সিলেট উপ-নির্বাচন স্থগিত চেয়ে সিইসিকে আইনি নোটিস

সিলেট-৩ আসনের উপ-নির্বাচন স্থগিত চেয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদাকে আইনি নোটিস পাঠানো হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 July 2021, 12:03 PM
Updated : 25 July 2021, 02:59 PM

সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ আইনজীবীর পক্ষে ইমেইলে নোটিসটি পাঠিয়েছেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

গত ১১ মার্চ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর মৃত্যুতে সিলেট-৩ আসন শূন্য ঘোষণা করা হয়। সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদের শর্ত ৪ অনুযায়ী পদ শূন্য হওয়ার দিন থেকে নব্বই দিনের মধ্যে শূন্য পদ পূরণ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

তবে দৈব-দূর্বিপাকের কারণে যদি এই নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন করা না যায় তাহলে পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন করার কথা বলা আছে ওই শর্তে।   

যে কারণে গত ২৯ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন এক প্রজ্ঞাপনে ৮ জুন সিলেট-৩ আসনে উপ-নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করলেও করোনাভাইরাসের কারণে তা সম্ভব নয় বলে জানায়।

পরে গত ২ জুন নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করে ১৪ জুলাই ভোট গ্রহণের তারিখ রাখে। কিন্তু করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সরকার ১ থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত সারাদেশে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে। পরবর্তীতে তা আরও এক দফা বাড়ানো হয়।

কোরবানির ঈদ সামনে রেখে কঠোর লকডাউন গত ১৪ জুলাই থেকে শিথিল করলেও পরিস্থিতি বিবেচনায় আটকে যায় ফলে সিলেট-৩ আসনের ভোট গ্রহণ।

এমন পরিস্থিতিতে গত ১৫ জুন নির্বাচন কমিশন ভোটের নতুন তারিখ ঘোষণা করে। সে ঘোষণা অনুযায়ী ২৮ জুলাই সিলেটের এ আসনে উপ-নির্বাচন হওয়ার কথা।

আইনজীবী শিশির মনির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাংবাধানিক বাধ্যবাধকতার কথা বলে এ নির্বাচনের যে তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে তা সঠিক নয়। সাংবাধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী ২৮ জুলাইয়ের পর ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আরও ৪২ দিন সময় আছে। যদি এই সময়ের মধ্যে করোনাভাইরাসের প্রকোপ না কমে তবে বাধ্য হয়েই নির্বাচন করতে হবে। যেহেতু ২৮ জুলাইয়ের পর হাতে আরও ৪২ দিন সময় আছে তাই সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কথা বলে সিইসি যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তা সঠিক নয়।”

নোটিসে বলা হয়েছে, ২৮ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য উপ-নির্বাচন স্থগিত করা যাবে না, এই বক্তব্য আইনের সঠিক ব্যাখ্যা নয়। নির্বাচন কমিশনের উচিত চলমান করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধি বিবেচনায় নিয়ে লকডাউনের সময় নির্বাচন না করা এবং ৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে অন্য যেকোনো দিন ভোটগ্রহণের দিন নির্ধারণ করা।

“তাছাড়া ৩ লাখ ৫২ হাজার ভোটারের এই নির্বাচন অনুষ্ঠান সরকারের লকডাউন নীতিরও বিরোধী। সুতরাং ২৮ জুলাই নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা নেই। তাই করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধি বিবেচনায় নিয়ে ২৮ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য সিলেট-৩ আসনের ভোটগ্রহণ স্থগিত করার অনুরোধ জানাচ্ছি। অন্যথায় আমরা উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হতে বাধ্য হব,” বলা হয়েছে নোটিসে।

নোটিসদাতা পাঁচ আইনজীবী হলেন মো. মুজাহিদুল ইসলাম, আল রেজা মো. আমির, মো. জোবায়দুর রহমান, মো. জহিরুল ইসলাম এবং মুস্তাফিজুর রহমান।

তাদের বিষয়ে জানতে চাইলে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, “তারা কেউই এ আসনের ভোটার বা কোনো এলাকার বাসিন্দা নন। সিইসি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে এ উপ-নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করাতেই আইনি নোটিস পাঠানো হয়েছে।”

নোটিসের জবাব না পেলে অথবা জবাব গ্রহণযোগ্য মনে না হলে বা নোটিসের দাবি অনুযায়ী কোনো পদক্ষেপ না নিলে সিইসির এ সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করা হবে। তখন রিট আবেদনকারী হিসেবে ওই আসনের ভোটারকে যুক্ত করা হবে বলে জানান আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

‘ভোটের জন্য প্রস্তুত, লিগ্যাল নোটিস বাধা নয়’

আইনি নোটিসের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ইভিএমে সিলেট-৩ আসনের উপ-নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি গুছিয়ে আনা হয়েছে। বুধবার স্বাস্থ্য বিধি মেনে এ নির্বাচন হবে।

“লিগ্যাল নোটিস দিলে তো কোনো সমস্যা নয়। এখানে তো আদালতের কোনো নির্দেশনা নেই। ভোট পেছানোরও সুযোগ নেই। সুতরাং নির্বাচন হবে। আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।

শনিবার সিলেটে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা বলেন, আইনি ও সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে সিলেট-৩ আসনের উপ-নির্বাচন পেছানোর সুযোগ নেই। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভোট গ্রহণের সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

সবাইকে মাস্ক ব্যবহার ও নিরাপদ দূরত্ব মেনে ভোট হবে। উপ-নির্বাচনের সব কার্যক্রম লকডাউন বহির্ভূত থাকছে।