাজমা বেগমের। বুধবার দুপুরের ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তিনিও। তিনি বলেন, “লোকজন কথা কতি দেখে তারে ডাক দিয়েছে। কিন্তু সে লাইনে দাঁড়িয়ে কথা কয়েই যাচ্ছিল। গাড়িও (ট্রেন) হর্ন দিয়েছে কয়েকবার। কানে হেডফোনের কারণে সে কিছুই শুনতে পায়নি।
“এই এলাকায় ডাবল লাইন। অনেকে এক পাশে দেখে লাইন পার হতে হতে আরেক পাশে ট্রেন এসে পড়ে। আর ট্রেনের গতি বোঝা যায় না। মনে হয় অনেক দূরে, কিন্তু হঠাৎই কাছে এসে পড়ে।“
পা হারিয়ে কাতরাচ্ছেন মোশাররফ
ঢাকা রেলওয়ে (জিআরপি) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা- ওসি মাজহারুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, মঙ্গলবার সকালেই কমলাপুর রেল স্টেশনের ৮ নম্বর প্লাটফর্মে ট্রেনের ইঞ্জিনের নিচে পড়ে দুই পা কাটা পড়েছে মোশারারফ হোসেন নামে এক তরুণের।
মোশাররফের বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরায়। তার ভগ্নিপতি আবু তালেব বলেন, “মোশাররফ এলিফ্যান্ট রোডে জুতার দোকানে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করেন। মঙ্গলবার কোভিডের দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিতে তিনি গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিলেন। স্টেশনেই এ ঘটনা ঘটে। তার দুটি পা-ই কাটা পড়েছে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে।“
তাকে এখন আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে বলে বুধবার সন্ধ্যায় জানিয়েছেন তার ভগ্নিপতি।