জিজ্ঞেস করতেই মাঝবয়সী এই ব্যক্তি বলেন, “বাসা কাছাকাছি বলে… আবার হাটে এসে ছেলেদের গরু দেখার শখ আছে বলে, এদের নিয়েই এসেছি। পছন্দ হলে নিয়ে চলে যাব।”
করোনাভাইরাস সংক্রমণের অতি বিস্তারের মধ্যে পশুর হাটে আসার সরকারি নির্দেশনার বিষয়ে মনে করিয়ে আরও কিছু জিজ্ঞেস করতে গেলে কিছুটা লজ্জাই পেলেন। আর কিছু বলতে চাইলেন না। নিজের পরিচয়ও জানালেন না।
শুধু তারা নন, এমন অনেককেই দেখা গেল ঢাকার কোরবানি পশুর হাটগুলোতে- যেখানে শনিবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কেনাবেচা শুরু হয়েছে।
রোববার ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির কয়েকটি হাট ঘুরে দেখা গেল, গরু কিনতে বা দেখতে দলবেঁধে শিশুরা যেমন ঘুরছেন ফিরছেন, তেমনি বয়স্করাও বাদ নেই।
অনেককেই দেখা গেল দলবল নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন গায়ে গা লাগিয়ে। তেমনই ছয়জনের একটি দলের দেখা মিলল আফতাবনগর হাটে।
“এজন্য দেখে-বুঝে নেওয়ার জন্য একটা গাড়ি নিয়ে আমরা চলে এসেছি।”
রোববার কয়েকটি হাট ঘুরে ক্রেতাদের মত পশু বিক্রেতা ও বেপারীদেরও স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি। হাটে ঢোকার মুখে ও পরে যেসব নিদের্শনা মেনে চলার কথা তা অনুসরনের উদাহরণ চোখে পড়েনি বললেই চলে।
আফতাবনগর হাটে মেহেরপুর থেকে আসা ছয় বেপারীদের একটি দলকে বেশ কিছু গরু নিয়ে অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়। তাদের কারও মুখেই তখন মাস্ক ছিল না।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে নুরুল ইসলাম নামে এক বেপারী বলেন, “ভাই- কাস্টমারই তো ভিড়ছে না, মাস্ক পরে কী হবে। আছে, বৃষ্টি পড়েছিল বলে মাস্ক ব্যাগে রেখে দিয়েছি।”
অথচ দেশে কোভিড মহামারীতে দ্বিতীয়বারের মত বসা এসব হাটে স্বাস্থ্যবিধি ও সুরক্ষার বিষয়ে প্রচারণা, সিটি করপোরেশনের হুশিয়ারি ও সতর্কতা থেমে নেই। একদিকে চলছে অনবরত মাইকিং, অন্যদিকে তা ‘কানে না নিয়েই’ ঘুরে বেড়াচ্ছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।
অন্যদিকে সরকার মহামারীর ব্যাপক বিস্তারের মধ্যে ঈদকে ঘিরে লকডাউন শিথিল করলেও মাস্ক পরা ও কোরবানির পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছে। যদিও কোভিড বিষয়ক জাতীয় কারগির পরামর্শক কমিটি লকডাউন বহাল রেখে হাট বন্ধ করার বিষয়ে পরামর্শ দেয়।
এমন প্রেক্ষাপটে সিটি করপোরশেন ও হাটের ইজারাদারের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে মাইকিং, লিফলেট বিতরণসহ বিভিন্নভাবে হাটে আসা লোকদের মাস্ক পরানো, হাত ধোওয়া, স্বাস্থ্যবিধি মানতে সচেতন হওয়ার জন্য প্রচারণা চালাতে দেখা গেলেও প্রকৃতঅর্থে তা গ্রাহ্য করতে দেখা যায়নি অনেককেই।
রোববার এসব হাটে সরেজমিনে দেখা যায়, মানুষের শরীরের তাপমাত্রা দেখতে থার্মাল স্ক্যানারের ব্যবহার দেখা যায়নি।
তেমনি হাটগুলোর প্রবেশ ও বের হওয়ার একমুখী ব্যবস্থা গ্রহণের কথা থাকলেও তা দেখা যায়নি। প্রবেশমুখে হাত ধোওয়ার জন্য কয়েকটি বেসিন বসিয়ে পানি ও সাবান দেওয়া হলেও খুব কম লোকজনকেই তা ব্যবহার করতে দেখা গেছে।
হাটের ভেতর পশু দাম-দর করার ক্ষেত্রে ক্রেতা-বিক্রেতাদের নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় থাকার কথা বললেও তাও মানা হচ্ছে না।
তবে হাটে সিটি করপোরেশন উদ্যোগে কিছু স্বেচ্ছাসেবকরা সচেতনামূলক প্রচারণার পাশাপাশি মাস্কবিহীন লোকদের মধ্যে মাস্ক বিতরণ, মাস্ক পরাতে উদ্বুদ্ধ করাসহ নির্ধারিত দূরত্ব রজায় রেখে চলাচল করতে অন্যদের বলতে দেখা গেছে।
তিনি বলেন, “কেউ যদি মাস্ক থুতনিতে নামিয়ে রাখে তাকেও সঠিকভাবে পরতে বলছি। হাটের ভেতরে লোকজনকে একমুখী চলাচল করতে বলছি। কেউ কেউ আমাদের কথা শুনছেন, আবার অনেকে কান দেয় না।”
হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে দাবি করে আফতাবনগর হাটের ইজারাদার মাহবুবুর রহমান শিমুল বলেন, “আমরা হাটের প্রবেশ পথগুলোতে বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ করছি। হ্যান্ডস্যানিটাইজার, স্প্রে মেশিনের ব্যবহার করছি। সারাক্ষণ মাইকিং করে সচেতনতামূলক প্রচারণা করা হচ্ছে।”
হাটের ভেতরে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পালন না হওয়ার বিষয়ে ইজারাদারের দায়িত্ব কতটুকু, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “কিছু কিছু বেপারী আছেন যাদেরকে হাজারবার বললেও মাস্ক পরবেন না তারা। তাদেরকে মহামারীর বিষয়ে সচেতন করে যাচ্ছি। মেয়র মহোদয় ঘুরে গেছেন, তিনিও লোকদের সচেতন হতে আহ্বান জানিয়ে গেছেন, আমরাও চেষ্টা করে যাচ্ছি।”
আরও পড়ুন