লকডাউন: প্রশাসনের তৎপরতার মধ্যেই রাস্তায় বাড়ছে মানুষ

কঠোর লকডাউনের ষষ্ঠ দিনে রাজধানীর সড়কে যানবাহন ও মানুষের চলাচল আগের দিনগুলোর চেয়ে বেড়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 July 2021, 08:06 AM
Updated : 28 July 2021, 08:08 AM

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আগের দিনের চেয়ে বেশি তৎপর দেখা গেলেও দোকানি, ক্রেতা, পথচারী অনেকেরই মাস্ক মুখে থাকছে না।  

বুধবার সকালে আজিমপুর ছাপড়া মসজিদ ও আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কেউ চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছেন, আবার কেউ কাঁচাবাবাজারে ঘোরাঘুরি করে চলে যাচ্ছেন।

আগের দিনের তুলনায় এদিন কাঁচাবাজার, মাছ ও মুদি দোকানে লোকজনের চলাচল বেড়েছে। প্রধান সড়কে মানুষের সঙ্গে যানবাহনের সংখ্যাও বেশি।

আজিমপুর চৌরাস্তায় সেনাবাহিনী, পুলিশ আর ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম দেখা গেছে। নানা ছুতোয় বের হওয়া মানুষদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে তল্লাশি চৌকিতে, মাস্ক না পরায় করা হচ্ছে জরিমানা।

বের হওয়ার যৌক্তিক কারণ দেখাতে না পারায় আজিমপুর মোড়ে তিন যুবককে তিনশ টাকা জরিমানা করা হয়। একই এলাকায় মাস্ক না পরায় বাবা-মেয়েকে আটকে দেন সেনা সদস্যরা। পরে তারা ক্ষমা চেয়ে রক্ষা পান।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট লায়লা আনজুমান বলেন, “অধিকাংশই জরুরি দরকার ছাড়া বের হয়েছেন এবং জানতে চাইলে নানা অজুহাত দিচ্ছেন। তাই, তাদের জরিমানা করা হচ্ছে। অনেকেরই মাস্ক থুতনিতে, তাদেরকেও জরিমানা করা হয়েছে।”

লকডাউনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকায় এসে আজিমপুরে পুলিশ কাছে ধরা পড়েছেন নাঈম ও নাজমুল নামের দুই তরুণ। তারা জানালেন,  ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর থানা এলাকায় তাদের বাসা। ঈদ করতে গিয়েছিলেন, মঙ্গলবার রাতে রওনা দিয়ে ঢাকায় পৌঁছেছেন।

পিকআপে চড়ে তাদের ঢকায় আসতে দিতে হয়েছে দুই হাজার টাকা। ভ্রাম্যমাণ আদালত তাদের দুইশ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।

বিজয়নগর, ফকিরাপুল, নয়া পল্টন, শাহজাহানপুর, আরামবাগ, ডিআইটি এভিনিউ ঘুরে দেখা গেছে, বড় দোকানপাট বন্ধ থাকলেও, অলিগলিতে দোকান খোলা।

ফকিরেরপুলের মোড়ে একটি দোকানের বিক্রয়কর্মী জুনায়েদ সাকী বলেন, “লকডাউন যে আছে, সেটা বোঝা যায় রাত থেকে ভোর পর্যন্ত। সব তখন বন্ধ থাকে, রাস্তাও থাকে ফাঁকা।

“কিন্তু সকাল-দুপুরের চিত্র ভিন্ন। রাস্তায় গাড়ি-ঘোড়ার চলাচল দেখে বুঝতে পারবেন না লকডাউন চলছে। বিকাল ৩টার পর কড়াকড়ি শুরু হয়। আমরাও তখন দোকান বন্ধ করে দেই।”

কোভিড সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ায় টিকা কেন্দ্রগুলোতেও ভিড় বেড়েছে। কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের সামনে দেখা গেছে টিকা নিতে আসা মানুষের লাইন।

আরামবাগ ব্যাংক কলোনির বাসিন্দা জোবায়ের আহমদ বললেন, “লকডাউনের প্রথম কয়েকদিন ভালোই ছিল কড়াকড়ির কারণে। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে সড়কে যানবাহনের চাপ বাড়ছে।

