তথ্য প্রকাশে এনজিওগুলোর অবস্থা ‘উদ্বেগজনক’: টিআইবি

নাগরিকদের কাছে স্বপ্রণোদিত হয়ে তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রায় ৯৫ শতাংশ বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) অবস্থান উদ্বেগজনক অবস্থায় রয়েছে বলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক জরিপে উঠে এসেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 August 2021, 11:09 AM
Updated : 5 August 2021, 11:09 AM

তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ‘স্বপ্রণোদিত তথ্য প্রকাশ চর্চার মূল্যায়ন’ জরিপ প্রতিবেদনটি বৃহস্পতিবার প্রকাশ করেছে দুর্নীতি পর্যবেক্ষণকারী সংস্থাটি।

ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির জ্যেষ্ঠ ফেলো (রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি) শাহজাদা এম আকরাম বলেন, স্বপ্রণোদিত হয়ে তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে ৯৪ দশমিক ৯ শতাংশ এনজিওর স্কোর উদ্বেগজনক, যেখানে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ সরকারি প্রতিষ্ঠানের স্কোর উদ্বেগজনক।

অন্যদিকে জরিপের আওতাভুক্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রায় ৬৭ শতাংশ সন্তোষজনক স্কোর পেলেও কোনো এনজিও সন্তোষজনক স্কোর পায়নি।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য প্রবেশগম্যতা সন্তোষজনক হলেও ব্যাপ্তি ও উপযোগিতায় সন্তোষজনক নয়। ৬৭ শতাংশের বেশি স্কোর পেয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তুলনামূলকভাবে ভালো করলেও আরো উন্নতি সম্ভব।

“অন্যদিকে এনজিওর ক্ষেত্রে কোনো প্রতিষ্ঠানই সন্তোষজনক স্কোর পায়নি। প্রায় ৯৫ শতাংশ এনজিওর স্কোর হতাশাজনক। কেন তারা পিছিয়ে রয়েছে? বিষয়টি খুব বিব্রতকর।”

জরিপে সরকারি ১৫৩টি প্রতিষ্ঠান ও ৩৯টি এনজিওসহ মোট ১৯২টি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের তথ্য ও নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সে হিসেবে ৭৬ শতাংশ সরকারি প্রতিষ্ঠান, ২৪ শতাংশ এনজিও।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রায় ৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠানেরই ওয়েবসাইট পাওয়া যায়নি।

স্কোরের ভিত্তিতে প্রথম দশে অবস্থান করা সরকারি ৬৯টি প্রতিষ্ঠানের প্রাপ্ত স্কোর ৩৩ থেকে ৪২ এর মধ্যে ছিল। ৪২ স্কোর পেয়ে যুগ্মভাবে প্রথম অবস্থানে রয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। আর সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সর্বনিম্ন ৪ স্কোর পেয়েছে আন্তঃবাহিনী নির্বাচন পর্ষদ।

এছাড়া উল্লেখযোগ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের স্কোরে মধ্যে রয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পেয়েছে ২০, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ১৫, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ পেয়েছে ৩২, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা ২০, ডাক ও টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের স্কোর ৩১, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২৬, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২৯, তথ্য কমিশন ৩৫, নির্বাচন কমিশন ১৩ ও পরিকল্পনা কমিশন ১৬ স্কোর পেয়েছে।

অন্যদিকে এনজিওদের মধ্যে প্রথম দশে অবস্থানে রয়েছে ১৯টি প্রতিষ্ঠান। যাদের প্রাপ্ত স্কোর ৭ থেকে ২২ এর মধ্যে। সর্বোচ্চ স্কোর ২২ (৪৪ শতাংশ) পেয়েছে কোস্টাল অ্যাসোসিয়েশন ফর সোশাল ট্রান্সফরমেশন।

২০২০ সালের অগাস্ট থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারির মধ্যে তথ্য-উপাত্ত জরিপের আমলে নেওয়া হয়েছে।

জরিপের অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে নির্ধারিত তিনটি ক্ষেত্রের মোট ২৫টি নির্দেশককে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে তথ্যের ব্যাপ্তিতে ১৯টি, প্রবেশগম্যতায় ৪টি ও উপযোগিতায় ২টি নির্দেশক।

জরিপে উদ্বেগজনক গ্রেডিংপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে গড় স্কোর ধরা হয়েছে ৮। অপর্যাপ্ত গ্রেডিংপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে গড় স্কোর ২৭ এবং সন্তোষজনক গ্রেডিংপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে গড় স্কোর ধরা হয়েছে ৩৭।

প্রতিবেদনে বলা হয়, তথ্য অধিকার আইন সম্পর্কে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা প্রায়ই পরিপূর্ণ অবগত নন। ফলে স্বপ্রণোদিত তথ্য প্রকাশ, প্রচারসহ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে জটিলতার সৃষ্টি হয়।

আইনি বাধ্যবাধকতা থাকার পরেও মানবাধিকার লংঘন ও দুর্নীতি সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশ ও প্রদান করার ক্ষেত্রে গোপনীয়তার সংস্কৃতি অব্যাহত রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে তার নিজস্ব পদের দায়িত্ব বেশি থাকায় ওয়েবসাইটের গুণগত মান নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেওয়া বা সে বিষয়ে চিন্তা করার অবকাশ পান না।

“সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়েবসাইটে বিধিমালা অনুযায়ী অনেক তথ্য প্রকাশিত হলেও তথ্যের হালনাগাদকরণ এবং ধরন অনুযায়ী তথ্যের বিন্যাস, বিস্তৃতি ও সহজলভ্য তথ্যপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে এখনো ঘাটতি বিদ্যমান। অন্যদিকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়েবসাইটে বিধিমালা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় তথ্যের ঘাটতি লক্ষণীয়। এছাড়া ওয়েবসাইটে তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রয়োজনীয় ধারণার ঘাটতিও লক্ষণীয়।”

স্বপ্রণোদিত তথ্য প্রকাশ ও প্রচার এখনো প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে না মন্তব্য করে প্রতিবেদনে বলা হয়, “স্বপ্রণোদিত তথ্য প্রকাশ ও প্রচারকে কার্যকর করার ক্ষেত্রে সরকার, নাগরিক সমাজ, বেসরকারি সংগঠন এবং গণমাধ্যমের সমন্বিত প্রচারণাসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগের ঘাটতি লক্ষণীয়। আইন ও বিভিন্ন বিধিমালার মাধ্যমে স্বপ্রণোদিত তথ্য প্রকাশকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করা হলেও তার চর্চা আরও কার্যকর ও জনমুখী করার সুযোগ রয়েছে।”

টিআইবির উপদেষ্টা (নির্বাহী ব্যবস্থাপনা) অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের ও পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান এ সময় অনলাইনে যুক্ত ছিলেন।