‘কিন্তু তাঁরই জিত হয়েছে’

দিনটি শোকের; এই শোক ইতিহাসের নির্মম এক ঘটনায় জাতির পিতাকে হারানোর; তবে তার দেখানো পথেই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আর তার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে সেই শোককে শক্তিতে পরিণত করার আহ্বানই এল পনেরোই অগাস্টে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 August 2021, 05:57 PM
Updated : 24 Sept 2021, 02:12 PM

গণমানুষের স্বাধীন দেশের আকাঙ্ক্ষা বাস্তব রূপ দিতে যিনি লড়েছেন নিজের জীবনকে বাজি রেখে, আজীবন সংগ্রামী সেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীনতার চার বছরের মধ্যে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট সপরিবারে হত্যা করে সেনাবাহিনীর একদল সদস্য।

এই হত্যাকাণ্ডের লক্ষ্য যে শুধু বঙ্গবন্ধুই ছিলেন না, তা ইতিহাসে পালাবদলে স্পষ্ট হয়ে এসেছে। স্বপ্নের বাংলাদেশের যাত্রার দিক থেকে বিপরীত স্রোতে নিতে এ যে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ছিল, তা বলা হচ্ছে বারবারই।

বঙ্গবন্ধুকে ভুলিয়ে দিতে নানা চেষ্টা হয়েছে, কিন্তু তা যে সফল হয়নি, তা মূর্ত হয়ে উঠেছিল কবি শামসুর রাহমানের কবিতায়। তার কলমে লেখা হয়েছিল-

“তাঁর দেখানো পথেই জানি স্বাধীন হ’ল দেশ,

মুক্তিযুদ্ধে পাকসেনারা নাস্তানাবুদ, শেষ।

ঘরের শত্রু খুনিরা সব প্রাণ কেড়েছে তাঁর

কিন্তু তাঁরই জিত হয়েছে, খুনির হ’ল হার।

কুচক্রিরা ঘোরাক যতই ইতিহাসের চাকা,

কৃষক-মজুর সবার মনে তাঁর ছবিটা আঁকা।”

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বঙ্গবন্ধুর দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার যে চিত্র আজ বিশ্বে প্রশংসিত, কবির এই কবিতা যেন তারই প্রতিধ্বনি।

আর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করে বেদনাবিধূর দিনটিতে এসে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বললেন শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে তার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে সামনে এগিয়ে চলতে।

ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে ফুলে ফুলে ছাওয়া বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি। ফাইল ছবি

দিবসের কর্মসূচি

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেই রোববার নানা আঙ্গিকে, নানা কর্মসূচিতে জাতির পিতাকে স্মরণ করা হবে বাংলাদেশে। তবে জাতীয় এই শোক দিবসে গতবারের মতো এবারও সব হবে কিছুটা সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে।

সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করার মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু হবে।

একই সময় সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করা হবে। বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসেও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে।

সকাল সাড়ে ৬টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী।

বিভিন্ন সংগঠনসহ সব মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য সেখানে যান চলাচল ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনবে ঢাকা মহানগর পুলিশ।

১৫ অগাস্ট নিহত জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের বনানী কবরস্থানেও ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো হবে সকালে।

সকাল ১০টায় গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিতেও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা জানানোর কথা রয়েছে।

নানা আয়োজনে ২০২০ সাল জুড়ে উদযাপিত হয় বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবর্ষ।

দিনটিতে সারা দেশের মসজিদগুলোতে বাদ যোহর বিশেষ মোনাজাত এবং মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ প্রার্থনা হবে।

জাতীয় শোক দিবসে বাংলাদেশ বেতার এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন থাকছে, বেসরকারি টেলিভিশনেও থাকবে বিশেষ অনুষ্ঠান। জাতীয় দৈনিক ও সাময়িকীতে ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে।

জাতীয় শোক দিবসের তাৎপর্য উল্লেখ করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের মাধ্যমে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ সব মোবাইল গ্রাহককে এসএমএস পাঠাবে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিশু একাডেমি, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর জাতীয় শোক দিবস ও বঙ্গবন্ধুর জীবনীভিত্তিক বক্তৃতা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কবিতা পাঠ, রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, চিত্র প্রদর্শনী, হামদ-নাত প্রতিযোগিতা এবং দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে। 

সরকারের পাশাপাশি দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো অগাস্ট মাসজুড়ে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে।

রোববারও সকালে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল টুঙ্গীপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে যাবেন।  দুপুরে অস্বচ্ছল, এতিম ও দুস্থ মানুষদের মধ্যে খাবার বিতরণ করবে আওয়ামী লীগ। বাদ আছর মহিলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু ভবনে হবে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল।

