কর্মবিরতির হুমকি বিমানের পাইলটদের

মহামারীকালে বিমানে সবার বেতন কাটার সিদ্ধান্ত হয়েছিল; দেড় বছর বাদে অন্যদের আবার আগের মতো বেতন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও পাইলটদের ক্ষেত্রে তা হয়নি। সেই কারণে কর্মবিরতির হুমকি দিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান সংস্থাটির পাইলটরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 July 2021, 02:31 PM
Updated : 14 July 2021, 02:34 PM

বিমান কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তকে ‘বৈষম্যমূলক’ আখ্যায়িত করে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পাইলট অ্যাসোসিয়েশন (বাপা) বুধবার এক সভা থেকে এই হুমকি আসে।

বাপার সভাপতি মাহবুবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পাইলটদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দাবি আদায় না হলে প্রয়োজনে আমরা কর্মবিরতির মতো কর্মসূচি পালন করতে বাধ্য হব।”

বৈমানিকদের আন্দোলনের বিষয়ে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সালেহ মোস্তফা কামাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

জাতীয় পতাকাবাহী এই সংস্থার বৈমানিকদের দাবির বিষয়ে বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বর্তমান মহামারী পরিস্থিতি সবাইকে বিবেচনায় নিতে হবে। বিমানের পাইলটদের দাবি বিবেচনার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষ রয়েছে। তারা সব দিক বিবেচনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন বলে আশা করি।”

বলাকা ভবন

গত বছর করোনাভাইরাস মহামারী শুরুর পর বিশ্বের আকাশপথে চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। যাত্রীবাহী ফ্লাইট বন্ধ হওয়ার পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ কর্মীদের বেতন কমিয়ে আনে।

এক বছরের বেশি সময় হয়ে গেলেও বিমান চলাচল এখনও পুরোদমে চালু হয়নি। তবে এর মধ্যেই মঙ্গলবার বিমানের পরিচালক (প্রশাসন) জিয়াউদ্দীন আহমেদের একটি অফিস আদেশে সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন কাটার আগের সিদ্ধান্তে নানা ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে বর্তমানে ১৫৭ জন পাইলট কাজ করছেন। ২০২০ সালের মে মাস থেকে তাদের বেতন ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কাটা হচ্ছে।

মঙ্গলবারের আদেশে বলা হয়, বিমানে কর্মরত ‘কর্মকর্তা’ এবং যেসব ককপিট ক্রুর চাকরির বয়স শূন্য থেকে পাঁচ বছর, জুলাই মাসে তাদের কোনো বেতন কাটা হবে না।

তবে ককপিট ক্রুদের বিষয়ে বলা হয়েছে, যেসব ককপিট ক্রুর (পাইলটসহ) চাকরির বয়স ৫ থেকে ১০ বছর, জুলাই মাসে তাদের বেতন থেকে ৫ শতাংশ এবং যাদের চাকরিকাল ১০ বছর বা এর বেশি, তাদের ২৫ শতাংশ বেতন কাটা হবে।

পাইলটরা বলছেন, তারা ওভারসিজ অ্যালাউন্স নামে একটি ভাতা পেতেন, যা তাদের বেতনের ২০ শতাংশ। সেটা এখন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ বলে মূলত তাদের বেতন ২৫ শতাংশের পরিবর্তে ৪৫ শতাংশ কাটা হবে। যাদের বেতন ৫ শতাংশ কাটা হবে, তাদের ক্ষেত্রেও সেটা ২৫ শতাংশে দাঁড়াবে।

আর ৫ বছরের কম সময়ে দায়িত্বপালনকারী যাদের বেতন কাটা হবে না বলা হচ্ছে, তাদের সংখ্যা ৫ থেকে ১০ জনের বেশি নয় বলে পাইলটরা জানান।

ফাইল ছবি

বিমান কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে বাপার নির্বাহী পরিষদের বুধবার সভায় বসে।

সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, বিমান কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের ‘জোরাল প্রতিবাদ’ জানিয়ে একটি চিঠি দেওয়া হবে এবং আগামী ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে বিমানের অন্যান্য কর্মকর্তা/কর্মচারীর মতো বেতন সমন্বয়ের অনুরোধ করা হবে।

বাপা সভাপতি মাহবুবুর বলেন, “বিমান কর্তৃপক্ষ আগামী ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে বেতন সমন্বয় না করলে তারপর থেকে পাইলটগণ শুধু বিমান ও বাপার মধ্যে সম্পাদিত দ্বিপাক্ষিক চুক্তিপত্র অনুযায়ী ফ্ল্ইাট পরিচালনা করবে।”

তবে করোনাভাইরাস মহামারী চলাকালীন চিকিৎসা সংক্রান্ত সরঞ্জাম, ওষুধপত্র, টিকা পরিবহনের জন্য বিমান চালাতে পাইলটরা প্রস্তুত থাকবে বলে জানান তিনি।

মহামারীর মধ্যে নিয়মিত ফ্লাইট বন্ধ থাকলেও যে কোনো প্রয়োজনে পাইলটরা বিমান নিয়ে উড়েছেন জানিয়ে মাহবুবুর বলেন, উহানে ফ্লাইট পরিচালনা, একটানা ৩৬ ঘণ্টা ডিউটি করা, ঢাকা-লন্ডন-ঢাকা সাটল ফ্লাইট পরিচালনা করা, নিজস্ব ছুটির দিনে ফ্লাইট পরিচালনা করা, মাসিক নির্ধারিত কর্মঘণ্টার অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনাও পাইলটরা করে গেছেন।

“যেখানে বিমানের কোনো কর্মকর্তার বেতন আর কাটা হবে না, সেখানে ফ্রন্টলাইনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা পাইলটদের বেতন কেন কাটা হবে?”

বিমানের এমন সিদ্ধান্তে পাইলটরা চরম হতাশ এবং ক্ষুব্ধ বলে জানান বাপা সভাপতি।

ভিন্ন রকম সিদ্ধান্ত নিয়ে বিমানের অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে পাইলটদের মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড় করানো হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

মাহবুবুর বলেন, “এরকম সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে চাকরি ক্ষেত্রে শুধু বৈরী পরিবেশই নয়, বিমান উড্ডয়নের নিরাপত্তার জন্যও অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে।”