বিষাদমাখা ঈদে আনন্দের খোঁজে হাতিরঝিলে

মহামারীর বিষাদমাখা ঈদে একটু আনন্দের জন্য বর্ষার স্নিগ্ধ, সুন্দর ও রঙিন বিকেলে নানা বয়সী মানুষের ঢল নেমেছিল ইট-পাথরে জঞ্জালে ঢাকা রাজধানীর অন্যতম বিনোদনস্থল হাতিরঝিলে।

সুমন মাহমুদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 July 2021, 03:14 PM
Updated : 22 July 2021, 05:09 PM

করোনাভাইরাসের অভূতপূর্ব মড়কের মধ্যে ঈদের জন্য শিথিল করা কঠোর বিধিনিষেধ মেয়াদ যখন ফুরিয়ে আসছে, তখন মানুষ যেন কোরবানির দ্বিতীয় দিন বিকেলে এই জলাধার ঘিরে খোলা হাওয়া, প্রাণ-প্রকৃতির রস আস্বাদন করতে ও অনাগত ঘরবন্দি জীবনের রসদ যোগাতেই এসেছিল।

কেউ এসেছেন বন্ধু অথবা বান্ধবীকে নিয়ে, কেউবা প্রেমিক যুগল। কেউ সবুজ আঙিনায় বসে কথা বলছেন, কেউ বা কফিশপে, কেউবা গাছের তলায়, কেউ বা ভাসমান ব্রিজে। যারা এসেছেন তারা কেউ মাস্ক পরেছেন, কেউ বা মাস্ক গলা ঝুলিয়ে রেখেছেন।

মহামারীর বিষাদমাখা কোরবানির ঈদের পরদিন বৃহস্পতিবার একটু আনন্দের জন্য নানা বয়সী মানুষ ভিড় জমায় ঢাকার হাতিরঝিলে। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

বান্ধবীদের নিয়ে বেড়াতে আসা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাবাসসুম সায়মা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কাল থেকে তো ঘরবন্দি জীবন আবার শুরু হবে। ঈদের আনন্দ করতে বান্ধবীদের নিয়ে এখানে এসেছি।

“মুয়রী পক্ষী রাজে চড়ে ‘কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা’ এই গান গেয়ে আমরা আনন্দ করেছি, সময়টা ভালোই কেটেছে।”

শুধু নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নয় হাতিরঝিলের লেকে ‘প্যাডেল বোটে’ চড়ে আরো অনেকেই এভাবে আনন্দে মতে উঠেছিলো ।

৮০ টাকায় ৩০ মিনিটের ভ্রমণের জন্য ‘প্যাডেল বোটে’ চড়তে লম্বা লাইন দেখা গেল মানুষজনের। নরটডেম কলেজের ছাত্র নাজমুল, আকবর, মিন্টুরা একঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছে এই ভ্রমণের জন্য। বোট খালি নেই।

করোনাভাইরাস মহামারীতে ঈদের পরদিন বিকালে রাজধানীর হাতিরঝিলে ঘুরতে আসা মানুষের বেশিরভাগের মুখেই ছিল না মাস্ক। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

একটু বিরক্তির সুরে মিন্টু বললো, “এতো বড় লেক আরো বোট দেওয়া উচিত। এভাবে প্রতীক্ষা ভালো লাগছে না, সন্ধ্যা হয়ে গেলে সেলফি তুলব কখন?”

নাগরিকজীবনের কোলাহলের মধ্যেই রামপুরা ব্রিজের কাছেই হাতিরঝিলে লেক। বিকাল থেকে উপচে পড়া ভিড় মানুষজনের। বনশ্রীর বাসিন্দা একটি বেসরকারি ফার্মের কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন আহমেদে স্ত্রী ও তার দুই সন্তান টুম্পা, শিফাতকে নিয়ে বিকালে ঘুরতে এসেছেন এই হাতিরঝিলে।

তিনি বলেন, “ঢাকা শহরে মুক্তভাবে ঘুরাফেরার জায়গা একেবারে কমে গেছে। ঈদ উৎসব কিন্তু দেখেন সব কিছু বন্ধ করোনার কারণে। রমনা পার্ক বলুন, চন্দ্রিমা উদ্যান বলুন, আর চিড়িয়াখানা বলুন কোনো কিছুই খোলা নেই।

“বাচ্চাদের আললাদ থাকে ঈদ উপলক্ষে একটু ঘুরাফেরার। সেজন্য এখানেই আসা। মাস্ক পড়ে সুবজ আঙিনায় কিছুক্ষণ বসে মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নেওয়া যাচ্ছে, ভালোই লাগছে।”

মহামারীর বিষাদমাখা কোরবানীর ঈদের পরদিন বৃহস্পতিবার ঢাকার হাতিরঝিলে বেড়াতে আসা অনেকেই ওয়াটার ট্যাক্সিতে চড়ে ঝিলে ঘুরে বেড়ান। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

হাতিরঝিলে কফি শপগুলো মানুষজনের ভিড়। বন্ধু-বান্ধব নিয়ে জমজমাট আড্ডা করছে অনেকে। এমনি আড্ডার টেবিলে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী।

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী সাব্বির মাহমুদ বলেন, “আগে বাসা-বাড়িতে আড্ডা দেওয়া যেতো। এখন সেটাও যাচ্ছে না করোনার কারণে। সেজন্য বন্ধুদের নিয়ে এখানে কিছুক্ষণ আড্ডা দিচ্ছি।”

সাব্বিরের বন্ধু রিফাত জানালো, তার বাসায় ছোট বোন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে এক সপ্তাহ আগে। সেজন্য বাসায় কাউকে যেতে মানা। তা না হলে প্রতি ঈদেই তার ‘আম্মু’ তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের আমন্ত্রণ করে ভুরিভোজ করান। এবার সেটাও করতে পারেননি আম্মু।

“সেজন্য ‘সরি জানিয়েছেন আমার ফ্রেন্ডদের’, বললো রিফাত।

হাতিরঝিলে ঈদ উদযাপনে বিকালে নানা শ্রেণিরর মানুষের সাথে দেখা গেছে বিদেশিদেরও। তিন নাইজেরিয়ান হাতিরঝিলে ঘুরে এসেছেন। ইমনানুল ওয়াগাওয়াম হাতিরঝিল দেখে যে অনুভূতি ব্যক্ত করলেন, তার অর্থ হলো- ‘বিকালটা তাদের ভালো কেটেছে। হাতিরঝিল সুন্দর দেখতে।’

মহামারীর বিষাদমাখা কোরবানির ঈদের পরদিন বৃহস্পতিবার একটু আনন্দের জন্য নানা বয়সী মানুষ ভিড় জমায় ঢাকার হাতিরঝিলে। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

হাতিরঝিলে লাল গোলাপ ও বেলী ফুলেও মালাও বিক্রি হচ্ছে দেদারছে।

ফুল বিক্রেতা আকিলা বেগম বলেন, “অনেক প্রেমিক-প্রেমিকরা আসে এখানে। ঈদের দিনও ফুলের মালা বিক্রি হইছে বহুত, আজকেও হইবো…।”

ফুলের মালা ছাড়া শিশুদের জন্য রঙিন বেলুনসহ নানা খেলনা বিক্রি পশরা নিয়ে বসেছে ভ্রাম্যমান হকারা; তাদেরও বিক্রি কম নয়।

হাতিঝিলের মতো ধানমণ্ডির লেক ও মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের ঈদ উদযাপনে সাধারণ মানুষজনের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে।