ডেঙ্গু: ঢাকায় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ গোড়ান-বাসাবো

ঢাকাসহ সারাদেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের মধ্যে রাজধানীতে জরিপ চালিয়ে এইডিস মশার উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে গোড়ান ও বাসাবো এলাকায়।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 August 2021, 12:13 PM
Updated : 22 August 2021, 12:19 PM

কোনো এলাকায় এইডিস মশার ঘনত্ব পরিমাপের একক ব্রুটো ইনডেক্স ২০ এর বেশি হলেই তাকে ঝুঁকিপূর্ণ উপস্থিতি বলা যায়।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসাবো ও গোড়ান এলাকার ব্রুটো ইনডেক্স ৭৩ দশমিক ৩।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এইডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় গত ২৯ জুলাই থেকে ৭ অগাস্ট পর্যন্ত ১০ দিন ধরে জরিপ চলে।

রোববার সংবাদ সম্মেলন করে জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেন জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এইডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির উপ ব্যবস্থাপক ডা. আফসানা আলমগীর খান।

এইডিস মশার লার্ভা

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ১০টি ওয়ার্ডের ১৯টি এলাকার ব্রটো ইনডেক্স ৪০ এর বেশি পাওয়া গেছে। দুই সিটি করপোরেশনের ৫৬টি এলাকায় ব্রটো ইনডেক্স ছিল ২০ বা তার বেশি।

জরিপের তথ্যে দেখা গেছে, ব্রুটো ইনডেক্স ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের এলিফ্যান্ট রোড, সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় ৬৬ দশমিক ৭, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের আরকে মিশন রোড ও টিকাটুলিতে ৫০, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বনশ্রীতে ৪০ এবং ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের মিন্টো রোড ও বেইলি রোডে ৪০।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স ৫৬ দশমিক ৭ পাওয়া গেছে। এই ওয়ার্ডে রয়েছে মগবাজার, নিউ ইস্কাটন এলাকা।

এছাড়া বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা ও নিকুঞ্জ নিয়ে গড়া ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের ব্রুটো ইনডেক্স ৪৮ দশমিক ৪, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কল্যাণপুর ও দারুস সালাম এলাকায় ৪৬ দশমিক ৭, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়ায় ৪৩ দশমিক ৩ এবং মহাখালী ও নিকেতন এলাকা নিয়ে ডিএনসিসির ২০ নম্বর ওয়ার্ডে ৪০।

উত্তর সিটি করপোরেশনের আফতাবনগর ও মেরুল বাড্ডা এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বংশালের ব্রুটো ইনডেক্স শূন্য পাওয়া গেছে জরিপে, অর্থাৎ এসব এলাকায় মশার উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।

নির্মানাধীন ভবনের হাউজ এইডিস মশার প্রজননস্থলে পরিণত হচ্ছে।

রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের ৯৮টি ওয়ার্ডের ১০০টি স্থানে জরিপ চালানো হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তরের ৪১টি এবং দক্ষিণের ৫৯টি।

জরিপের সময় এসব এলাকার ৩ হাজারটি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করা হয়। ২ হাজার ৪১২টি বাড়ি ও স্থাপনায় এইডিস মশা পাওয়া যায়নি। ৫৮৮টি স্থানে এইডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। অর্থাৎ মোট পরিদর্শন করা বাড়ির ১৯ দশমিক ৬০ শতাংশে এইডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে।

জরিপে যতগুলো বাড়ি পরিদর্শন করে মশার উপস্থিতি পাওয়া গেছে শতকরা ১৯ দশমিক ৬০ শতাংশ বাড়ির মধ্যে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা গেছে, গত বছরের চেয়ে এ বছর মশার উপস্থিতি বেশি। এ বছর ডিএসসিসির ৩০টি এবং ডিএনসিসির ২৬টি এলাকার ব্রুটো ইনডেক্স ২০ এর বেশি পাওয়া গেছে।

২০২০ সালের জরিপে ডিএসসিসির ১৭টি এবং ডিএনসিসির ৯টি এলাকার ব্রুটো ইনডেক্স ২০ এর বেশি পাওয়া গিয়েছিল।

এবিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ডা. কবিরুল বাশার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মশার এই ঘনত্ব ঝুঁকিপূর্ণ।

“জরিপে ৫৬টি এলাকায় ব্রুটো ইনডেক্স ২০ বা তার বেশি পাওয়া গেছে। মানে এখানে এইডিস মশাবাহিত রোগ হবে এবং তাই হয়েছে। এসব জায়গা থেকে প্রচুর ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে।”

এইডিস মশার এই বৃদ্ধির পেছনে নগর কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি নাগরিকও দায় আছে বলে মনে করেন তিনি।

“নগরবাসী তার দায় এড়াতে পারেন না। যার যার বাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা তো বাড়ির বাসিন্দাদের দায়িত্ব। যার যার আঙিনা পরিষ্কার রাখলেই এইডিস মশা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।”

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের বিশেষ ওয়ার্ডে মশারির ভেতরে ডেঙ্গুরোগী। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

২৪ ঘণ্টায় ২৯১ ডেঙ্গু রোগী

দেশে গত ২৪ ঘন্টায় ২৯১ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

এ নিয়ে অগাস্ট মাসের প্রথম ২১ দিনে ৫ হাজার ৩৮৩ জন রোগী হাসপাতালে এসেছেন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে, আর আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২৪ জনের।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার ৪১টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ২৫৯ জন এবং ঢাকা মহানগরীর বাইরে ৩২ জন রোগী ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

এর আগেরদিন শনিবার ২৭৮ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল।

গত জুলাইয়ে ২ হাজার ২৮৬ জন রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছিল এবং ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল ১২ জনের।

২০১৯ সালে বাংলাদেশে ডেঙ্গু মারাত্মক আকার ধারণ করায় এক লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল। পরের বছর তা অনেকটা কমে আসায় হাসপাতালগুলো ১ হাজার ৪০৫ জন ডেঙ্গু রোগী পেয়েছিল।

করোনাভাইরাসের মহামারীর মধ্যে চলতি বছরের জুলাই থেকে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করায় উদ্বেগে রয়েছেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা।

বর্তমানে হাসপাতালগুলোতে ভর্তি রয়েছে ১ হাজার ২১৮ জন ডেঙ্গু রোগী, যাদের ১ হাজার ১৩১ জনই ঢাকা মহানগরীর। আর অন্যান্য বিভাগে বর্তমানে ৮৭ জন রোগী ভর্তি রয়েছে।

দেশে এ বছর চিকিৎসা নেওয়া ৮ হাজার ৪১ জন ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৬ হাজার ৭৮৭ জন।