লকডাউনের একাদশ দিনে ঢিলেঢালা ভাব

করোনাভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে কঠোর লকডাউনের একাদশ দিনে রাজধানীতে বিধিনিষেধ অনেকটা শিথিল হয়ে পড়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 August 2021, 07:58 AM
Updated : 2 August 2021, 07:58 AM

আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর তৎপরতা কমে আসায় মানুষের চলাচল আগের তুলনায় বেড়েছে। যানবাহন বাড়ায় কোনো কোনো সড়কে যানজটেও পড়ছেন নগরবাসী।

অলিগলিতে প্রায় সবধরনেরর দোকানই খুলেছে, ফলে মানুষের আনাগোনাও বেড়েছে। রয়ে গেছে স্বাস্থ্যবিধি মানায় উদাসীনতা।

সোমবার সকাল থেকেই রাজধানীর রামপুরা, কাকরাইল, আজিমপুর, নিউ মার্কেট, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি এলাকায় মানুষের ব্যস্ততা আগের চেয়ে বেশি দেখা গেছে।

মালিবাগ, শান্তিনগর, বিজয়নগর, ফকিরাপুল এলাকার প্রধান সড়কগুলোতে ব্যক্তিগত গাড়ির চলাচল বেড়েছে।

রামপুরা থেকে যাত্রী নিয়ে বিজয়নগরে আসা রিকশাচালক মনু মিয়া জানালেন, কাকরাইল ও শান্তিনগর মোড়ে যানজটে পড়তে হয়েছে তাকে।

“এখন খ্যাপ মারতে রাস্তায় অনেক সময় লাগতেছে। আগে এত সময় লাগেনি। লকডাউন তো শেষ হইতাছে, হেইল লাইগা গাড়ি-ঘোড়া বাইর হইতে শুরু করছে। এতদিন ভালোই ছিলাম, যাত্রী কম হইলেও যানজট ছিল না। আবার শুরু হইব যানজট।”

মতিঝিলে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত রিফাত উল্লাহ বলেন, গত কয়েকদিনের তুলনায় সোমবার রাস্তায় প্রাইভেট কার বেড়েছে।

“মতিঝিলের অনেক অফিসে কাজ-কর্ম শুরু করেছে। সেজন্য এতো প্রাইভেট কার।”

রাস্তায় যানবাহনের বাড়ার পাশাপাশি ফুটপাটেও মানুষের চলাচল বেশি দেখা গেছে। ব্যাংক, কর্মস্থল ও বাজারে যাওয়ার কথা বলছেন পথচারীরা।

বিজয়নগর মোড়ের চশমার দোকানের সেলসম্যান আবুল হোসেন বলেন, “গতকাল না হয় পোশাক শ্রমিকদের জন্য দুপুর ১২টা পর্যন্ত গণপরিবহন শিথিল ছিল, আজকে তো লকডাউন। তাহলে কেন তারা রাস্তায় নেমেছে। এরকম হলে সংক্রমণ তো বাড়তেই থাকবে। আমাদের সামনে বিপদ আছে, ঢাকার মানুষ বুঝতেছে না।”

রোববার কারখানা খোলার পর রাস্তায় যানবাহন ও মানুষের চলাচলে যে শিথিলতা ছিল, সোমবারও একই চিত্র দেখা গেল মিরপুরে। সেখানে পুলিশের তল্লাশি চৌকি কমিয়ে আনা হয়েছে। এই সুযোগে দু-চারটি অটোরিকশাও চলতে দেখা গেছে।

বিভিন্ন প্রয়োজনে বাইরে বের হওয়া লোকজন বিধিনিষেধ ভেঙে হোটেল-রেস্তোরাঁয় বসে সকালের নাস্তাও খেতে পেরেছেন।

সকাল ১০টার দিকে মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বর এলাকায় দেখা গেল, রিকশা, মিনিবাস, ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চলছে। মানুষের উপস্থিতি ও চলাচলও আগের তুলনায় বেড়েছে।

মোবারক নামের এক মোটরসাইকেলচালক বললেন, মিরপুর এলাকায় শিথিল হলেও পল্টন ও উত্তরার দিকে যেতে পুলিশের প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে।

“যখন তখন ধরে ২/৩ হাজার টাকার মামলা দিয়ে দিচ্ছে। এত জরিমানা দিয়ে তো আমরা পেট চালাতে পারছি না।”

সকাল ১০টার দিকে কচুক্ষেত এলাকা থেকে প্রজাপতি পরিবহনের একটি গাড়ি মিরপুর ১০ নম্বর চত্বরে এলে সেটি থামায় ট্রাফিক পুলিশ। কাগজপত্র জব্দ করে কিছুক্ষণের জন্য থামিয়ে রাখা হয় গাড়িটি।

