ঢাকার রাস্তায় বাস ছাড়া সবই চলছে; যানজটে ভোগান্তি

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকানোর লকডাউনে রাজধানীর সড়কগুলোতে যান চলাচল বেড়ে রাস্তার মোড় কিংবা ক্রসিংগুলোতে দীর্ঘ যানজট দেখা যাচ্ছে। 

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 August 2021, 09:57 AM
Updated : 5 August 2021, 09:57 AM

বৃহস্পতিবার লকডাউনের চতুর্দশ দিনে মিরপুরের পীরেরবাগ ছাপড়া মসজিদ থেকে মোটরসাইকেলে করে মহাখালীর তিতুমীর কলেজে পৌঁছাতে সময় লেগেছে প্রায় এক ঘণ্টা।

যদিও ঈদের পর থেকে শুরু হওয়া ‘কঠোর লকডাউনের’ শুরুর দিকে ১২ কিলোমিটারের এই আঁকাবাঁকা সড়ক ২০ থেকে ২৫ মিনিটেই পাড়ি দেওয়া যেত।

লকডাউনের মধ্যেও এখন সময় বেশি লাগার কারণ হল আগারগাঁও, রেডিও স্টেশন, বিজয় স্মরণির দুই প্রান্ত, তেজগাঁও নাবিস্কো এবং মহাখালী ক্রসিংয়ের দীর্ঘ জট।

রাজধানীর সড়কগুলোতে যানবাহনের চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখা মিলছে কিছু অটোরিকশাও। ব্যস্ত সড়কের মোড়ে মোড়ে যানজটের পাশাপাশি ফুটপাথেও বেড়েছে মানুষের চলাচল।

মালিবাগ, কাকরাইল, রামপুরা, ফকিরেরপুল ঘুরে দেখা গেল সব সড়কেই ব্যস্ততা। এসব এলাকায় যানবাহন নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশকে প্রচণ্ড গরমে ছাতা হাতে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়।

কাকরাইলের কাছে প্রাইভেট কার চালক শামীম বলেন, “গুলশান থেকে এসেছি, যাব মতিঝিল। পাঁচটা মোড় পার হয়ে কাকরাইল মোড়। সব জায়গায় যানজট দেখলাম। রাস্তায় নামলে লকডাউন নেই বলেই মনে হয়।”

লকডাউনে শুরুর দিকে মানুষ বাইরে কম বের হলেও এখন বিভিন্ন প্রয়োজনে রাস্তায় নামছেন। তল্লাশি চৌকিগুলোতে পুলিশের তৎপরতাও প্রায় থেমে গেছে।

রাজধানীর আগারগাঁও এবং মিরপুরের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা ষাট ফুট সড়কে লকডাউন একটি তল্লাশি চৌকি দেখা গেছে। যেখানে ১০-১২ জন পুলিশ সদস্য সড়কের পাশে ফুটপাথে অবস্থান করছিলেন।

একজন পুলিশ সদস্য তল্লাশি চৌকির ব্যারিকেডের আড়ালে দাঁড়িয়ে সবাইকে মাস্ক পরার অনুরোধ করছিলেন। দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তা উপপরিদর্শক রিয়াজুলের কাছে প্রশ্ন ছিল- তল্লাশি কী থেমে গেছে?

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাস্তায় মানুষের উপস্থিতি বেড়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে জনে জনে ধরে তল্লাশি করা বা বাইরে বের হওয়ার কারণ জানতে চাওয়া কঠিন। তবে সবাইকে মাস্ক পরার জন্য সতর্ক করছি।”

রামপুরা, মালিবাগ, মৌচাক, শান্তিনগর সড়কে যানবাহনের চাপ আগের মতই দেখা গেছে। তবে প্রাইভেট কারের সংখ্যা বাড়ছে।

