পদ্মা সেতুতে বার বার ফেরির ধাক্কায় ‘গভীর ষড়যন্ত্র’ দেখছেন নৌপ্রতিমন্ত্রী

পদ্মা সেতুতে আবারও ফেরির ধাক্কা লাগার ঘটনায় ‘গভীর ষড়যন্ত্র’ খুঁজে পাচ্ছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 August 2021, 12:57 PM
Updated : 31 August 2021, 01:25 PM

মঙ্গলবার সচিবালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমার কাছে মনে হচ্ছে, এটা আমরা ব্যক্তিগত উপলব্ধি, আজকের ঘটনায় মধ্যে আমি গভীর ষড়যন্ত্র খুঁজে পাচ্ছি। এটার পেছনে কোনো... আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে আমি বলেছি।

“সিনিয়র মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও আজকে নির্দেশনা দিয়েছেন। এটা গভীরভাবে তদন্ত করতে হবে এবং এটা অবশ্যই উদ্ঘাটন করতে হবে।”

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে শিমুলিয়া ঘাট থেকে যাওয়ার সময় সেতুর ২ ও ৩ নম্বর পিয়ারের মাঝখানে ১-বি স্প্যানে ফেরি ‘বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীরের’ ধাক্কা লাগে। এতে ফেরির মাস্তুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

খালিদ মাহমুদ বলেন, “এত সকাল বেলা এই ঘটনা আমরা দেখলাম, জাহাজ গেল, আবার ওখানে গিয়ে কোনো চিহ্ন পাওয়া যাচ্ছে না। আবার ভিডিওতে দেখছি (মাস্তুল) বাড়ি খেয়ে পড়ে গেল। বলা হচ্ছে ওটা লোহার।

“লোহার হলেতো পড়ে যাবে না, বেঁকে যাবে এবং ঘষা খাবে। কিন্তু ঘষার কোনো চিহ্ন নেই। এই সংবাদগুলো কেন আসছে, এটাও তদন্ত হওয়া দরকার। আমার কথা ভুল হলে আমি খুশি হব যে এটার মধ্যে কোনো ষড়যন্ত্র নেই।”

পদ্মা সেতুর উচ্চতা অনুযায়ী স্প্যানে কোনো নৌযানের ধাক্কা লাগার কথা নয়- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “এটা তো আমাদেরও প্রশ্ন। পদ্মা সেতুর যে নকশা করা হয়েছে, সেই নকশা অনুযায়ী যে উচ্চতা থাকার কথা, সেখানে কোনোভাবেই উপরের স্প্যানে আঘাত লাগার কথা নয়।

“আজকে এটা হয়েছে, কেন হয়েছে? আমরা বলেছি, এটার নিবিড় তদন্ত করতে হবে।… এই ঘটনার পেছনে অন্য উদ্দেশ্য আছে কিনা সেটা আমাদের ভাবিয়ে তুলছে।”

গত ১৩ অগাস্ট পদ্মা সেতুতে ফেরির ধাক্কার পর পরিদর্শনে গিয়েছিলেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

সেতুর জন্য পদ্মার পানির সমতল থেকে ১৮ মিটার উচ্চতা রাখতে বিআইডব্লিউটিএ’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “সেতু কর্তৃপক্ষ ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, পয়েন্ট ৫ মিটার অতিরিক্ত উচ্চতা রেখেছিল। পদ্মা সেতু যেভাবে তৈরি করা হয়েছে, এ ধরনের ধাক্কায় সেতুর কোনো ক্ষতি হবে না। ক্ষতি হবে আমাদের মনের। আজকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে বলছে, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় বিশ্বাসঘাতকতার জায়গায় চলে গেছে।”

এর আগে কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে সেতুতে কয়েক দফা ফেরির ধাক্কা লাগার পর পদ্মা সেতুর নিচ দিয়ে ভারী যানবাহন নিয়ে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমরা এত সতর্ক! পদ্মা সেতুর নিরাপত্তার জন্য সেখানে ১৩ দিন ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। এজন্য মানুষের অনেক ভোগান্তি হচ্ছে। আমরা আমাদের অপরাধী ভাবছি।

“এখন তো মনে হচ্ছে এটা পদ্মা সেতুর আঘাত না, আঘাত আমাদেরকেই করা হচ্ছে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন, তিনি তদন্ত করার নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা চাই এটার সঠিক তদন্ত হোক।”

অপরাধী যেই হোক, তদন্তের মাধ্যমে বেরিয়ে আসবে মন্তব্য করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “যদিও পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সেখানে স্প্যানের মধ্যে তারা কোনো ধরনের আঘাতের চিহ্ন পাননি। আমরা ভিডিওতে দেখলাম সেখানে ধাক্কা লেগেছে। তারা স্থান পরিদর্শন করে দেখেছেন কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। এগুলো তদন্ত করলে সব বেরিয়ে আসবে।”

এর আগে গত ২৩ জুলাই পদ্মা সেতুর ১৭ নম্বর পিয়ারের সঙ্গে ধাক্কা খায় ফেরি শাহজালাল। ৯ অগাস্ট ‘বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর’ সেতুর ১০ নম্বর খুঁটিতে আঘাত করে এবং ১৩ অগাস্ট সেতুর ১০ নম্বর পিয়ারে ধাক্কা দেয় ফেরি ‘কাকলী’।

সেসব ঘটনার তদন্ত নিয়ে জানতে চাইলে খালিদ মাহমুদ বলেন, “মাস্টার-সুকানিসহ অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তাদের মেডিকেল পরীক্ষাও করা হয়েছে। স্বাস্থ্যগত কোনো ত্রুটি পাওয়া যায়নি।

“ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে যে ধরনের (নাশকতা) কথা বলছি, সেই ধরনের কোনো বিষয়ও উদযাটন করা যায়নি। তাদের কোনো অসৎ উদ্দেশ্য পাওয়া যায়নি। সেগুলো দুর্ঘটনাই ছিল। আমি বলেছিলাম উদাসীনতা ও দুর্বলতা আছে।”

এসব ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।

ঘাট স্থানান্তরের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “পদ্মা সেতু চালুর পর মাঝিরকান্দি ঘাট বিকল্প হতে পারে। এসব ঘটনার পর আমাদের মাস্টারদের মধ্যেও ভীতি তৈরি হয়েছে। আবার যদি কোনো ঘটনা ঘটে যায় কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।

“সেজন্য আমরা মাঝিরকান্দি ঘাট প্রস্তুত রেখেছি। সেখানে নাব্য সংকট দেখা দিয়েছে। নাব্যতা ও রাস্তার বিষয়টি ক্লিয়ার হলে হয়ত আমরা হালকা যানবাহন আপাতত পারাপার করতে পারব।”

তিনি জানান, সেখানে আপাতত কোনো ‘ইয়ার্ড’ করার সুযোগ নেই। তবে ভবিষ্যতে পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ একটি ‘ইয়ার্ড’ করা জন্য জায়গা দেবে।

চলাচল করা অনেক ফেরির ফিটনেস নেই- এমন অভিযোগের বিষয়ে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “গত ১২ বছরে আমরা ২৩টি ফেরি যুক্ত করেছি। আমাদের আরও ফেরি প্রয়োজন।

“মানুষের চাহিদার জন্য আমাদের ঝুঁকি নিয়ে এগুলো চালাতে হয়। কিন্তু ফেরিগুলোর রেগুলার মেইনটেনেন্স করা হয়। বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর গতকাল ডাকইয়ার্ড থেকে পানিতে নেমেছে।”

পুরনো খবর