কোভিড মোকাবিলায় সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ

সারাদেশে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস মহামারীর বিস্তার ঠেকাতে একটি উপজেলায় সমীক্ষা চালিয়ে কী ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে তা ঠিক করে, সেই মডেল বাস্তবায়নে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্টজনরা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 August 2021, 01:36 PM
Updated : 1 August 2021, 01:36 PM

একইসঙ্গে জনসম্পৃক্ততা বাড়িয়ে এবং সব পক্ষকে এই উদ্যোগে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে মহামারী নিয়ন্ত্রণ সম্ভব বলে মনে করেন তারা।

রোববার এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ও হাঙ্গার প্রজেক্ট আয়োজিত ‘করোনা মোকাবিলায় স্থানীয় জনসম্পৃক্ত উদ্যোগ’ শীর্ষক একটি ভার্চুয়াল সংলাপে বক্তারা সরকারের কাছে এই পরামর্শ রাখেন।

বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের সমন্বয়ক ও ব্র্যাকের সাবেক ভাইস চেয়ারপারসন ড. মোস্তাক রাজা চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। বিশেষ অতিথি ছিলেন একই কমিটির সদস্য সাহিদুজ্জামান।

সংলাপে সম্মানিত অতিথি ছিলেন সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান ও সংস্থার সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক রওনক জাহান।

সিপিডির পরিচালক অভ্র ভট্টাচার্য্য এর সঞ্চালনায় এতে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার অনেক কর্মকর্তা যুক্ত হয়ে মতামত তুলে ধরেন।

অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, “এই রকম মহামারী মোকাবিলায় আমাদের আগের কোনও অভিজ্ঞতা নেই। অথচ এখন প্রতিদিন পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। অথচ সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বা প্রতিরোধের চেষ্টাও নেই। এমন চলতে থাকলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।

“এখন একদিকে টিকা দেওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে ব্যাপকভাবে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। এখন গ্রামেও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।“

এই পরিস্থিতি সামাল দিতে দেশের সব পক্ষকে একটি সমন্বিত প্ল্যাটফর্ম তৈরির পরামর্শ দিয়ে তিনি বলনে, “টিকা দিতে হবে এবং মাস্ক পরাসহ আচরণগত সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।”

“মানুষ বাঁচাতে হলে চিকিৎসার সুযোগ সুবিধা বাড়াতে হবে, রোগী আনার নেওয়ার ব্যবস্থা কী হবে, তাদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কী ব্যবস্থা নিতে হবে এবং সাধারণ মানুষের খাবারের নিশ্চয়তা কিভাবে করাসহ সকল বিষয় নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।”

প্রবীণ এই অর্থনীতিবিদের পরামর্শ সমন্বিত উদ্যোগে কী প্রয়োজন হতে পারে সে জন্য খুব দ্রুত একটি উপজেলায় চিকিৎসা, টিকা, মানুষকে সচেতন করা এবং মানুষের খাবারের নিশ্চয়তার কথা মাথায় রেখে কাজ শুরু করতে হবে।

“ওই উপজেলার সমীক্ষা থেকে যা পাওয়া যায় তা থেকে মডেল তৈরি করে সারা দেশে ওই মডেলে কাজ শুরু করতে হবে।”

তারমতে, এই মডেল সরকার সারা দেশে পৌঁছে দিতে পারে ‘এটুআই’ প্রজেক্টের মাধ্যমে। প্রায় সাড়ে চার হাজার ইউনিয়নে এই প্লাটফর্ম বিস্তৃত রয়েছে। এর মাধ্যমে সমীক্ষা থেকে পাওয়া মডেলটি ছড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে।

ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, “কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সরকারের জনসম্পৃক্ততা এখন রাষ্ট্রীয় নীতির মধ্যে নেই। সচিবদের মাধ্যমে জেলা মনিটরিং করে কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। কিন্তু আমার মনে হয় জনসম্পৃক্ততা ছাড়া এতে সুফল পাওয়া যাবে না।”

এসময় তিনি তার এলাকায় নিজের উদ্যোগে কার্যক্রম পরিচালনার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, “গ্রামের মানুষের জ্বর আসলে বলছে এটা মৌসুমী জ্বর ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু পরীক্ষা করাচ্ছে না। হাসপাতালে যাচ্ছে না। এরমধ্যে আক্রান্ত রোগী নিজের অজান্তেই অন্যদের মধ্যে এই রোগ বিস্তার করছে।“

তিনি বলেন, আমার এলাকার আট ইউনিয়নে ৩০টি স্বেচ্ছাসেবীদের দিয়ে ৩০টি কমিটি করে আমরা কাজ পরিচালনা করছি। কিন্তু সরকারি সুযোগ সুবিধা কিছুই আমরা ব্যবহার করতে পারছি না।

তিনি বলেন, “সরকারি যে অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে তা কোনও উদ্যোগ না থাকায় অলস বসে আছে। অথচ গাড়ি না পাওয়ায় অনেক রোগীকে হাসপাতালে নেওয়া যাচ্ছে না।

“তাই সংশ্লিষ্ট এলাকার সব পেশা ও স্তরের মানুষকে সম্পৃক্ত করে সরকারকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আমলাতান্ত্রিকভাবে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়।”

সাহিদুজ্জামান বলেন, “শুধু চিকিৎসা সেবা দিয়ে এই মহামারী মোকবিলা করা সম্ভব নয়। আর আমাদের চিকিৎসা দেওয়ার সামর্থও নেই। 

কোভিড মোকাবিলার সবচেয়ে কার্যকর কৌশল হতে পারে মানুষকে সচেতন করা।

তাই জনসম্পৃক্ততা বাড়িয়ে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ রাখেও তিনিও।

এর আগে সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হাঙ্গার প্রজেক্টের পরিচালক ড. বদিউল আলম মজুমদার।

তিনি বলেন, “হাঙ্গার প্রজেক্ট গত বছরের এপ্রিল মাস থেকে প্রায় ১ হাজার ২০০ গ্রামে করোনাভাইরাস সহনশীল গ্রাম (সিআরভি) উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ভাইরাসের বিস্তার রোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রযুক্তিগত নির্দেশিকা অনুসরন করে এই মডেল গ্রামগুলো গড়ে তোলা হয়েছে।“

জনসম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠান ও স্বেচ্ছাসেবক দ্বারা পরিচালিত এবং স্থানীয় নেতাদের সহযোগিতায় ইতিমধ্যে এসব গ্রামে আশাব্যঞ্জক উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এসময় তিনি সাধারণ মানুষ মহামারীকে ভয় না পাওয়াকে প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেন।

মূল প্রবন্ধে জনসম্পৃক্ততা বাড়িয়ে সকল মানুষকে টিকা দেওয়া, স্বেচ্ছা সেবীদের জন্য কারিগরি দক্ষতা উন্নয়ন ও স্থানীয় পর্যায়ে মণিটরিং ও স্থানীয় সরকারকে এতে ‍যুক্ত করার পরামর্শ রাখেন তিনি।

এটুআই এর পরিচালক আনির এ চৌধুরী বলেন, “বর্তমানে এটুআই দেশের সাড়ে চার হাজার ইউনিয়ন পরিষদের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। সরকার যদি সমন্বিত কোনও উদ্যোগ নেয় এবং তা সহজেই এটুআই ইউনিয়ন পরিষদ পর্যায়ে পৌঁছে দিতে পারে।