মেয়েরা তাহলে খেলবে কোথায়?

জনসংখ্যা যত বেড়েছে, আবাসন আর উৎপাদনের প্রয়োজনে বাংলাদেশের খেলার মাঠগুলো দখল করে গড়ে উঠেছে নানা স্থাপনা। কেন্দ্র থেকে প্রান্ত যে মাঠগুলো এখনও টিকে আছে, সেগুলোও আবার ছেলেদের দখলে। মেয়েরা তাহলে খোলা মাঠে খেলবে না?

হ্যালো ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 July 2021, 08:59 AM
Updated : 25 July 2021, 08:59 AM

হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের আয়োজনে এক ভার্চুয়াল আলোচনায় এর একটি সমাধান প্রস্তাব করেছেন বাগেরহাট সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুছাব্বেরুল ইসলাম।

তিনি বলছেন, দিন, ঘণ্টা বা সময়ের স্লট ভাগ করে মাঠ সমস্যার সমাধান একভাবে করা সম্ভব।

বাগেরহাটের শিশু সাংবাদিক নূশরাত ইসলাম তৃষার সঞ্চালনায় এই লাইভ আলোচনায় খেলাধুলায় মেয়েদের পিছিয়ে পড়া নিয়ে কথা হচ্ছিল।

ইউএনও মুছাব্বেরুল ইসলাম বললেন, খেলাধুলার ক্ষেত্রে মেয়েরা প্রথমত সেই পরিমাণ সুযোগই পাচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, খেলতে গেলে সমাজের কাছ থেকে নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। এ অবস্থায় মাঠের সংখ্যা বাড়ানোর সুযোগ না থাকালেও অন্যভাবে সমাধানের সুযোগ রয়েছে।

“যেহেতু খেলার মাঠগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক। তাই ইউনিয়ন পর্যায়ে ফুটবল ক্লাব করতে আমরা জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বসব।

“একটা হতে পারে, দুই দিন বা তিন দিন করে দিন ভাগ করে দেওয়া (ছেলে ও মেয়েদের জন্য) অথবা ঘণ্টা ভাগ করে দেওয়া। স্লট ভাগ করে দেওয়া।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই শিক্ষার্থী তার ক্যাম্পাস জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, সেখানে সুইমিং পুল একটি, তাই ছেলে ও মেয়েদের জন্য আলাদা সময় ভাগ করা আছে।

“আমরা নির্দিষ্ট সময়ে যেতাম। সময় বা স্লট বেঁধে দিলে এটা মোটেই কঠিন হবে না। আমরা এই বিষয়টা নিয়ে কাজ করব।”

শিশুরা কেন খেলে? তারা খেলে শুধুই আনন্দের জন্য। কিন্তু ওই খেলাধুলাই শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে।

খেলার মাঠের সময়টা তাকে সুস্থ দেহে স্বাভাবিক গঠনে বেড়ে উঠতে সহায়তা করে, সামাজিকভাবে বেড়ে উঠতে শেখায়, কল্পনাশক্তি আর সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটায়, অন্যকে সহযোগিতা করার এবং ভবিষ্যতের নেতা হয়ে ওঠার মন্ত্র শেখায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ৫ থেকে ১০ বছর বয়সী প্রতিটি শিশুকে দিনে অন্তত এক ঘণ্টা বাইরে খোলা হাওয়ায় খেলাধুলা করার পরামর্শ দেয়। বাংলাদেশ রাজধানী ঢাকায় সেই সুযোগ পায় ২ শতাংশের কম শিশু। তাদের বেশিরভাগই ছেলে।

আর ঢাকার বাইরে দেশের অন্যান্য মহানগর বা শহরে এই হার কত, তার কোনো সুনির্দিষ্ট হিসাব নেই। 

হ্যালোর ভার্চুয়াল আলোচনায় প্রান্তিক পর্যায়ে ছেলেমেয়েদের উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ নিয়ে কথা হয়। সেখানে উঠে আসে একটু একটু করে মেয়েদের পিছিয়ে পড়ার গল্প।

দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফুটবল, স্কুলের মাঠে হোক, পাড়ার গলিতে হোক, ফুটবলে কখনও লাথি দেয়নি এমন ছেলে খুঁজে পাওয়া কঠিন।

কিন্তু মেয়েরা যে সে সুযোগ পায় না, সে কথা বলতে গিয়ে বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্ট নিয়ে নিজের কাজের অভিজ্ঞতাও তুলে ধরলেন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মুছাব্বেরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “টিম সিলেকশনের ক্ষেত্রে আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক দল পেয়েছি। হয়ত গার্লস স্কুলে ফুলবল খেলে এরকম কিছু মেয়ে পেয়েছি। ক্লাবভিত্তিক নারী বা মেয়েদের দল এখন কম।”

মহামারীর বিপদ কাটিয়ে পৃথিবী আবার যখন স্বাভাবিক হবে, তখন প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে ফুটবল ক্লাব বা অ্যাসোসিয়েশন করার এবং মেয়েদের জন্য আলাদা দল বা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার স্বপ্নের কথা বললেন এই সরকারি কর্মকর্তা।

