সেই যত্রতত্র পশু জবাই

সিটি করোপারেশন যতই অনুরোধ করুক, আগের মতই বাড়ির সামনে, স্থানীয় সড়কে আর অলিগলিতে পশু কোরবানি সেরেছে ঢাকাবাসী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 July 2021, 10:31 AM
Updated : 21 July 2021, 10:31 AM

বুধবার কোরবানির ঈদের দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঢাকার ধানমণ্ডি, সাতমসজিদ রোড, মালিবাগ, শান্তিনগর এলাকা ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে ঈদের দিন দেশের কোথাও কোথাও বৃষ্টির পূর্বাভাস ছিল। বেলা সাড়ে ১১টার পর ঢাকার কোথাও কোথাও এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেলেও গরু-ছাগল জবাই বা মাংস কাটায় তা বড় ব্যাঘাত ঘটাতে পারেনি।

সকালে ঈদ জামাত শেষে পাড়ায় মহল্লায় শুরু হয় পশু কোরবানির তোড়জোড়ে। বরাবরের মতই নগরীতে প্রকাশ্যে রাস্তার ওপর পশু জবাইয়ের দৃশ্য দেখা গেছে।

দুই সিটি করপোরেশন এবার পশু জবাইয়ের জন্য সব মিলিয়ে ৩৬৫টি স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছিল। তবে সেসব ‘নির্ধারিত’ স্থানে ভিড় ছিল না তেমন।

ধানমন্ডি লেক সংলগ্ন এলাকায় নির্ধারিত স্থানে কোরবানির পশু জবাই না করে বাসার সামনে ফুটপাতে জবাই শেষে চাটাই পেতে মাংস বানাতে দেখা যায় একদল লোককে।

তাকওয়া মসজিদের আশপাশে অনেক পশু জবাই হয়েছে সড়কের কাছেই। তবে সেখানে সিটি করপোরেশনের দেওয়া ব্যাগে বর্জ্য সংরক্ষণ করে রাখতে দেখা গেছে। কাজ শেষে স্থানীয়রাই পানি দিয়ে ধুয়ে দিয়েছেন রাস্তা।

রাজধানীর নবাবপুর এলাকায় বুধবার ঈদের দুপুরে কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ শেষে সড়ক ধুয়ে দেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর্মীরা। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

স্থানীয় বাসিন্দা রিয়াদুল বললেন, “আমাদের এখানে ফ্ল্যাটের সংশ্লিষ্টরা মিলে বাসার সামনেই কোরবানি দিয়ে ফেলছি। জবাইয়ের যে নির্ধারিত স্থান, সেটা একটু দূরে। বৃষ্টিও ছিল।  তাই সেখানে আর যাওয়া হয়নি। ময়লাগুলো আমরা ব্যাগে করে রেখে দিচ্ছি।”

সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা এসে পরে বর্জ্য তুলে নেবেন বলে জানান তিনি।

রিফাত নামে আরেকজন বললেন, কোনোভাবেই রাস্তায় যেন বর্জ্য না থাকে, সে বিষয়ে নজর রাখছেন তারা।

“এখনও ময়লা নেওয়ার কেউ আসেনি। আমাদের এখানে অনেক পশু জবাই করা হচ্ছে। আঙ্কেলরা বলে দিয়েছেন, যাতে ফুটপাতে বা রাস্তায় ময়লা পড়ে না থাকে । আমাদের লোকজন সব পরিষ্কার করে রাখবে।”

জাফরাবাদ এলাকায় অলিগলি ও বাসার সামনেই পশু জবাই করতে দেখা গেল। উত্তর সিটি করপোরেশনের অধীন এ এলাকায় করপোরেশনের নির্ধারিত ব্যাগে বর্জ্য রাখতে দেখা গেছে স্থানীয়দের।

সাকিব নামের একজন বললেন, “আমাদের সুবিধার জন্যই বাসার সামনে কোরবানির কাজ সারলাম। এখানে কোনো ঝামেলাও হচ্ছে না। সব কিছু নিজেরাই পরিষ্কার করে রাখছি। তারা এসে শুধু ময়লা নিয়ে যাবে।”

দুপুরে ঢাকা দক্ষিণ সিটির কয়েকজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী জানালেন, তারা অলিগলিতে ঘুরে বর্জ্য সংগ্রহ করছেন। বাসার সামনে, সড়কের মোড়ে যেখানেই বর্জ্য পাওয়া যাবে তা সরিয়ে নেওয়া হবে।

শাহজাদপুর এলাকায় প্রধান সড়কেও কোরবানির পশু জবাই করতে দেখা গেছে। বংশাল রোডেও রাস্তার পাশে বসে চলেছে মাংস বানানোর কাজ। 

ছবি: মাহমুদ জামান অভি

আজিমপুর মেটারনিটি হাসপাতালের উত্তর পাশে সরকারি কলোনির লোকজন সেখানেই পশু জবাই করেছেন। আজিমপুর ছাপড়া মসজিদের কাছে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী আবাসনের ফটকের সামনে দেখা গেল কয়েকটি দল মাংস কাটার কাজ করছে।

রাস্তার পাশে এবং যত্রতত্র কোরবানি কেন দিচ্ছেন জানতে চাইলে তারা একরকম বিরক্তই হলেন।

কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণে এবার ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের সাড়ে ২১ হাজার কর্মী মাঠে থাকছেন। ঈদের দিন দুপুর থেকে শুরু করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকার সব বর্জ্য সাফ করার লক্ষ্য ঠিক করেছেন তারা।

এ কার্যক্রমের তদারক করতে দুই সিটি করপোরেশন একাধিক মনিটরিং টিম গঠন করেছে। কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকক্ষও খোলা হয়েছে। বর্জ্য ফেলার ব্যাগ, ব্লিচিং পাউডারসহ অন্যান্য পরিচ্ছন্নতা উপকরণ ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে।

ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম আগেই সতর্ক করে বলছেন, “যে বাসার সামনে দেখব যত্রতত্র ময়লা ফেলে রেখেছে, সেখানে আমি ট্রাক দিয়ে ময়লা ফেলে দিয়ে আসব। কারণ, ২০০ লোকের জন্য লাখ লাখ মানুষ সাফার করুক এটা আমি চাই না। এজন্য যারা পরিবেশ নোংরা করবে তাদের জন্য এটা সতর্কবার্তা।”

আর ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস সকালে বায়তুল মোকাররম মসজিদে ঈদের নামাজ শেষে সাংবাদিকদের বলেন, “আপনারা অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন করুন, কোরবানি দিন। আমাদের পরিচ্ছন্নতাকর্মী, বর্জ্য সংগ্রহকারীর বিশাল জনবল আজ থেকে কাজ করবে। আপনাদের কোরবানির বর্জ্য তাদের হাতে দেবেন, যাতে করে আমরা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা শহর থেকে সব বর্জ্য অপসারণ করতে পারি।”