পরীমনি ও রাজকে ফের রিমান্ডে চায় পুলিশ

মাদক মামলায় চার দিনের রিমান্ড শেষে চিত্রনায়িকা পরীমনি ও প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজসহ চারজনকে ঢাকার হাকিম আদালতে হাজির করা হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকও আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 August 2021, 06:43 AM
Updated : 10 August 2021, 08:17 AM

বনানী থানার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ওই মামলায় তাদের আরও ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি চাওয়া হবে বলে মামলার তদন্ত সংস্থা সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আজাদ রহমান জানিয়েছেন। 

পরীমনি, তার সহযোগী আশরাফুল ইসলাম দীপু, প্রযোজক রাজ এবং তার ব্যবস্থাপক সবুজ আলীকে মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে মালিবাগের সিআইডি কার্যালয় থেকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়।

মহানগর হাকিম দেবব্রত বিশ্বাসের আদালতে তাদের রিমান্ডি শুনানি হতে পারে বলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা জানিয়েছেন।

এছাড়া মোহাম্মদপুর থেকে গ্রেপ্তার মডেল মরিয়ম আক্তার মৌকেও মাদক মামলায় চার দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে নেওয়া হয়েছে। তাকে আরও পাঁচ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আজাদ রহমান। 

প্রযোজক রাজকে বনানী থানার পর্নগ্রাফি আইনের মামলাতেও ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে রেখেছে পুলিশ। মঙ্গলবার সেই আবেদনেরও শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। 

নড়াইলের মেয়ে শামসুন্নাহার স্মৃতি ঢাকার চলচ্চিত্রে পরীমনি নামে অভিষিক্ত হন ২০১৫ সালে। সম্প্রতি এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ তুলে তুমুল আলোচনার জন্ম দেন তিনি।

আর রাজ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান রাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার। প্রযোজকদের সংগঠন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক ও পরিবেশক সমিতির সদস্য রাজ অভিনয়ও করেন।

‘ডিজে পার্টি’ আয়োজনের আড়ালে অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ৩ অগাস্ট ঢাকায় শরিফুল হাসান (মিশু হাসান) ও মাসুদুল ইসলাম ওরফে জিসান নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার পরদিন র্যাব যায় পরীমনির বনানীর বাসায়।

কয়েক ঘণ্টা অভিযান শেষে পরীমনি এবং তার সহযোগী আশরাফুল ইসলাম দীপুকে আটক করে নিয়ে যায় র্যাব। এরপর অভিযান চলে বনানীতে চলচ্চিত্র প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজের বাড়িতে। সেখান থেকে রাজ এবং তার ব্যবস্থাপক সবুজ আলীকে র্যাব আটক করে।

৫ অগাস্ট উত্তরায় র্যাব সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীর মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, পরীমনি ও রাজের বাড়িতে ‘মদ ও মাদকদ্রব্য’ পেয়েছেন তারা। পরীমনির একটি মদের লাইসেন্স পাওয়া গেলেও তার মেয়াদ ছিল না। এছাড়া রাজকে গ্রেপ্তারের সময় কম্পিউটারে 'পার্ন কনটেন্ট' পাওয়া গেছে।

মিশু ও জিসানের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই পরীমনি ও রাজের বাড়িতে অভিযান চালানো হয় বলে কমান্ডার আল মঈন সেদিন জানান।

এরপর চারজনকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়, বনানী থানায় দায়ের করা হয় মাদক আইনে দুটি মামলা। এছাড়া রাজ ও সজুজের বিরুদ্ধে পর্নগ্রাফি আইনে আরেকটি মামলা করা হয়।

র্যাবের করা জব্দ তালিকায় পরীমনির বাসা থেকে ‘বিপুল পরিমাণ মদ এবং আইস ও এলএসডির মতো মাদকদ্রব্য’ উদ্ধারের কথা বলা হয়। আর রাজের ফ্ল্যাট থেকে মদ ও ইয়াবার সঙ্গে ‘সেক্স টয়’ এবং একটি সাউন্ড বক্স জব্দ করার কথা বলা হয়।

৫ অগাস্ট সন্ধ্যায় চারজনকে আদালতে তোলা হলে মাদক আইনের দুই মামলায় চারজনকে চার দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন ঢাকার মহানগর হাকিম মো. মামুনুর রশিদ।

পরীমনির পক্ষে তার আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল করে জামিনের আবেদন জানালেও তা নাকচ করে দেন বিচারক।

পরে মাদক আইনের দুই মামলার তদন্তভার সিআইডির হাতে যায়। তবে পর্নগ্রাফি আইনের মামলা এখনও বনানী থানা পুলিশই তদন্ত করছে। গত ৭ অগাস্ট ওই মামলায় রাজকে ১০ দিনের জন্য হেফাজতে চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছে।

পরীমনি গ্রেপ্তার হওয়ার আগে গত ১ অগাস্ট রাতে বারিধারার ৯ নম্বর রোড এলাকায় মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার বাসায় অভিযান চালায় গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ, ইয়াবা ও সীসাসহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পরে তাকে নিয়ে মোহাম্মদপুরের বাবর রোডে মডেল মরিয়ম আক্তার মৌয়ের বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। সেখান থেকেও মাদক দ্রব্য উদ্ধার করা হয়। পরে মৌকেও গ্রেপ্তার করা হয়।

পরদিন গুলশান থানায় পিয়াসার বিরুদ্ধে এবং মোহাম্মদপুর থানায় মৌয়ের বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। ওই দুই মামলায় তাদের তিন দিন করে রিমান্ডে পাঠায় আদালত।

সেই রিমান্ড শেষে মৌকে গত ৬ অগাস্ট আদালতে হাজির করে মোহাম্মদপুর থানায় মাদক আইনের মামলায় আবারও ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক প্রবীর কুমার ঘোষ। শুনানি শেষে মহানগর হাকিম সত্যব্রত শিকদার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

সেই রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার আবারও তাকে আদালতে হাজির করে  রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। পিয়াসাকেও রিমান্ড শেষে বুধবার আদালতে হাজির করার কথা রয়েছে।

পুরনো খবর