তার ফুসফুসের ১০-২০ শতাংশ সংক্রমিত হয়েছে, আছে নিউমোনিয়ার লক্ষণ; শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি নেমে যাচ্ছিল দেহে অক্সিজেনের মাত্রা। শুরুতে বাসায় অক্সিজেন দেওয়া হলেও চিকিৎসকের পরামর্শে নেওয়া হল সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে।
এখন ওই হাসপাতালেই বাবার সঙ্গে দিনরাত কাটছে আরশাদ ও তার ছোট ভাইয়ের; কেবল বাবার কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের অক্সিজেন মাস্ক আর চিকিৎসার অন্যান্য দিকেই মনোযোগ তাদের।
আনন্দের ঈদ এলেও সেটা আরশাদের পরিবারের ভাবনায় এখন নেই; কখন সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরবেন স্বজন, সেটা নিয়ে তাদের যত চিন্তা।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় আরশাদ বলেন, “কোরবানি তো দূরে থাক, ঈদ নিয়ে আমরা চিন্তাও করতেছি না। আমাদের মাথায়ই আসতেছে না।”
হাসপাতালে মুজিবুল হকের অবস্থার এখন উন্নতি হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে রেমডেসিভির ইনজেকশন। অক্সিজেন স্যাচুরেশনও বাড়ছে।
বুধবার সারাদেশে কোরবানির ঈদ উদযাপিত হলেও আরশাদের পরিবারের মতো অন্য অনেকের জন্য সেটি আর আনন্দের উপলক্ষ নেই।
কারণ, এবার এমন এক সময়ে ঈদ এসেছে যখন মহামারীর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষকে।
সরকারি হিসাবে, ঈদের আগের দিন মঙ্গলবারও করোনাভাইরাস কেড়ে নিয়েছে দুইশ মানুষের প্রাণ; আক্রান্ত করেছে ১১ হাজার ৫৭৯ জনকে। আগের সাত দিনে প্রাণ গেছে ১ হাজার ৪৮৩ জনের আর আক্রান্ত হয়েছেন ৮১ হাজার ৭৮৪ জন।
ঈদের সময়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কোভিড-১৯ ইউনিটে মায়ের দেখভাল করতে হচ্ছে চাঁদপুরের জহিরুল ইসলামকে।
কোলন ক্যান্সারে আক্রান্তে মায়ের জরুরি অস্ত্রোপচার হয়, তার মধ্যে ধরা পড়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণ। ৩০ জুলাই জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট থেকে রোগীকে পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেলে।
হাসপাতালে করোনাভাইরাস আর ক্যান্সারের চিকিৎসা একই সঙ্গে চলছে। নিয়মিত দিতে হচ্ছে রক্ত। ২০ দিন পরের পরীক্ষায়ও তার শরীরে আছে করোনাভাইরাস।
ঈদের আগের দিন মঙ্গলবার দুপুরে যখন জহিরুলের সঙ্গে কথা হয়, তখন মায়ের জন্য ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্ত নিয়ে ফিরছিলেন তিনি।
জহিরুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একদিকে মায়ের চিকিৎসায় ঋণগ্রস্ত, অন্যদিকে হাসপাতাল মা ভর্তি। আমরা কোরবানিও দিচ্ছি না, ঈদ তো দূরের কথা।”
প্রসবকালীন অস্ত্রোপচারের পর সেলাইয়ের জায়গায় সংক্রমণ হওয়া বোনকে এনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান শরীয়তপুরের মোহাম্মদ শাহজাহান।
হাসপাতালে মহিলা ওয়ার্ডে চিকিৎসা চলাবস্থায় পরীক্ষায় ধরা পড়ে তার শরীরে করোনাভাইরাসেরও সংক্রমণ হয়েছে। এরপর তার স্থান হয় পুরনো বার্ন ইউনিটের স্থাপিত করোনাভাইরাসের চিকিৎসা কেন্দ্রে।
ঈদের দিনে মাকে নিয়ে হাসপাতালে বোনের দেখভাল করতে হচ্ছে শাহজাহান; তাদের মনে দুশ্চিন্তা রোগীর অবস্থা কোন দিকে যায়।
শাহজাহান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কিসের আর ঈদ! কোনো উপায় তো নাই। কীভাবে এখান থেকে ছাড়া পাব, সেই চিন্তা করতেছি ।”