পরীমনি-পিয়াসা সম্পর্কিত অনেকে ভয়ে বাড়িছাড়া: ডিএমপি কমিশনার

চিত্রনায়িকা পরীমনি, মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল- এমন অনেকে ভয়ে এখন বাড়িছাড়া বলে জানিয়েছেন ঢাকার পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 August 2021, 11:46 AM
Updated : 10 August 2021, 11:46 AM

তিনি বলেছেন, তাদের অনেকে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন, কেউ কেউ মন্ত্রীদের কাছেও ফোন করছেন।

সাম্প্রতিক অভিযানে পরীমনি ও পিয়াসাসহ কয়েকজনকে আটকের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা বাড়িতে নানা পার্টি করতেন, সেখানে আমন্ত্রিতদের সঙ্গে ছবি তুলে তা দিয়ে আবার তাদের ‘ব্ল্যাকমেইল’ করতেন।

পরীমনি ও পিয়াসাকে মাদকের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সিআইডি; তাতে অনেকের নাম বেরিয়ে আসার গুঞ্জন চলছে।

মঙ্গলবার নিজের কার্যালয়ে এক অনির্ধারিত প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিএমপি কমিশনার শফিকুল বলেন, “অনেকই ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বাড়িতে থাকাই বন্ধ করে দিয়েছেন। আমাদের কাছে জানতে চাচ্ছে- ‘ভাই আমি কি বাড়িতে থাকব?’ বলেছি, কেন? বলেছেন, ‘আমাকে তো অমুক মিডিয়া থেকে ফোন করা হয়েছে, পরীমনি অথবা পিয়াসা আপনার নাম বলেছে’।

“তাকে বলেছি, ভাই আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগটা কী? কোনো মামলা হয়েছে? তখন তিনি বলেন, ‘কখন কে-কী করে তা তো জানি না’।”

মন্ত্রীদের কাছেও এমন ব্যক্তিরা ফোন করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “একাধিক ব্যক্তি আমাদের কাছে, মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে বলেছে, তার কাছে চাঁদা চাওয়া হচ্ছে। না হলে নিউজ করা হবে। নিউজ করে তাকে সামাজিকভাবে হয়ত হেয় করা যাবে, তবে আইনগতভাবে করা যাবে না।”

পরীমনি-পিয়াসার বিরুদ্ধে ‘ব্ল্যাকমেইল’র অভিযোগ কেউ করেছেন কি না- প্রশ্ন করা হলে শফিকুল বলেন, “কেউ যদি ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়ে থাকেন, তারা কেউ সামনে আসছেন না, মামলা করছেন না। সামাজিক মর্যাদার ভয়ে আসছেন না হয়ত।”

আর মামলা না করলে এক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই বলে জানান তিনি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারে বলে তিনি জানান।

“যদি পরীমনি বলে, আমাকে সিনেমার নায়িকা বানানোর কথা বলে ওমুক ব্যক্তি আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে, সেটি একটি মামলার বিষয় হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী আসামি হতে পারে। অথবা ওই ব্যবসায়ী যদি বলে, পরীমনি আমাকে 'ট্র্যাপ' করে আমার কাছ থেকে দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।”

পরীমনি ও পিয়াসাকে জিজ্ঞাসাবাদে যাদের নাম পাওয়া গেছে, তার তালিকা হচ্ছে বলে খবর ছড়ালেও তা নাকচ করেন ডিএমডি কমিশনার।

তিনি বলেন, “সিআইডি চিফের সাথে কথা বলেছি, উনি পরিষ্কারভাবে বলেছেন, এ ধরনের তালিকা তৈরি করা বা গ্রেপ্তার করার কোনো ভিত্তি নেই। এ ধরনের কোনো কাজ পুলিশের কোনো সংস্থা করছে না।”

এমন তালিকার খবর সাংবাদিক এবং পুলিশ এই দুই পেশার মধ্য থেকে ছড়াচ্ছে বলে মন্তব্য করেন শফিকুল।

আকস্মিক এই ধরনের অভিযানের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অপরাধ বিবেচনার কথা বলেন তিনি।

“পরীমনির ঘটনার পরে একটু নড়েচড় বসলাম। ভাবলাম কী হচ্ছে? তখন দেখলাম কিছু অনৈতিক কাজ হচ্ছে তখন অভিযানে গেছি। একটা জিনিষ স্বীকার করতে হবে যে, বাংলাদেশের আইনে এটা অত্যন্ত ছোট একটা অপরাধ। ধর্মীয় দৃষ্টিতে এটি বড় ধরনের অপরাধ।”

পরীমনি ও পিয়াসাদের বিরুদ্ধে যেসব কথা বলা হচ্ছে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না পেলে আইনগতভাবে তেমন শাস্তির সুযোগ নেই বলে জানান তিনি।

“মনে করেন আমি কোথাও অভিযান করে একজন প্রখ্যাত মডেল এবং সমাজের একজন উঁচু ধরনের মানুষকে আপত্তিকর অবস্থায় ধরলাম। আমি কী করতে পারি, আমি ২৯০ ধারায় একটি প্রসিকিউশন দিতে পারি, ১০০ টাকা জরিমানা। এর বাইরে কিছু করার নেই আইনে। না ধরতে পারলে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।”

পরীমনির মদের লাইসেন্স থাকার বিষয়ে শফিকুল বলেন, “লাইসেন্স থাকলে লাইসেন্সের কতটুকু ক্যাপাসিটি, কতটি মদ নিতে পারে? এগুলো পরীক্ষা করে সে অনুযায়ী মামলায় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

পরীমনি ও পুলিশ কর্মকর্তা গোলাম সাকলায়েনের কথিত সম্পর্ক নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ কমিশনার বলেন, “এটি আইনে অপরাধ নয়, চাকুরীবিধিতে অপরাধ।

“একজন বিসিএস ক্যাডার অফিসার এই ধরনের অনৈতিক সম্পর্কে জড়াবে, এটি কখনই প্রত্যাশিত না। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদের বিরুদ্ধে পরীমনির করা মামলার তদন্তে সাকলায়েন জড়িত ছিলেন না বলেও সাংবাদিকদের জানান শফিকুল।