জামিন মিললো পরীমনির

মাদক আইনের মামলায় পুলিশ অভিযোগপত্র দাখিল না করা পর্যন্ত চিত্রনায়িকা পরীমনিকে জামিন দিয়েছে আদালত।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 August 2021, 08:47 AM
Updated : 31 August 2021, 10:11 AM

পরীমনির জামিন আবেদনের শুনানি করে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ মঙ্গলবার এই আদেশ দেন বলে রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস পাল জানান।

তিনি বলেন, “আদালত ২০ হাজার টাকা মুচলেকায় জামিন মঞ্জুর করেছেন। পুলিশ প্রতিবেদন হওয়ার পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন জামিন হয়েছে।”

গত ৪ অগাস্ট রাতে ঢাকার বনানীতে পরীমনির বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। পরদিন তার বিরুদ্ধে বনানী থানায় মাদক আইনে এ মামলা করা হয়। জব্দ তালিকায় পরীমনির বাসা থেকে ‘মদ এবং আইস ও এলএসডির মতো মাদকদ্রব্য’ উদ্ধারের কথা বলা হয়।

জামিন শুনানিতে পরীমনির আইনজীবী মো. মজিবুর রহমান বলেন, “পরপর তিনবার সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে পরীমনির কাছ থেকে মাদক বিষয়ে কোন তথ্য উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়েছেন তদন্ত কর্তৃপক্ষ। যেদিন পরীমনিকে গ্রেপ্তার করা হল, আইন অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে আদালতের সামনে সোপর্দ করা হয়নি। কথিত মাদকগুলো আদৌ মাদক কিনা সে সম্পর্কে কোন ল্যাবরেটরি থেকে পরীক্ষা করা হয়নি।

“কথিত উদ্ধার করা মাদক আসলে কোনো মাদক নয়। পরীমনিকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে আটক করার জন্য মাদকের কথা বলা হয়েছে। জেলহাজতে আটকে রাখার জন্য তার অভিনীত চলচ্চিত্রের চুক্তি এখন বাতিলের পথে। তিনি ব্রিটিশবিরোধী অগ্নিযুগের বিপ্লবী কন্যা প্রীতিলতা ছবিটি করছিলেন, যা এখন মুমূর্ষু অবস্থায় রয়েছে।”

আইনজীবী বলেন, “এ মামলার যে অভিযোগ, তার সর্বোচ্চ শাস্তি ৫ বছর। মহানগর দায়রা জজ এ মামলায় জামিন দিতে পারেন, তিনি স্বাধীন।”

পরীমনি অসুস্থ এবং ‘রক্তশূন্যতায় ভুগছেন’ দাবি করে তার আইনজীবী বলেন, “২৬ দিন ধরে কারাগারে রয়েছেন। তিনি একজন নামজাদা অভিনয় শিল্পী। তার পলাতক হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। ন্যায়বিচারের স্বার্থে তাকে জামিন দেওয়া হোক। তিনি জামিন পেলে নিয়মিত বিচারের মুখোমুখি হবেন।”

অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে পিপি আবদুল্লাহ আবু বলেন, “র‌্যাব তার বসার দরজার সামনে প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করে তার ড্রয়িং রুম থেকে বিপুল পরিমাণ মদের খালি বোতল উদ্ধার করেছে। এতে বোঝা যায়, মদ পানের পরে সে বোতলগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছিল।

“এলএসডি, আইস খুব ভয়াবহ মাদক। এগুলো তার বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। সুতরাং তার জামিন নামঞ্জুর করা হোক। তাছাড়া তার হাজতবাসও খুব কম সময়ের।”

দুই পক্ষের বক্তব্য শোনার পর বিচারক তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়ার আগ পর্যন্ত পরীমনিকে জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।

আদালতে পরীমনি, ফাইল ছবি

এ মামলায় তিন দফায় সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে পরীমনিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিআইডি। তৃতীয় দফা রিমান্ড শেষে গত ২১ অগাস্ট পরীমনিকে আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

পরদিন পরীমনির পক্ষে জামিন আবেদন করা হলে মহানগর দায়রা জজ আদালত শুনানির জন্য ১৩ সেপ্টেম্বর দিন রাখেন। পরদিন আরেক আবেদনে ‘দ্রুত শুনানির’ আর্জি জানান পরীমনির আইনজীবী মজিবুর রহমান।

তাতে সাড়া না পেয়ে গত ২৫ অগাস্ট তিনি হাই কোর্টে আবেদন করেন। সেখানে রুল চাওয়ার পাশাপাশি পরীমনির জামিনের আবেদনও করা হয়।

প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ারের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ ২৬ অগাস্ট সরাসরি জামিনের আদেশ না দিয়ে রুল জারি করে।

আদেশের অনুলিপি পাওয়ার দুই দিনের মধ্যে পরীমনির জামিন আবেদনের শুনানি করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।

সেইসঙ্গে ২২ অগাস্ট পরীমনি জামিন অবেদন করার পর শুনানির জন্য ২১ দিন পর তারিখ রেখে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত যে আদেশ দিয়েছে, সেটি কেন বাতিল করা হবে না, তাও জানতে চায় হাই কোর্ট।

১ সেপ্টেম্বর রুল শুনানির তারিখ রেখে এই সময়ের মধ্যে মহানগর দায়রা জজ আদালতকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ আদেশ বিবাদীর কছে পৌঁছানোর জন্য সরকারের আইন কর্মকর্তাদেরও নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট।

শুনানিতে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম সেদিন রাষ্ট্রপক্ষের উদ্দেশে বলেন, “জামিন আবেদনের বিষয়ে নিম্ন আদালত রীতিনীতির বাইরে গিয়ে আদেশ দিয়েছে। ২১ দিন পর আদেশ দেবে, এটা জামিন আবেদনটি খারিজ করার শামিল।”

এরপর গত রোববার সেই রুল শুনানির নির্ধারিত তারিখের আগেই পরীমনির জামিন শুনানির জন্য ৩১ অগাস্ট তারিখ রাখে মহানগর দায়রা জজ আদালত। সেই শুনানি শেষে গ্রেপ্তার হওয়ার ২৬ দিন পর জামিন মিললো পরীমনির।

পুরনো খবর