সোমবার আওয়ামী লীগ জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভা করবে। এতে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করবেন দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

‘শোক হোক শক্তি’

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ১৫ অগাস্টের নৃশংস ঘটনা স্মরণ করে বলেন, “বাঙালি জাতির ইতিহাসে ১৫ আগস্ট এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা কেবল দেশের ইতিহাসে নয়, পৃথিবীর ইতিহাসেও বিরল।”

বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবন তুলে ধরে তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা ও মহান স্বাধীনতার রূপকার। বাঙালির অধিকারের প্রশ্নে বঙ্গবন্ধু ছিলেন আপসহীন। ফাঁসির মঞ্চেও তিনি বাংলা ও বাঙালির জয়গান গেয়েছেন।

“বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ আজ অভিন্ন সত্তায় পরিণত হয়েছে। ঘাতকচক্র জাতির পিতাকে হত্যা করলেও তার নীতি ও আদর্শকে মুছে ফেলতে পারেনি। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, ততদিন জাতির পিতার নাম এ দেশের লাখো-কোটি বাঙালির অন্তরে চির অমলিন, অক্ষয় হয়ে থাকবে।”

শোক দিবসে শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, “ঘাতকচক্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যা করলেও তার স্বপ্ন ও আদর্শের মৃত্যু ঘটাতে পারেনি।

“আসুন, আমরা জাতির পিতা হারানোর শোককে শক্তিতে পরিণত করি। তার আত্মত্যাগের মহিমা এবং দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনাদর্শ আমাদের কর্মের মাধ্যমে প্রতিফলিত করে সকলে মিলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলি।”

স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী এবং উন্নয়ন ও গণতন্ত্রবিরোধী চক্রের যে কোনো অপতৎপরতা-ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করার আহ্বানও জানান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “আমরা জাতির পিতার হত্যার বিচারের রায় কার্যকর করেছি। আশা করি, জাতির পিতার হত্যার ষড়যন্ত্রের পেছনে কারা ছিল সেটাও একদিন বের হয়ে আসবে।”

বঙ্গবন্ধুর নিথর দেহ পড়ে ছিল সিঁড়ির মধ্যে।

ভয়াল সেই রাত

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িতে জাতির পিতার বাড়িতে আক্রমণ চালিয়ে তাকে সপরিবারের হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় সে সময় প্রাণে বেঁচে যান।

সেই রাতে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে নিহত হন তার স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, বড় ছেলে শেখ কামাল, মেজ ছেলে শেখ জামাল, ছোট ছেলে শেখ রাসেল, শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল, শেখ জামালের স্ত্রী রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই শেখ নাসের ও পুলিশের বিশেষ শাখার সাব ইন্সপেক্টর সিদ্দিকুর রহমান।

সেই রাতে আরও নিহত হন বঙ্গবন্ধুর বোনের স্বামী আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছেলে আরিফ, মেয়ে বেবী ও শিশুপৌত্র সুকান্ত বাবু, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি, নিকটাত্মীয় শহীদ সেরনিয়াবাত, রিন্টু ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদ।

পরিবারের অন্য সদস্যদের ঢাকার বনানী কবরস্থানে দাফন করা হলেও বঙ্গবন্ধুকে জন্মস্থান গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় দাফন করা হয়।

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যসহ যাদের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল ঘাতকের বুলেট। ছবি: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

শোক দিবসের ধারাবাহিকতা

১৯৭৫ এর পর ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পালিত হয়ে আসছে ১৫ অগাস্ট। ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২০ বছর রাষ্ট্রীয়ভাবে দিনটি পালন করা হয়নি।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো ১৫ অগাস্টকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করা হয়। পরবর্তী পাঁচ বছর যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি পালিত হয়।

২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতায় এসে জাতীয় শোক দিবস বাতিল করে দেয়। একই সঙ্গে জাতীয় পতাকা বিধি সংশোধন করে সরকারিভাবে নির্ধারিত দিন ছাড়া জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার উপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।

২০০২ সাল থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মসূচির মধ্য দিয়েই দিবসটি পালিত হয়।

পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে হাই কোর্টের রায়ে ২০০৮ সাল থেকে দিনটি জাতীয় শোক দিবস হিসাবে পালিত হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধুর যে খুনিরা এখনও ধরা পড়েনি- (বাঁ থেকে ঘড়ির কাঁটার দিকে) আব্দুর রশীদ, শরীফুল হক ডালিম, মোসলেম উদ্দিন, রাশেদ চৌধুরী ও এবিএমএইচ নূর চৌধুরী

