যে তিন খুনির অবস্থান এখনও শনাক্ত হয়নি, তাদের বিষয়ে তথ্য চেয়ে রোববার তিনি বলেন, “তিনজন কোথায় আমরা জানি না। তবে আমরা বুঝতে পারি, তারা এক দেশ থেকে আরেক দেশে চলাচল করছে, ভিন্ন ভিন্ন পাসপোর্ট দিয়ে।
“দেশবাসী ও আমাদের প্রবাসী সবাইকে আমরা অনুরোধ করছি, কোনোভাবে যদি আপনারা এই পলাতকদের খোঁজখবর পান, আমাদের জানান। আপনাদের তথ্য সঠিক হলে অবশ্যই আমরা আপনাদের পুরস্কৃত করব।”
দুই দফায় ছয় জনের ফাঁসি কার্যকর হলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাকি পাঁচ খুনি এখনও রয়েছে অধরা।
তারা হলেন- আব্দুর রশীদ, শরীফুল হক ডালিম, মোসলেম উদ্দিন, রাশেদ চৌধুরী ও এবিএমএইচ নূর চৌধুরী।
এর মধ্যে রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে ও নূর চৌধুরী কানাডায় অবস্থান করছেন। বাকি তিনজনের কোনো অবস্থান চিহ্নিত হয়নি সরকার ও গোয়েন্দাদের কাছে।
মোসলেম উদ্দিন ভারতে আছেন বলে গত বছর পত্রিকায় খবর এলেও তার ’সত্যতা নিশ্চিত’ হতে পারেনি বাংলাদেশ সরকার।
এর বাইরে রশীদ ও ডালিম যে কোথায় আছেন, তার তালাশ এখনও পায়নি দেশের গোয়েন্দারা।
পুলিশ সদরদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য বলছে, তাদের ’অবস্থান শনাক্তকৃত নয়’। ডালিমের ‘সম্ভাব্য অবস্থান’ পাকিস্তান কিংবা লিবিয়া আর রশীদের ‘সম্ভাব্য অবস্থান’ লিবিয়া কিংবা জিম্বাবুয়ে।
জাতির পিতার ৪৬তম শাহাদাতবার্ষিকীতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বঙ্গবন্ধু কর্নারে তার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর পলাতক খুনীদের ফেরানোর বিষয়ে কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, কানাডা মৃত্যুদণ্ড পছন্দ সমর্থন করে না বলে না আত্মস্বীকৃত খুনি নূর সেখানে রয়েছে। আর ‘মিথ্যা তথ্য দিয়ে’ রেসিডেন্সি পারমিট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা খুনি রাশেদের বিষয়টি অ্যাটর্নি জেনারেল ‘যাচাই-বাছাই’ করছেন।
“আমাদের বিশ্বাস, যখন তারা সত্যটি জানতে পারবে, তখন তার নাগরিকত্ব বাতিল করা হবে এবং তাকে বাংলাদেশ ফেরত পাঠানো হবে। আমরা আশাবাদী, রাশেদ চৌধুরী দেশে ফিরে বিচারের মুখোমুখি হবে।”
তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যজনক যে, কানাডা সকল হত্যাকারী ও খুনিদের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠছে। কানাডা মায়াবী ও সুন্দর দেশ এবং আইন ও সুশাসনের প্রতি গুরুত্ব দেয়।
“আমরা চাই তারা খুনিকে ফেরত দিক। কারণ, খুনিতো খুনিই।”
দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রে কাটিয়ে আসা মোমেন বলেন, “আমি দেশবাসীকে বলব এবং প্রবাসীদের বলব, চিহ্নিত যেসব খুনি, তারা যে যেখানেই থাকুক, তাদের বাড়িঘরের সামনে গিয়ে প্রতি মাসে একবার প্রতিবাদ কর্মসূচি করবেন, বলবেন- ’এখানে খুনি থাকে’। তাহলে ওই এলাকার লোকজন জানবে, তার প্রতিবেশী একজন খুনি।
”আমরা আমাদের প্রত্যেকটি মিশনকে জানিয়েছি, তারাও তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, এই পলাতক খুনিদের অবস্থান চিহ্নিত করতে এবং এই খুনিরা যাতে বিচারের মুখোমুখি করতে কঠোর পরিশ্রম করছে। আজকের এই দিনে আমরা অঙ্গীকার করি, এই খুনিদের ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করব।”
খুনিরা অবস্থান পরিবর্তন করলেও তাদেরকে চিহ্নিত করা যাচ্ছে না কেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “৪৬ বছর আগে ঘটনাটি ঘটে, নৃশংস হত্যাকাণ্ডটা হয়। আর এরপর যে সমস্ত সরকার ছিল, জিয়া সরকার, এরশাদ সাহেবের সরকার, খালেদা জিয়ার- সবগুলো সরকার ওদেরকে মদদ দিয়েছে, ওরা যাতে বিভিন্ন দেশে স্থিতিশীল হতে পারে, তার ব্যবস্থা করেছে। অনেকদিন পরে এটার বিচার হয়েছে।
“দেশবাসীও যদি তখন প্রতিবাদ করতো, তাহলে তারা সেসব সরকার এত মদদ দিত না। অতীতে যা হওয়ার হয়েছে, আমরা তাদের ফেরত আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছি।”
এসময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিহত সব শহীদের বিদেহি আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
এরপর জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে মন্ত্রণালয় প্রাঙ্গণে গাছের চারা রোপণ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রসচিব।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শোক দিবসের এসব কর্মসূচিতে মন্ত্রণালয়ের সচিব, অতিরিক্ত সচিব এবং মহাপরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন।