পদ্মা সেতুতে বার বার ফেরির ধাক্কায় বিব্রত হচ্ছি: নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী

পদ্মা সেতুতে আঘাত লাগলে সেই আঘাত ‘হৃদয়ে লাগে’ মন্তব্য করে  নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্নের ওই সেতুতে বার বার ফেরির ধাক্কায় তারা ‘ব্রিবত’ হচ্ছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকমুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 August 2021, 10:05 AM
Updated : 13 August 2021, 10:05 AM

শুক্রবার সকালে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ফেরিঘাট,  শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুট এবং শরীয়তপুরের মাঝিরকান্দিঘাট পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

শিমুলিয়া ঘাট পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, “পদ্মা সেতুতে ফেরি বার বার ধাক্কা দিচ্ছে। এতে হালকা আঘাত লাগলেও আমরা এটাকে হালকাভাবে দেখছি না। আমরা এতে বিব্রত হচ্ছি।”

তিনি বলেন, “এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আমাদের কিছু নির্দেশনা ছিল। এই নির্দেশনা পালনের ক্ষেত্রে আমরা কিছু উদাসীনতা লক্ষ্য করেছি। এগুলো কেন হচ্ছে, এ বিষয়ে আজ সন্ধ্যায় আমরা উচ্চ পর্যায়ে দায়িত্বশীলদের নিয়ে একটা সভা করব। সেই সভাতেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানা যাবে।”

প্রতিমন্ত্রী পরিদর্শনে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে শুক্রবার সকাল পৌনে ৭টার দিকে সেতুতে ফেরির ধাক্কার সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটে।  মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাট থেকে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটগামী ‘কাকলী’ নামের একটি ফেরি পদ্মা সেতুর ১০ নম্বর পিয়ারে ধাক্কা দেয়।

এর আগে গত ৯ অগাস্ট রাতে ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর পদ্মা সেতুর ১০ নম্বর পিয়ারে ধাক্কা খায়। তাতে ফেরিতে থাকা দুটি প্রাইভেটকার ও একটি ট্রাক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ফেরির পাঁচ যাত্রী আহত হন।

তার আগে গত ২৩ জুলাই মাদারীপুরের বাংলাবাজারঘাট থেকে শিমুলিয়ায় আসার পথে একটি ফেরি সেতুর ১৭ নম্বর পিয়ারে আঘাত করেছিল।

প্রথম দুটি ঘটনায় থানায় জিডি করার পাশাপাশি চালকদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেও চালকদের অসতর্কতা ও অবহেলাকে দায়ী করা হয়।

দুর্ঘটনা এড়াতে পদ্মা সেতুর নিচ দিয়ে ভারি যানবাহন বহনকারী ফেরি চলাচল বন্ধ করতে বলেছিল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তারপরও একই ঘটনা ঘটল।

বার বার এমন ঘটনায় সন্দেহ প্রকাশ করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এসব ‘উদ্দেশ্যমূলক ষড়যন্ত্রের অংশ’ কিনা তা খতিয়ে দেখা দরকার।

আর বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. তাজুল ইসলাম এ ধরনের ঘটনা বন্ধে ফেরিতে সেনাসদস্য মোতায়েনের প্রস্তাব দিয়েছেন। আবার ঘাট সরিয়ে নেওয়ার একটি প্রস্তাবও সরকার বিবেচনা করছে।

শুক্রবার সকালে সেতুর যে পিয়ারে ফেরির ধাক্কা লেগেছে, সে জায়গাটি ঘুরে দেখেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী। পরে মাঝিকান্দিতে ঘাট সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাবিত জায়গাটি পরিদর্শন করেন।

পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পদ্মা সেতু আজকে বাস্তবতার রূপ নিয়েছে এবং উদ্বেধনের অপেক্ষায় আছে। আমরা আশা করছি, আগামী বছর পদ্মা সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।

“কাজেই পদ্মা সেতুর কোনো জায়গায় আঘাত এলে বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে আঘাত লাগে। যদিও এই ধরনের আঘাতে পদ্মা সেতুর ন্যূনতম ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নাই, তারপরও এটা আমাদের হৃদয়ে আঘাত করে। এটা কোনভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।”

ফেরিগুলোর গায়ে রাবার বসানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আজ সন্ধ্যার সভায় পরবর্তী সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।”

মাঝিকান্দি ঘাটের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “পদ্মা সেতু পুরোপুরি চালু হওয়ার পর বাংলাবাজার ঘাটটি আর ব্যবহার করা যাবে না, সেতুর সার্বিক নিরাপত্তার কারণে। সে ক্ষেত্রে মাঝিকান্দি আমরা ফেরি ঘাট হিসেবে ব্যবহার করতে চাই। আজকে সেটার প্রাথমিক পরিদর্শন করেছি। এই বিষয়ে আজকের সন্ধ্যার সভায় বিস্তারিত আলোচনা হবে।”

নৌপরিবহন সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. তাজুল ইসলাম, বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক এবং পদ্মা সেতুর নিরাপত্তার ব্রিগেড প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ কামরুল হাসান এ সময় প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।

আরও পড়ুন