ঈদ কাটিয়ে দুর্ভাবনা আবার লকডাউন নিয়ে

ঈদের কয়েকদিন ‘শান্তিমতো’ দোকান খুলতে পারলেও ঢাকার মিরপুরের ৬০ ফুট এলাকার দোকানি আনোয়ার হোসেনের চিন্তা এখন লকডাউন নিয়ে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 July 2021, 09:39 AM
Updated : 24 July 2021, 01:03 PM

তিনি বলেন, “আমরা চরম উৎকণ্ঠায় আছি। দোকানপাট বন্ধ থাকবো, আয়-রোজগার বন্ধ থাকব। সামনে কী করে চলব, কী করে খাব।”

ঈদের পরদিন বৃহস্পতিবার কথা হয় আনোয়ারের সঙ্গে। এর একদিন বাদেই আবার মহামারী নিয়ন্ত্রণের কঠোর বিধি-নিষেধে দোকান বন্ধ করতে হবে তাকে।

আনোয়ারের মতো যারা দৈনিক আয়ে চলেন, তাদের জন্য বড় সঙ্কট নিয়ে আসে লকডাউন। তবে যেভাবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে, তা ঠেকাতে বিকল্পও খুঁজে পাচ্ছে না সরকার।

মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্যে নয় দিনের জন্য শিথিল ছিল বিধি-নিষেধ। এরপর শুক্রবার থেকে যে লকডাউন শুরু হচ্ছে, তা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে কঠোর হবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।

আনোয়ারের মতোই মুদি দোকানি জাফরাবাদ এলাকার সিরাজ উদ্দিন বলেন, “কিছু দোকানপাট খোলা রয়েছে। ঈদের আগে বিক্রিও ভালো হয়েছে। এখন বেচা-বিক্রিও কম। আবার স্বাভাবিক কবে হবে বলা ‍যাচ্ছে না।”

ঈদের পরদিন ঢাকা একেবারে ফাঁকা নয়; দোকানপাট খোলার পাশাপাশি রাস্তায় গাড়িও চলেছে কিছু।

রিকশাচালক হালিম জানান, দু’দিন ধরে রাস্তায় গাড়ি কম বলে তাদের বেশ আয়-রোজগার হয়েছে।

আরেক রিকশাচালক রফিক বলেন, “স্যার সকাল থেকে রিকশা চালাচ্ছি। ৭টা ট্রিপ মারছি। আজকের সকালের কামাই খারাপ না।”

একটি বাসের হেলপার আলম বলেন, “ঈদের পরদিন মানুষজন তো রাস্তায় লোকজন কম। ঢাকা শহর তো অনেকটাই ফাঁকা; যাত্রী পাব কই? অফিস নাই; সামনে আবার লকডাউন। মানুষ তো গ্রাম থেকে এখনও ফিরে নাই।”

শান্তিনগর, মালিবাগ, কাকরাইল ঘুরে দেখা যায়, সড়কে প্রাইভেট কার, গণপরিবহনসহ রিকশা চলাচল করছে। কাঁচাবাজারগুলোতে মানুষজনের ভিড় সেভাবে নেই।

মালিবাগ রেলগেইট ও শান্তিনগর বাজারের অধিকাংশ দোকান-পাটই বন্ধ। কাঁচাবাজারেরও একই অবস্থা। ফল-মূল ও মুদির দোকান খোলা রয়েছে।

দোকানে ফল কিনতে বেইলি রোডের বাসিন্দা নিজাম উদ্দিন বলেন, “ঈদের পরের দিন বাজারে আসার প্রয়োজন ছিলো না। শুধু আম আর কলা কিনতে এসেছি।”

ঈদের ছুটির পরের দিন ঢাকা যেমনটি ফাঁকা থাকার কথা সেইভাবে দেখছেন না বলে মনে হচ্ছে তার।

তিনি বলেন, “কাল (শুক্রবার) ভোর থেকেই লকডাউন। সেজন্যই আজকে রাস্তায় মানুষজন দেখছেন। শেষ মুহুর্তে আত্মীয়-স্বজনদের বাসা বাড়িতে অনেকে দেখা-সাক্ষাতও সেরে নিচ্ছেন। যেমন আমার স্ত্রী-ছেলে-মেয়েরা তাদের খালার বাসায় রামপুরায় গেছেন সকালেই।”

শান্তিনগর-পল্টনে বিভিন্ন অ্যাপার্টমেন্টে ঈদের দ্বিতীয় দিনেও কোরবানি দিচ্ছেন অনেকে। সেখানে দুস্থ মানুষজন দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে, কখন এক টুকরো ‘গোস্ত’ আসবে হাতে।

মালিবাগ ও পল্টনের বিভিন্ন অলি-গলিতে পশুর বর্জ্য অপসারণের কাজ চলছে। পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা বিভিন্ন জায়গা থেকে ময়লা-আবর্জনা এনে এক জায়গায় জড়ো করছে।

পরিচ্ছন্নতা কর্মী জুলেখা বেগম বলেন, “সকাল ১০টা থেকে তারা কাজ শুরু করেছেন। গলির ভেতর থেকে আমরা বর্জ্য নিয়ে মোড়ে স্তূপ করছি। এখান থেকে কিছুক্ষন পরেই সিটি করপোরেশনের গাড়ি এসে ময়লা-আবর্জনা নিয়ে যাবে।”