“আমরা মনে প্রাণে বিশ্বাস করি, আমাদের মেয়ে শিক্ষার্থীদের মেধা ও প্রজ্ঞার একশভাগ বিকাশ নিশ্চিত করতে হবে, যদি আমরা সমৃদ্ধ বাংলাদেশের কথা চিন্তা করি।”

স্কুলে স্কুলে চেইঞ্জ রুম ও আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ

আলোচনার এক পর্যায়ে মুছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, সরকারের ১০টি অগ্রাধিকার প্রকল্পের একটি হল নারীর ক্ষমতায়ন।

“সমাজে চলার ক্ষেত্রে মেয়েদের নিরাপত্তা ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করতে আমরা নারী শিক্ষার্থীদের একদিন বা দুই দিনের সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। প্রশিক্ষক হিসাবে থাকছেন ঢাকার কুংফু/কারাতের নারী প্রশিক্ষকরা।”

আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারী শিক্ষার্থীবান্ধব ‘চেইঞ্জ রুম’ তৈরির একটি কর্মসূচির কথাও তিনি জানালেন।

“মেয়েদের যেন তাদের নির্দিষ্ট কয়েকদিন স্কুলে অনুপস্থিত থাকতে না হয়। চেইঞ্জ রুমে যেন স্যানিটারি ন্যাপকিনসহ অন্যান্য বিষয়গুলোর ব্যবস্থা থাকে। চেইঞ্জ রুমে সুন্দর একটা বেড, একটা আলমারি/আলনা, একটা আয়না, ওয়াশরুম যেন থাকে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমাদের উদ্যোগ রয়েছে এবং অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তৈরিও করা হচ্ছে।”

ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, স্থানীয় সংসদ সদস্যদেরও এ উদ্যোগে যুক্ত করার কথা জানালেন মুছাব্বেরুল।

অভিভাবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনি আপনার মেয়ের সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত করতে তার সর্বোচ্চ পরিচর্যা করুন। সরকারের প্রতিটি সংস্থা সাপোর্ট দেওয়ার জন্য প্রস্তুত।”

মেয়েদের খেলাধুলায় যে আরও অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়, সে কথা তুলে ধরে এই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, “শিশুদের লং টেনিস প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। সেখানে নারী শিক্ষার্থীদের একটি ব্যাচের প্রশিক্ষণ আমরা শেষ করতে পেরেছি। এখানে একজন নারী রয়েছেন, যিনি একটি ‍পুরুষ ফুটবল দলের কোচ।

“আরেকটি বিষয় নিয়ে আমরা কাজ করছি, আমাদের (বাগেরহাটে) একটি ইনডোর ফ্যাসিলিটি আছে, সেটি আমাদের অফিসার্স ক্লাবে। সেখানেও আমরা মেয়ে ও ছেলেদের আলাদা শিফটে ব্যাডমিন্টন প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি।”

শিক্ষা সহায়ক কার্যক্রম হিসেবে শিশু সাংবাদিকতাকে মূল্যায়ন করতে গিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এটা খুব ভালো কাজ। অন্তত শিশুদের মেধা বিকাশের ক্ষেত্রে খুব ভালো কাজ। তাদের চিন্তার জগৎ অনেক বেশি প্রসারিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে এর মাধ্যমে।

 

‘বাগেরহাটের শিশুরা কেমন আছে?’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠান শনিবার বেলা ১১টায় হ্যালোর ফেইসবুক পাতায় সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

বাগেরহাটসহ বিভিন্ন জেলা থেকে শিশুরা এসময় বিভিন্ন প্রশ্ন ও মন্তব্য করে, যার উত্তরও দিয়েছেন বাগেরহাট সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মুছাব্বেরুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানের সঞ্চালক তৃষাও একজন শিশু সাংবাদিক। ১৪ বছরের তৃষা পড়ছে অষ্টম শ্রেণিতে।

১৮ বছর বয়সের নিচের যে কেউ নিবন্ধন করে শিশু সাংবাদিক হতে পারে। নিবন্ধনের লিঙ্ক: reg.hello.bdnews24.com

শিশুদের নিয়ে শিশুদের জন্য বিশেষায়িত ওয়েবসাইট hello.bdnews24.com এর যাত্রা শুরু হয় ২০১৩ সালের ৩১ মার্চ। হ্যালোর জন্য সংবাদ সংগ্রহ থেকে পরিবেশন পর্যন্ত সব কাজেই যুক্ত রয়েছে শিশু ও কিশোর সাংবাদিকরা।

এ পর্যন্ত হ্যালোতে প্রশিক্ষণ ও কাজের সুযোগ পেয়েছে সারা দেশের হাজারো শিক্ষার্থী। তারা বলছে নিজেদের কথা।

সংবাদভিত্তিক এই ওয়েবসাইটটি পরিচালনা করছে দেশের সর্ববৃহৎ ইন্টারনেট সংবাদপত্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। এ কাজে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গী হয়েছে জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ।