ঈদের নামাজ সেরে পশু কোরবানি, প্রস্তুত দুই সিটি

করোনাভাইরাসে মহামারীর মধ্যে এসেছে আরেকটি ঈদুল আজহা, সকালে ঈদের নামাজ পড়ে চলছে পশু কোরবানীর পর্ব।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 July 2021, 06:42 AM
Updated : 21 July 2021, 06:45 AM

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বুধবার দেশের কোথাও কোথাও বৃষ্টির পূর্বাভাস ছিল। বেলা সাড়ে ১১টার পর ঢাকার কোথাও কোথাও এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেলেও গরু-ছাগল জবাই বা মাংস কাটায় তা বড় ব্যাঘাত ঘটাতে পারেনি।

সকাল ৭টায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে রাজধানীতে ঈদের প্রধান জামাত হয়। ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে এবারও জাতীয় ঈদগাহে জামাতের আয়োজন ছিল না।

ঈদ জামাত শেষে শুরু হয় পশু কোরবানির তোড়জোড়ে। দুই সিটি করপোরেশন এবার পশু জবাইয়ের জন্য সব মিলিয়ে ৩৬৫টি স্থান নির্ধারণ করে দেয়, যা গত বছরের তুলনায় কিছুটা বেশি।

তবে বরাবরের মতই সকাল থেকে নগরীর রাস্তা ও অলিগলিতে পশু জবাইয়ের দৃশ্য দেখা গেছে। নির্ধারিত স্থানগুলোতে ভিড় নেই তেমন।

কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণে এবার ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের সাড়ে ২১ হাজার কর্মী প্রস্তুত রয়েছেন। ঈদের দিন দুপুর থেকে শুরু করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকার সব বর্জ্য সাফ করার লক্ষ্য ঠিক করেছেন তারা।

এ কার্যক্রমের তদারক করতে দুই সিটি করপোরেশন একাধিক মনিটরিং টিম গঠন করেছে। কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকক্ষও খোলা হয়েছে।

দক্ষিণ সিটির আওতাধীন এলাকা এবং পশুর হাটগুলোর বর্জ্য অপসারণের কাজ তদারক করতে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে ১০টি দল গঠন করা হয়েছে।

খোলা ট্রাক, পানির গাড়ি, ডাম্প ট্রাক, পে-লোডার, কন্টেইনার ক্যারিয়ার, টায়ার ডোজার, ট্রেইলার, স্কিড লোডারসহ প্রায় পৌনে ৪০০ যানবাহন ও যন্ত্রপাতি বর্জ্য অপসারণের কাজে থকবে দক্ষিণ সিটির আওতাধীন এলাকায়।

বর্জ্য যাতে যত্রতত্র ফেলা না হয়, সেজন্য দেড়হাজার পরিবেশবান্ধব ব্যাগ বিতরণ করা হবে বলে কাউন্সিলররা জানিয়েছেন। কোরবানি স্থানে ছিটানোর জন্য ৩০ টন ব্লিচিং পাউডার এবং ১৮০০ লিটার তরল জীবাণুনাশকও দেওয়া হচ্ছে।  

নিয়মিত পাঁচ হাজার কর্মীর পাশাপাশি অতিরিক্ত আরও পাঁচ হাজার কর্মী কাজ করবেন দক্ষিণ সিটিতে।

উত্তর সিটি জানিয়েছে, তাদের নিজস্ব ২ হাজার ৬৬৭ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর পাশাপাশি বেসরকারি ব্যবস্থাপনা মিলিয়ে মোট ১১ হাজার ৫০৮ জন কর্মী কোরবানির পশু বর্জ্য অপসারণের কাজে নিয়োজিত থাকবে।

বর্জ্য অপসারণ এবং কোরবানির পশুর হাটগুলো দ্রুত পরিষ্কার করার লক্ষে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব বর্জ্যবাহী ট্রাক, ভারী যন্ত্রপাতি, ওয়াটার বাউজারের পাশাপাশি আউটসোর্সিং করে অতিরিক্ত গাড়ি নিয়োজিত করা হবে। দৈনিক ১০ হাজার টন বর্জ্য অপসারণের লক্ষ্য ধরে এসব যানবাহন ও যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ঈদের আগের দিন থেকে ঈদের পর দুই দিন বর্জ্যবাহী ড্রাম্প ট্রাক ও খোলা ট্রাক, ভারী যান-যন্ত্রপাতি,পানির গাড়ি, পিকআপ ভ্যানসহ ৪৯৩টি যানবাহন এ কাজে নিয়োজিত থাকবে।

কোরবানির পশু জবাইয়ের স্থানে তরল জীবাণুনাশক মেশানো পানি ছিটানো হবে ১১টি ওয়াটার বাউজারের মাধ্যমে।

কোরবানির বর্জ্য ফেলার জন্য ৬ লাখ ৫০ হাজার বিশেষ ব্যাগ, ৫০ টন ব্লিচিং পাউডার এবং ৫ লিটারের ১ হাজার ৫টি ক্যান কেনা হয়েছে। বর্জ্য ফেলার ব্যাগ, ব্লিচিং পাউডারসহ অন্যান্য পরিচ্ছন্নতা উপকরণ ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে।

বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম তদারকির জন্য ২২ সদস্যের একটি টিম গঠন করেছে ঢাকা উত্তর সিটি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ এবং অন্যান্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঈদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে বলে সিটি করপোরেশনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে।

পশু কোরবানির জন্য ডিএনসিসি ২৫০ জন ইমাম এবং ২৫০ জন মাংস প্রস্তুতকারীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। রাস্তায় এবং ড্রেনের পাশে পশু কোরবানি না করতে সচেতনতামূলক প্রচার চালানো হয়েছে।

কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় ২ লাখের বেশি পশু কোরবানি দেওয়া হতে পারে এবার।

মেয়র আতিকুল ইসলাম বলছেন, করোনাভাইরাস মহামারীর এই সময়ে কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করা ‘বড় চ্যালেঞ্জ’। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নগরবাসীর সহায়তা প্রয়োজন।

“আমাদের টার্গেট ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বর্জ্য সরিয়ে নেওয়া। এ কাজে আমরা জনগণের সহযোগিতা চাচ্ছি। কারণ বর্তমানে কোভিড মহামারী চলছে, পাশাপাশি এইডিস মশার উপদ্রবও বেড়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে ঢাকাবাসীকে আরও অনেক বেশি সক্রিয় হতে হবে।”

মেয়র আতিক বলেছেন, নগরবাসীকে বর্জ্য ফেলার জন্য ব্যাগসহ অন্যান্য উপকরণ সরবরাহ করবে সিটি করপোরেশন। এরপরও কোনো বাসার সামনে যেখানে সেখানে ময়লা ফেলে রাখা হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

“যে বাসার সামনে দেখব যত্রতত্র ময়লা ফেলে রেখেছে, সেখানে আমি ট্রাক দিয়ে ময়লা ফেলে দিয়ে আসব। কারণ, ২০০ লোকের জন্য লাখ লাখ মানুষ সাফার করুক এটা আমি চাই না। এজন্য যারা পরিবেশ নোংরা করবে তাদের জন্য এটা সতর্কবার্তা।”

এবার আড়ত ও ট্যানারিগুলোর জন্য ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরু বা মহিষের চামড়ার দর ৪০ থেকে ৪৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ঢাকার বাইরে দাম হবে ৩৩ টাকা থেকে ৩৭ টাকা।

এছাড়া দেশে লবণযুক্ত খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৫ থেকে ১৭ টাকা, আর বকরির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।