হেলেনা জাহাঙ্গীর চার মামলায় ১৪ দিনের রিমান্ডে

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে গুলশান থানার দুই মামলায় ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আরও ছয় দিনের হেফাজতে পেয়েছে পুলিশ।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 August 2021, 10:25 AM
Updated : 3 August 2021, 12:27 PM

মঙ্গলবার তদন্ত কর্মকর্তা শেখ শাহানুর রহমান তাকে দুই মামলায় যথাক্রমে ১০ দিনের ও পাঁচ দিনের হেফাজতে নিতে আবেদন করেন।

শুনানি শেষে বিকেলে ঢাকার মহানগর হাকিম নিভানা খায়ের জেসী দুই মামলায় তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন বলে আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা এসআই মো. আলমগীর জানান।

এর আগে পল্লবী থানায় চাঁদাবাজির অভিযোগ ও টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেলেনাকে চার দিন করে মোট আট দিনের হেফাজতে নেওয়ার আদেশ দেন ঢাকার মহানগর হাকিম শাহিনুর রহমান।

গুলশান থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মঙ্গলবার আদালতে হাজির করা হয়েছিল।

ওই মামলায় তাকে আবার ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে চেয়েছিল পুলিশ। পাশাপাশি মাদকের মামলায় শনিবার জমা দেওয়া আবেদনটিতে পাঁচ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়।

আসামি পক্ষে আইনজীবী মো. শফিকুল ইসলাম রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন।

আদালতের শুনানিতে তিনি বলেন, সাজানো ঘটনায় আসামিকে বারবার হয়রানির চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি অসুস্থ মানুষ, তার ডায়াবেটিস উচ্চ মাত্রায় রয়েছে।

“তাই তার রিমান্ড আবেদন বাতিল করে জামিনের আদেশ প্রার্থনা করছি।”

আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌসুঁলি আব্দুল্লাহ আবু ও অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল রিমান্ডের আবেদন ও জামিনের বিরোধিতা করেন।

সোমবার বিকালে পল্লবী থানায় হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা করেন ভোলার আব্দুর রহমান তুহিন নামের এক ব্যক্তি।

এজাহারে বলা হয়, হেলেনার মালিকানাধীন জয়যাত্রা টিভিতে ভোলা প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার নামে আব্দুর রহমান তুহিনের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নেয় কর্তৃপক্ষ।

ওই মামলায় আইপি টিভি জয়যাত্রার ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলেনা ছাড়াও অন্যতম সহযোগী হাজেরা খাতুন, জয়যাত্রা টিভির প্রধান সম্পাদক কামরুজ্জামান আরিফ, স্টাফ রিপোর্টার সালাউদ্দিন ও মাহফুজের নামও রয়েছে।

মামলার অভিযোগ তুলে ধরে পল্লবী থানার ওসি পারভেজ ইসলাম বলেন, “প্রায় ৩২ মাস ধরে প্রতি মাসে ৩ হাজার টাকা করে তুহিনের কাছ থেকে চাঁদা নিত তারা এবং এই টাকা না দিলে তাকে জয়যাত্রার সাংবাদিকতা থেকে বাদ দেওয়ার কথা বলা হত।”

গত বৃহস্পতিবার গুলশানের বাসা গ্রেপ্তার হওয়া হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে পল্লবী ও গুলশান থানায় মোট চারটি মামলা হয়েছে।

রাজধানীর গুলশানের বাসায় বৃহস্পতিবার প্রায় চার ঘণ্টা অভিযানের পর র‌্যাব গ্রেপ্তার করে সম্প্রতি আলোচনায় আসা ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীরকে।

হেলেনা জাহাঙ্গীর আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপকমিটিতে সদস্য ছিলেন। কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগেরও উপদেষ্টা পরিষদে ছিলেন তিনি।

‘বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ নামের একটি ‘ভূইফোঁড়’ সংগঠনের সভাপতি হওয়ার খবর চাউর হলে সম্প্রতি তাকে কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়।

শুক্রবার রাতে এফবিসিসিআইর পরিচালক হেলেনার বিরুদ্ধে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনে গুলশান থানায় দ্বিতীয় মামলা দায়েরের আগে সন্ধ্যায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তাকে তিন দিনের রিমান্ডে পাঠায় আদালত।

পাশাপাশি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ১২ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করে দেয় আদালত।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাতে গুলশান-২ এর ৩৬ নম্বর রোডে অবস্থিত হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাসায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেন র‌্যাব সদস্যরা।

অভিযান শেষে র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু বলেন, “নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাসায় আমরা অভিযান চালিয়েছি। তার বাসা থেকে আমরা বিদেশি মদ, অবৈধ ওয়াকিটকি সেট, ক্যাসিনো সরঞ্জাম, বিদেশি মুদ্রা, চাকু ও হরিণের চামড়া জব্দ করেছি।”