ট্রাফিক পুলিশের মিরপুর অঞ্চলের একজন উপকমিশনার বললেন, পোশাক শ্রমিকদের জন্য রোববার লকডাউন কিছুটা শিথিল করা হয়েছিল, তার প্রভাব সোমবারও কিছুটা রয়ে গেছে।

“এদিকে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দল এসেছে। তাই রাস্তার উপর থেকে জিকজ্যাক ব্যারিকেডগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে লকডাউন শিথিল হওয়ার কোনো নির্দেশনা তো আসেনি। আগে যেভাবে তল্লাশি করা হত, এখনো সেভাবেই করা হচ্ছে।”

কালশী সড়কেও ব্যক্তিগত গাড়ির চলাচল ছিল আগের চেয়ে বেশি। কালশী মোড়ে মোটরসাইকেলের পাশাপাশি ভাড়ায় যাত্রী নিতে দেখা গেছে প্রাইভেটকার চালকদের।

পোশাক কারখানা চালু যাওয়ায় এ এলাকায় সকাল থেকেই মানুষের আনাগোনা বেড়েছে। খাবার হোটেল ও চায়ের দোকানে লোকজনকে বসে খেতে দেখা গেছে।

কালাপানি এলাকার একটি গার্মেন্টস কারখানার কর্মী সাবিনা আক্তার বললেন, “বাঁচতে হলে তো কাজে যেতে হবেই। আমাদের তো অন্য কোনো রাস্তা নাই।”

মিরপুরের রূপনগর, পল্লবী, আরামবাগ এলাকায় প্রায় সব ধরনের দোকানপাট খুলতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা।

নিত্যপণ্যের দোকান ও হোটেল রেস্তোরাঁ ছাড়া অন্যান্য দোকানের শাটারের এক অংশ খোলা রেখে বেচাকেনা চলছে।

পুলিশের গাড়ি এলে দোকান বন্ধ করে দিচ্ছেন লাইব্রেরি, বৈদ্যুতিক পণ্যের দোকান এবং হার্ডওয়্যারের দোকানিরা। পুলিশে চলে গেলে আবার দোকান খুলছেন।

এসব এলাকার প্রধান সড়কে নানা অজুহাতে লোকজন ঘোরাঘুরি করছে, তাদের কেউ কেউ মাস্কও পড়েননি।

সাগর নামের একজন শিক্ষার্থী বললো, “কলেজ বন্ধ, যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। বল কিনতে এসেছি। টেনিস বলে টেপ পেঁচিয়ে ক্রিকেট খেলব।”

সরকার শিল্প কারখানা খুলে দিতে পারলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন খুলে দিচ্ছে না, জানতে চাইল সাগর।

রূপনগর মোড়ের কাছে ‘বুক পয়েন্ট’ নামের একটি লাইব্রেরির মালিক মো. আজিম বললেন, “এতদিন দোকান বন্ধ রাখলে আমরা কীভাবে চলব? আধ পেটা খেয়ে থাকলেও মাস শেষে তো দোকান ভাড়ার ১৫ হাজার টাকা দিতে হবে। অন্য ব্যবসায়ীরা তো এক শাটার খুলে বেচাকেনা করছেন, আমিও চেষ্টা করছি।”

ধানমণ্ডি, মোহাম্মদপুর, সাত মসজিদ রোড এলাকায়ও রিকশা ও ব্যক্তিগত যানবাহন বেড়েছে। অলিগলিতে দোকানপাট খোলা রয়েছে।

মজাহার উদ্দিন নামের একজন রিকশাচালক জানালেন, বাংলামোটর, মগবাজার, ধানমন্ডি, লালমাটিয়ায় এলাকা ঘুরে তিনি সব জায়গাতেই গাড়ি চলতে দেখেছেন, দোকানপাটও বেশিরভাগ খোলা। রাস্তাঘাটে মানুষ কম থাকলেও ভাড়া তুলনামূলকভাবে বেশি পাওয়ায় সকাল থেকে তার ‘ভালোই’ আয় হয়েছে।

গ্রিনরোড এলাকায় সড়কের পাশেই বসেছে ফল ও সবজির দোকান, কিনতে ভিড় করছে মানুষ। সেখানে অনেকেই মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বললেন, “যতই দিন যাচ্ছে কেউ লকডাউন মানতে চাইছে না। সবার মধ্যেই একটা ঢিলেঢালা ভাব।” 

পুরান ঢাকার আজিমপুর, পলাশী এলাকার অলিগলি ও প্রধান সড়কে মানুষের চলাচল ও গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে। শাহবাগ মোড়েও দেখা গেল অনেক গাড়ি।

নিত্যপণ্যের দোকান ছাড়াও অন্যান্য কিছু কিছু দোকান খোলা দেখা গেছে এসব এলাকায়। অলিগলি, মুদি, কাঁচাবাজার আর মাছের দোকানেও মানুষের আনাগোনা বেড়েছে।