আবরার হত্যা: শেষ হল সাক্ষ্যগ্রহণ, ৭ সেপ্টেম্বর যুক্তিতর্ক

বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে মামলাটি বিচারের শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 August 2021, 10:48 AM
Updated : 23 August 2021, 10:48 AM

সোমবার এ মামলায় দ্বিতীয় দিনের মতো দুই আসামি ইশতিয়াক আহমেদ মুন্নার পক্ষে একজন এবং মেহেদী হাসান রাসেলের পক্ষে তার বাবাসহ তিনজন সাফাই সাক্ষ্য দেন।

পরে ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান সাফাই সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য ৭ সেপ্টেম্বর তারিখ দেন।

এর আগে গত রোববার আসামি মিফতাউল ইসলাম জিয়ন এবং মেহেদী হাসান রাসেল নিজেদের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দেন।

এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবু আবদুল্লাহ ভূঞা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের বলেন, “সেপ্টেম্বর মাসের শেষে অথবা অক্টোবরের শুরুতে এ মামলার রায় দেওয়া হতে পারে।

আসামিপক্ষে আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু সাক্ষীদের আদালতে সহায়তা দেন। রাষ্ট্রপক্ষে ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর আবু আব্দুল্লাহ ভুঞা সাফাই সাক্ষীদের জেরা করেন।

এদিন কারাগারে থাকা ২২ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়।

২৭ ও ২৮ জুন একই আদালতে এই মামলার সাফাই সাক্ষ্যের দিন ধার্য ছিল। ওই অবস্থায় করোনাভাইরাসের কারণে মামলার বিচারকাজ স্থগিত হয়ে যায়।

সুপ্রিম কোর্টের আদেশে ১১ আগস্ট থেকে নিম্ন আদালতের স্বাভাবিক কর্যক্রম শুরু হলে থমকে থাকা সাফাই সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ২২ ও ২৩ অগাস্ট দিন ধার্য করেন বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান।

মামলাটিতে ৬০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৬ জনের সাক্ষ্য নিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।

২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর চার্জশিটভুক্ত ২৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এই মামলার বিচার শুরু হয়। এরপর ৫ অক্টোবর আবরারের বাবা বরকতউল্লাহর জবানবন্দি গ্রহণের মধ্য দিয়ে এই মামলার সাক্ষ্য শুরু হয়।

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরে বাংলা হলে ছাত্রলীগের কিছু উশৃঙ্খল নেতাকর্মীর হাতে নির্দয় পিটুনির শিকার হয়ে মারা যান বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ। ঘটনার পরদিন নিহতের বাবা বরকতউল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় একটি মামলা করেন।

গত বছর ১৩ নভেম্বর মামলায় ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) লালবাগ জোনাল টিমের পরিদর্শক মো. ওয়াহিদুজ্জামান।

আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার আসামি বুয়েট শিক্ষার্থীদের কারাগার থেকে বৃহস্পতিবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলার শুনানিতে হাজির করা হয়। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

মামলার তদন্ত চলাকালে অভিযুক্ত ২৫ জনের মধ্যে ২১ জনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

তারা হলেন- বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, সহ-সভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার, ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিওন, উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ, উপ-আইন সম্পাদক অমিত সাহা, শাখা ছাত্রলীগ সদস্য মুনতাসির আল জেমি, মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির ও ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, আবরারের রুমমেট মিজানুর রহমান মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুর রহমান, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, এ এস এম নাজমুস সাদাত এবং এস এম মাহমুদ সেতু। পরে হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্তদের সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে ছাত্রলীগ।

গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মিজানুর রহমান মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত ও এস এম মাহমুদ সেতু ছাড়া বাকি সবাই এজাহারভুক্ত আসামি।

মামলার আট আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তারা হলেন- ইফতি মোশাররফ সকাল, মেফতাহুল ইসলাম জিওন, অনিক সরকার, মুজাহিদুর রহমান, মেহেদি হাসান রবিন, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মনিরুজ্জামান মনির ও এএসএম নাজমুস সাদাত।

মোর্শেদ অমত্য ইসলাম নামে পলাতক এক আসামি পরে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান।

তাই এখন পলাতক রয়েছেন আর তিন আসামি। তারা হলেন- মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ। এর মধ্যে মোস্তবা রাফিদের নাম এজাহারে ছিল না।