বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের তদন্ত কমিশন নিরপেক্ষ হবে: আইনমন্ত্রী

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্র উদ্ঘাটনে গঠিতব্য তদন্ত কমিশন ‘নিরপেক্ষ হবে’ বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 August 2021, 02:41 PM
Updated : 15 August 2021, 02:47 PM

জাতীয় শোক দিবসে রোববার ঢাকার তেজগাঁও নিবন্ধন অধিদপ্তরে রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সে ‘বঙ্গবন্ধু গ্যালারি’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি একথা জানান বলে সরকারের এক তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার চার বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়।

একদল সেনা কর্মকর্তা এই হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্ব দিলেও এর পেছনে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কথা আওয়ামী লীগ নেতারা বরাবরই বলে আসছেন। এতে জড়িতদের চিহ্নিত করতে তদন্তের দাবিও ওঠে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১২ অগাস্ট আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, দেশে করোনাভাইরাস মহামারীর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলে জাতির পিতার হত্যাকাণ্ড নিয়ে তদন্ত কমিশন গঠন করা হবে।

তা নিয়ে বিএনপি নেতাদের প্রশ্ন তোলার প্রেক্ষাপটে রোববারের সভায় আইনমন্ত্রী বলেন, “দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে এই কমিশন গঠন করা হবে।

“কমিশনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের কুশীলব ও নেপথ্যের ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করা হবে। জিয়াউর রহমানসহ সকলের পরিচয়, সকলের ন্যাক্কারজনক কাজ সাক্ষ্যপ্রমাণসহ জনসম্মুখে উপস্থাপন করা হবে।”

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর তার বিচারের পথও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল খুনিদের দায়মুক্তি দিয়ে।  

১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর ওই অধ্যাদেশ বাতিলের পর জাতির পিতার খুনের বিচারের পথ খোলে।

আনিসুল হক বলেন, “দীর্ঘদিন ইনডেমনিটি নামক কালো আইন দ্বারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের বিচার বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কালো আইন বাতিলের মাধ্যমে তাঁর পিতা-মাতাসহ আপনজনদের হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন করেছেন।”

বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী মহিতুল ইসলাম একটি হত্যামামলা দায়েরের পর ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর ঢাকার তখনকার জেলা ও দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল রায়ে ১৫ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন।

আপিলের রায়ে এই ১৫ জনের মধ্যে তিনজন খালাস পান। যে ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে উচ্চ আদালত, তাদের একজন আজিজ পাশা পলাতক থাকা অবস্থায় দেশের বাইরে মারা যান বলে খবর আসে।

বাকি ১১ জনের মধ্যে সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ, মহিউদ্দিন আহমদ, এ কে বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন বন্দি অবস্থায় আদালতে রিভিউ আবেদন করলে তা খারিজ হয়ে যায়।

এরপর ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি ওই পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর হয় ঢাকার কারাগারে। বাকি ছয়জন পলাতক থেকে যান।

তার প্রায় ১০ বছর পর মাজেদ ধরা পড়লে গত বছরের ১২ এপ্রিল তার ফাঁসি কার্যকর হয়।

আইনমন্ত্রী বলেন, “এই হত্যাকাণ্ডের বিচারে দণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ খুনি বিদেশে পালিয়ে আছেন। তাদের ফিরিয়ে এনে আদালতের রায় কার্যকর করার সবরকম চেষ্টা চালানো হচ্ছে।”

“পলাতক পাঁচ খুনির ফাঁসির রায় কার্যকর না করা পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশের জনগণ ক্ষান্ত হবে না,” বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার, নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক শহীদুল আলম ঝিনুক, আইন ও বিচার বিভাগের যুগ্ম-সচিব বিকাশ কুমার সাহা, সলিসিটর রুনা নাহিদসহ নিবন্ধন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে মন্ত্রী নিবন্ধন অধিদপ্তর প্রাঙ্গণে একটি গাছের চারা রোপণ করেন।