“লকডাউনের প্রথম তিন দিন এই মোড়ে কোনো ট্রাফিককে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ডিউটি করতে দেখা যায়নি। গাড়ি ছিল কম, তারা ফুটপাতে ছিলেন। এখন আবার তাদের রাস্তায় দাঁড়িয়ে ট্রাফিক সামলাতে হচ্ছে। এ থেকেই বোঝা যায় লকডাউন কেমন চলছে।”

শাহজাহানপুর মোড়ে কয়েকজন দিনমজুর বসে ছিলেন টুকরি-কোদাল নিয়ে। কিন্তু কাজ নেই।

যোগালীর কাজ করে সংসার চালানো নীলফামারীর মোমিন মিয়া বলেন, “স্যার হামাক দিকে কেউ চায় না। কষ্টে আছি। কাম নাই।”

আরামবাগ, শাহজাহানপুর, পীরজঙ্গি মাজারের গলিতে ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে মানুষজনের চলাচল বেশি।

আইডিয়াল স্কুলের এক ছাত্রকেও দেখা গেল রাস্তায়। সে বললো, “ভালো লাগে না বাসায়। কী করব বলেন? বন্ধুদের নিয়ে গল্প-গুজব করে সময় কাটাচ্ছি।”

রাজধানীর আদাবর, শেখেরটেক, মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ এলাকায় আগের চেয়ে মানুষের চলাচল বেশি দেখা গেছে বুধবার। বেড়েছে রিকশার সংখ্যাও। দোকানপাটের শাটার অর্ধেক খোলা রেখে বেচাকেনা চলছে। বিভিন্ন গলিতে আগেরে চেয়ে ফেরিওয়ালাদের আনাগোনা বেড়েছে।

আকরাম হোসেন নামের একজন সবজি বিক্রেতা বললেন, “চুপচাপ বসে থাকলেতো পেট চলবে না। তাই রাস্তায় বেরিয়ে বিক্রি করছি।”

টহল পুলিশকে দেখা যায় সাত মসজিদ রোড এলাকায় ভাসমান দোকান বন্ধ করে দিচ্ছেন, জড়ো হওয়া লোকজনকেও তারা সরিয়ে দিচ্ছেন।

মিরপুরের রাস্তায় মানুষের চলাচল কম থাকলেও যারা বাইরে বের হয়েছেন, তাদের অনেকের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি।

লকডাউনে বন্ধ রাখার নির্দেশনা থাকলেও পল্লবী এলাকায় স্যানিটারি পণ্য, খেলনার দোকান, কাপড়ের দোকান, ইলেকট্রিক পণ্যের দোকান খোলা রয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর নজর এড়াতে শাটার অর্ধেক বন্ধ রেখে এসব দোকানে কেনাবেচা চলছে। রাস্তায় ভ্রাম্যমাণ ভ্যানেও কাপড়, জুতা বিক্রি করতে দেখা গেছে।

মিরপুর-১২ নম্বর সেকশনের ই-ব্লকে ‘ওয়ান টু নাইনটি নাইন শপ মাশাল্লাহ স্টেশনারির’ বিক্রেতা

জাকারিয়াকে দোকানের সামনেই বসে থাকতে দেখা যায়।

কারণ জানতে চাইতে চাইলে তিনি বলেন, “ঈদে তো একটু ভাল বিক্রি হয়। সেজন্য দোকান খুলছি।

“ঈদের পরে পুলিশ তেমন আসে নাই। কিন্তু যখন ইচ্ছে তখন একেক গলিতে এসে ঝামেলায় ফেলে।

সেজন্য অর্ধেক খুলে রাখছি, গলিতে ঢুকলেই বন্ধ করে দেব।”

পাশের ডি-ব্লকে ফয়েজ ইলেকট্রিকের কর্ণধার ফয়েজ আহমেদও জানালেন একই কৌশলের কথা।

তিনি বলেন, “দোকান বন্ধ রাখলে তো পেট চলবে না। যতটুকু বেচা যায় সেটাই লাভ।”