এসব এলাকার সড়কে পুলিশের চেকপোস্টগুলো থাকলেও তেমন কড়াকড়ি দেখা যায়নি। কাকরাইল চেকপোস্টের সামনে পুলিশের দেওয়া নির্দেশিত পথে প্রাইভেট কার, পণ্যবাহী গাড়ি বাঁধাহীনভাবে চলাচল করেছে।

খোকন নামে এক রিকশা চালক বললেন, “পুলিশের চেকপোস্টে আগের মত প্রাইভেট কারকে থামাইয়া রাখে না। লকডাউন শেষের দিকে বইলা কড়াকাড়ি থাইমা গেছে।”

লকডাউনে রাজধানীর সড়কে রিকশা, ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, ব্যক্তিগত গাড়ির পরিচয়ে ভাড়ায় চালিত প্রাইভেটকার চলাচল করছে, ভাড়া নিয়েও চলছে নৈরাজ্য।

সকালে আগারগাঁও রেডিও কার্যালয়ের সামনে কালো গ্লাসের একটি সৌখিন এসইউভি ঘিরে ৪-৫ জন মানুষের জটলা দেখা যায়। জনপ্রতি ২০০ টাকা ভাড়া গুণে ওই গাড়িতে করে উত্তরা যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন তারা।

যাত্রীদের মধ্যে ভাগাভাগি করে এ ধরনের গাড়ি কিংবা প্রাইভেট কারে যাওয়া চেষ্টাই বেশি দেখা গেল। কারণ এই লকডাউনের মধ্যে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে চড়ে উত্তরা যেতে গুনতে হবে কমপক্ষে তিনশ টাকা।

সড়ক আর অলিগলিতে মানুষের ব্যস্ততার সঙ্গে বাজারেও বাড়ছে ভিড়। শান্তিনগর বাজার, ফকিরেরপুলে বাজারে লোকজনের উপস্থিতি গত কয়েকদিনের তুলনায় বেড়েছে। কাঁচাবাজারগুলো এখন পুরোপুরি খুলতে শুরু করেছে।

এর আগে সংক্রমণ ঠেকাতে বাজারের সামনে খোলা রাস্তায় তরিতরকারি বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু যানবাহন বেড়ে যাওয়ায় ভাসমান বাজারের কারণে যানজটের ভোগান্তি হওয়ায় আবারও বাজারের ভেতরে ভিড় বাড়ছে।

রাজারবাগের বাসিন্দা ফরিদা ইয়াসমীন বলেন, “যেভাবে গাড়ি-ঘোড়া রাস্তায় দেখা যাচ্ছে তাতে তো রাস্তার পাশে বাজার করা একটু রিস্কি। সেজন্য ভেতরেই বাজার করছি। গত তিনদিন আগেও রাস্তার পাশে বাজার করেছিলাম।”

লকডাউনে এখনও শপিংমল আর মার্কেটগুলো পুরো বন্ধ আছে। রামপুরার বাসিন্দা নেছার উদ্দিন বলেন, “কর্ণফুলী শপিংমলে আমার একটা দোকান আছে। ৪ জন স্টাফ। আজকে ১৫ দিন বন্ধ। মাসের অর্ধেক চলে গেছে।

“আরও ৫ দিন পর দোকান খোলা যাবে। কীভাবে ব্যবসা চালাব বুঝতে পারছি না। লকডাউন আমাদের মতো ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের গলা টিপে ধরেছে। সরকারের উচিত এভাবে লকডাউনের বিকল্প কিছু চিন্তা করা।”

কর্ণফুলী শপিং মলের মতো টুইনটাওয়ার, মৌচাকসহ এই এলাকার বড় বড় শপিংমলগুলোতে অনেক  ছোট ছোট দোকানদার রয়েছেন যারা দুশ্চিন্তায়ে রয়েছেন।

মৌচাকের কাছে পান বিক্রেতা সোহরাব বলেন, “মৌচাকের ভেতরে ছোট ছোট দোকানদাররা প্রতিদিনই এখানে এসে ঘুরাফেরা করতে দেখা যায়। তারা খুব কষ্টে আছেন স্যার।”