বিচার, রইল বাকি পাঁচ

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ইতিহাসের নৃশংসতম এই রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের আত্মস্বীকৃত খুনিদের রক্ষায় ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছিল ক্ষমতায় বসা খন্দকার মোশতাক আহমেদের সরকার। পরবর্তী সরকারগুলোও একই পথ অনুসরণ করে।  

২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ খোলে।

১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর ঢাকার তখনকার জেলা ও দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল ১৫ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন।

তবে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় যাওয়ার পর বিচার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির গতি শ্লথ হয়ে যায়।

পরে আপিলের রায়ে এই ১৫ জনের মধ্যে তিনজন খালাস পান। ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে উচ্চ আদালত।

সেই ১২ জন হচ্ছে- খোন্দকার আবদুর রশীদ, শরীফুল হক ডালিম, এ এস রাশেদ চৌধুরী, রিসালদার মোসলেম উদ্দিন, নূর চৌধুরী, আবদুল মাজেদ, আজিজ পাশা, সৈয়দ ফারুক রহমান, সৈয়দ শাহরিয়ার রশীদ খান, বজলুল হুদা, মহিউদ্দিন আহমেদ, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমদ।

তাদের মধ্যে আসামি আজিজ পাশা ২০০২ সালে পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা যান।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় যাওয়ার পর বিচার শেষে খুনির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি ফাঁসিতে ঝুলিয়ে আসামি সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, মহিউদ্দিন আহমদ (ল্যান্সার), এ কে বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিনের (আর্টিলারি) মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয়।

২০২০ সালের ১২ এপ্রিল ফাঁসি কার্যকর করা হয় আবদুল মাজেদের।

রশিদ, রাশেদ চৌধুরী, ডালিম, নূর চৌধুরী ও মোসলেম উদ্দিনর মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর এখনও বাকি। তাদের এখনও দেশে ফিরিয়ে আনা যায়নি।

বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যের ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করতে একটি কমিশন গঠনের দাবি বহু দিন ধরে রয়েছে। সম্প্রতি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, মহামারীর অবসান হলেই সেই উদ্যোগ নেওয়া হবে।

রমনা রোসকোর্সে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ। ৭ মার্চ, ১৯৭১। ছবি: নাসির আলী মামুন/ফটোজিয়াম

‘ততকাল রবে কীর্তি তোমার’

টুঙ্গীপাড়ায় ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্ম নিয়েছিল যে খোকা, কালে সেই শেখ মুজিবই বাংলার ইতিহাসের মহানায়ক হয়ে ওঠেন।

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন অবসানের পর পূর্ব পাকিস্তানে ছাত্রলীগ গঠনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনায় আসেন। এরপর '৫২-র ভাষা আন্দোলন, '৫৪-তে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, '৬৬-তে ঐতিহাসিক ছয় দফা ঘোষণা এবং '৬৮-তে তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রধান আসামি হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হন।

১৯৬৯-এ ছাত্র-জনতা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ মুজিবকে কারামুক্ত করে তাকে বঙ্গবন্ধু খেতাবে ভূষিত করে।

১৯৭১ সালের উত্তাল মার্চে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) বিপ্লবী কণ্ঠে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার চূড়ান্ত ডাক- 'এবারের সংগ্রাম-আমাদের মুক্তির সংগ্রাম; এবারের সংগ্রাম- আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম' জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে এবং ঐক্যবদ্ধ হতে প্রেরণা জোগায়। তার নেতৃত্বেই দীর্ঘদিনের পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে জন্ম নেয় স্বাধীন বাংলাদেশ।

স্বাধীনতার স্থপতির জন্মশতবার্ষিকীতে ২০২০ সালে বছরজুড়ে নানা আয়োজন ছিল দেশজুড়ে। তবে মহামারীর কারণে অধিকাংশ আয়োজনই সংক্ষিপ্ত করতে হয়েছিল।

তাতে কী: বঙ্গবন্ধু যে মানুষের মনিকোঠায় আছেন, তা তো অন্নদাশঙ্কর রায় স্পষ্ট করেই লিখে গেছেন।

“যতকাল রবে পদ্মা যমুনা/গৌরা মেঘনা বহমান,

ততকাল রবে কীর্তি তোমার, শেখ মুজিবুর রহমান।

দিকে দিকে আজ অশ্রু গঙ্গা/রক্তগঙ্গা বহমান,

তবু নাই ভয় হবে হবে জয়/ জয় মুজিবুর রহমান।”