প্রয়াণদিবসে এবারও কবিগুরুকে ভিন্ন আঙ্গিকে স্মরণ

মহাকালের চেনাপথ ধরে আবারও এসেছে বাইশে শ্রাবণ। তবে করোনাভাইরাস মহামারীর প্রেক্ষাপটে ৮০ বছর আগে ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের এই দিনে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রাণপুরুষ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মহাপ্রয়াণ দিবসে থাকছে না বরাবরের মতো আয়োজন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 August 2021, 06:28 PM
Updated : 5 August 2021, 06:28 PM

বাঙালির চিন্তা, মনন ও জীবনের প্রতিটি বাঁকে মিশে থাকা কবিগুরুকে বছরের পর বছর তার প্রয়াণদিবসে বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন ভিন্ন আয়োজনে স্মরণ করলেও দুই বছর ধরে মহামারী পাল্টে দিয়েছে সবকিছু।

এবারও কোভিডের উচ্চ সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় সশরীরে বড় কোনো আয়োজন থাকছে না রবীন্দ্র প্রয়াণদিবসে। তবে শুক্রবার ১৪২৮ বঙ্গাব্দের বাইশে শ্রাবণে ভার্চুয়ালি নানা আয়োজনে কবিগুরুকে স্মরণ করা হবে।

এর মধ্যে শুক্রবার বিকেল ৪টায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮০তম প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষে অনলাইন মাধ্যমে আলাচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বাংলা একাডেমি।

এতে প্রধান অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

অনুষ্ঠানে ‘পূর্ববঙ্গ থেকে বাংলাদেশ: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শেখ মুজিবুর রহমান’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।

বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল ও অধ্যাপক অনীক মাহমুদের।

রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করবেন শিল্পী অদিতি মহসিন এবং রবীন্দ্রনাথের কবিতা থেকে আবৃত্তি পরিবশেন করবেন বাচিকশিল্পী রুবীনা আজাদ।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।

অনুষ্ঠানটি বাংলা একাডেমির ফেইসবুক পেইজে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।

এদিকে রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণ দিবসে মহামারীর কারণে সশরীরের কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে না পারলেও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ‘শ্রাবণের আমন্ত্রণে’ শীর্ষক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রচার করবে ছায়ানট।

শুক্রবার রাত ৯টায় ছায়ানটের ফেইসবুক পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেলে এই অনুষ্ঠান প্রচার করা হবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “মহামারী পরিস্থিতি বিবেচনায় এবারও রবীন্দ্র প্রয়াণদিবসে সশরীরে কোনো আয়োজন সম্ভব হচ্ছে না। তাই আমরা ভার্চুয়ালি কবিগুরুকে স্মরণ করছি। বিশ্বকবি রবি ঠাকুর বাঙালির চিন্তা, মননে চির জাগ্রত থাকুক, সেই প্রত্যাশা।”

বাংলা সাহিত্যের দিকপাল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬১ সালের ৭ মে (১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখ) কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন। বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের অধিকারী বিশ্বকবি মারা যান ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট (১৩৪৮ ২২ শ্রাবণ)।

এশিয়ার প্রথম নোবেল বিজয়ী কবি, সাহিত্যিক, চিত্রকার, সুরকার, গীতিকার, দার্শনিক বহু গুণে গুণান্বিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৯১৩ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন।

তিনিই একমাত্র কবি, যিনি দুটি দেশের জাতীয় সংগীতের রচয়িতা। তার সাহিত্যের আবেদন বিশ্বজনীন। তার গান বাঙালির নিত্যদিনের জীবনচর্চায় মিশে আছে গভীরভাবে।

লেখালেখির পাশাপাশি তিনি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তি নিকেতনে ব্রাহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এর পর থেকে তিনি সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৯১ সাল থেকে পিতার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে ও ওড়িশায় জমিদারিগুলো তদারক শুরু করেন কবি। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদারবাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন।

১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন।

কবি দুই হাজার গান রচনা করেছেন। অধিকাংশ গানে নিজেই সুরারোপ করেন। তার সমগ্র গান ‘গীতবিতান’ গ্রন্থে রয়েছে।

জীবিতকালে তার প্রকাশিত মৌলিক কবিতাগ্রন্থ হচ্ছে ৫২টি, উপন্যাস ১৩টি, ছোটগল্পের বই ৯৫টি, প্রবন্ধ ও গদ্যগ্রন্থ ৩৬টি, নাটকের বই ৩৮টি।

কবির মত্যুর পর ৩৬ খণ্ডে ‘রবীন্দ্র রচনাবলী’ প্রকাশ পায়। এ ছাড়া ১৯ খণ্ডের রয়েছে ‘রবীন্দ্র চিঠিপত্র’।

১৯২৮ থেকে ১৯৩৯ পর্যন্ত কবির আঁকা চিত্রকর্মের সংখ্যা আড়াই হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে ১ হাজার ৫৭৪টি চিত্রকর্ম শান্তি নিকেতনের রবীন্দ্রভবনে সংরক্ষিত আছে।