লকডাউনেও সড়কে বাড়ছে গাড়ির চাপ

সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনের সপ্তম দিনে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে বেড়েছে যানবাহনের চাপ; বেড়েছে সাধারণ মানুষের চলাচল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 July 2021, 08:09 AM
Updated : 29 July 2021, 08:11 AM

মহামারীর বিস্তার ঠেকাতে মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যবিধি মানায় এখনও অনিহা দেখা যাচ্ছে মানুষের।

বৃহস্পতিবার রামপুরা, মালিবাগ, মৌচাক, শান্তিনগর, বেইলি রোড, বিজয়নগর, কাকরাইল, নয়া পল্টনের সড়ক ও তার আশ-পাশের এলাকা ঘুরে আগের দিনের চেয়ে বেশি প্রাইভট কার চলতে দেখা গেছে। বিভিন্ন চেকপোস্টে পুলিশের জিজ্ঞাসাদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে চলাচলকারীদের।

বেইলি রোডের বাসিন্দা কুদরত ই খোদা বললেন, “এক সপ্তাহের মধ্যে এত প্রাইভেট কার রাস্তায় দেখিনি। সকালে শান্তিনগরের বাজার করতে গিয়ে রাস্তায় যানবাহনের ভিড়-ভাট্টা দেখে মনে হয়েছে লকডাউন উঠে গেছে।”

শান্তিনগরে রাস্তার পাশে টিসিবির ন্যায্যমূল্যের তেল কিনতে লাইনে দাঁড়িয়ে অনেক নারী-পুরুষ। জানালেন, বাজারে তেলের দাম চড়া বলেই এই লাইনে দাঁড়ানো।

কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল রেস্তোরাঁর মোড়ে চেকপোস্টে প্রাইভেট কার থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা গেছে পুলিশকে। অনেককে জরিমানাও গুণতে হয়েছে।

মালিবাগ, মৌচাক, রামপুরার ব্যস্ত সড়কে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত প্রাইভেট কার, পণ্যবাহী ট্রাক, কভার্ড ভ্যান, অ্যাম্বুলেন্স, রিকশার কারণে মাঝে মধ্যে যানজটও সৃষ্টি হতে দেখা গেছে।

কুলসুম বেগম নামে একজন পোশাক শ্রমিক বললেন, “সবই তো চলছে। দোকানপাট খোলা, কাঁচাবাজার খোলা, মানুষজন ধুমছে বাইরে হাঁটাহাটি করতাছে। তাইলে আমাগো গার্মেন্টস বন্ধ ক্যান? এডাই বা কেমন লকডাউন?”

মালিবাগ, শান্তিবাগ, গুলবাগের অলিগলিতে মানুষের চাপ দেখে রিফাত জামান নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা রসিকতা করে বললেন, “বৃহস্পতিবার বলেই আজ রাস্তায় গাড়িঘোড়ার চাপ বেশি। আবার দেখবেন শুক্রবার কম।”

মিরপুরে বিভিন্ন অলিগলির পাশাপাশি প্রধান সড়কেও মানুষের জটলা বাড়তে দেখা গেছে। রূপনগর, পল্লবী এবং পার্শ্ববর্তী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নিত্যপণ্যের দোকান ও হোটেল রেস্তোরাঁ ছাড়া অন্যান্য দোকানে শাটারের এক অংশ খোলা রেখে বেচা-কেনা চলছে।

এক ফেরিওয়ালা রিকশায় মাইক বেঁধে বের হয়েছেন পুরনো ব্যথার ওষুধ বিক্রি করতে। সাংবাদিক পরিচয়ে কথা বলার চেষ্টা করতেই এড়িয়ে গেলেন।

রূপনগরে প্রধান সড়কে পায়চারী করছিলেন জাহিদ পাটোয়ারি নামে একজন। জিজ্ঞেস করতে বললেন, “সকাল ৯টার দিকে একবার পুলিশ টহল দিয়ে গেছে। এরপর আইনশৃংখলা রক্ষা বাহিনীর কাউকে আর দেখা যায়নি।

এ এলাকার প্রধান সড়কেই বিভিন্ন বয়সী মানুষকে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেল। এদের অনেকের মুখে মাস্কও নেই।

রূপনগর মোড়ে একটি লাইব্রেরি খুলেছে সকাল ১০টা থেকে। জানতে চাইলে মালিক মো. মুস্তফা বলেন, “বাজার করার টাকা নেই। পেটতো চালাতে হবে। তাই ঝুঁকি নিয়ে দোকান খুলেছি।”

পুরান ঢাকার, আজিমপুর, লালবাগ, কেল্লারমোড়, বকশিবাজার, ও পলাশীর অলিগলিতে মানুষ, ব্যক্তিগত গাড়ি, রিকশা অনেক বেশি চলাচল করতে দেখা গেছে। ওইসব এলাকায় সকালের গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতেও থেমে ছিল না মানুষের বের হওয়া।

আজিমপুর চৌরাস্তায়, বকশিবাজার, চানখারপুলে পুলিশের উপস্থিতি দেখা গেলেও ছিল না কোনো তৎপরতা।

কারওয়ান বাজার, তেজগাঁও ও মহাখালী এলাকায়ও রাস্তায় গাড়ির চলাচল অন্য দিনের চেয়ে বেশি দেখা গেছে। অনেককে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মুখেও পড়তে হচ্ছে।

তেজগাঁওয়ের বিজি প্রেসের সামনে রাস্তার দুই দিকেই পুলিশের চেকপোস্ট। যৌক্তিক কারণ দেখাতে না পারলে মামলা ও জরিমানা গুণতে হচ্ছে সেখানে।

দায়িত্বরত একজন পুলিশ সদস্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বললেন, “আমরা চেক করতেছি ঠিক আছে, কিন্তু বেশিরভাগই কোনো না কোনো কাজেই বের হচ্ছেন। তাদের আমরা যাচাই-বাছাই করে ছেড়ে দিচ্ছি।”

মোহাম্মদপুর বাস স্ট্যান্ড, আদাবর, রিংরোড এলাকার অলিগলি ও প্রধান সড়কে মানুষের চলাচল আর গাড়ি আগের দিনগুলো থেকে অনেক বেশি দেখা গেছে।

অলিগলিতে ভ্যানগাড়িতে ফল আর সবজির পসরা আগের মতই। সবজি দোকানদার, মুদি দোকানগুলোতে মানুষের আনাগোনা বেড়েছে।

সাত মসজিদ এলাকায় আল আমিন রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার শিহাব উদ্দিন বলেন, “মানুষজন পার্সেল নিচ্ছে। ঈদের পরে এমনিতে বিক্রি কম। আগের চেয়ে রাস্তাঘাটে লোকজন বেড়েছে। লকডাউন আছে, তবে সেটা খুব জোরদার বলে মনে হয় না।"

অনেকেরই অভিযোগ, রিকশা ভাড়া নিয়ে 'নৈরাজ্য' চলছে।

শিয়া মসজিদ থেকে গুলশানগামী আফসার উদ্দিন বলেন, “রিকশা ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু মহাখালী পর্যন্ত আড়াইশো টাকা ভাড়া চাইছে। এভাবে আর কতদিন?”