শ্রমিক স্বার্থ: শিল্প মালিক সংগঠনের ভূমিকা নিয়ে বিচারকের উষ্মা

শ্রমিক স্বার্থ, নিরাপদ কর্মক্ষেত্র, কারখানার পরিবেশ ও মানোন্নয়নে ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলোর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 July 2021, 01:26 PM
Updated : 14 July 2021, 01:26 PM

নারায়ণগঞ্জে হাসেম ফুডস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে অর্ধ শতাধিক শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলোর নীরবতা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন বিচারক।

হাসেম ফুডসের হতাহত শ্রমিকদের বেতন, বোনাস, বকেয়া পাওনা নিয়ে এক আবেদনের শুনানি হয় বুধবার হাই কোর্টে।

শুনানির এক পর্যায়ে আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, “ব্যক্তিগতভাবে আমি পত্র-পত্রিকা ফলো করার চেষ্টা করি। তাদের (ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর) কোনো পজিটিভ ভূমিকা দেখি না।

“আপনারা যারা বিভিন্ন (মানবাধিকার, পরিবেশ, আইনি সহায়তাকারী) সংগঠন নিয়ে আছেন, তারা কোর্টে আসেন। সব থেকে দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে, আমাদের দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় যারা আছেন, তাদের কিন্তু এসব বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ দেখা যায় না।”

হাসেম ফুডসে অগ্নিকাণ্ডের প্রসঙ্গ ধরে বিচারক বলেন, “আমি দেখি নাই যে, এফবিসিসিআই স্টেটমেন্ট দিয়ে এই শ্রমিকদের মৃত্যুর বিষয়ে কোনো শোক জানিয়েছে বা তাদের কোনো প্রতিনিধিদল সেখানে গিয়েছে।”

ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর দায়বদ্ধতা নিয়ে বলতে গেলে আইনজীবীকে থামিয়ে বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম বলেন, “তারা শুধু আছে সরকারের কাছ থেকে কিভাবে ক্ষতিপূরণ, প্রণোদনা নেবে আর ব্যাংকের লোনগুলো মাফ করাবে।”

ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর ভূমিকা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “আমার মনে হয়, এফবিসিসিআইসহ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর রোল প্লে করার প্রয়োজন এসব ক্ষেত্রে।

“ঠিকমত ফ্যাক্টরিগুলো রান করছে কি না? কোথায় কী দুর্বলতা? এগুলো তাদের দেখা উচিৎ। গার্মেন্টেসের ব্যাপারে বিদেশিরা চাপ দিয়েছে বলে সেখানে এখন অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের দেশে যতক্ষণ চাপ না দিচ্ছেন ততক্ষণ কাজ হয় না। এটা বোঝা উচিৎ।”

শিল্প কারখানা তদারককারী সরকারি সংস্থাগুলোর সমালোচনা করে বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম বলেন, “তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন কি না, সেটা দেখা উচিৎ।

“আজকে পত্রিকায় দেখলাম পরিদর্শনে যান, গিয়ে খাম নিয়ে চলে আসেন। এসব জায়গাগুলোতে আপনাদের (মানবাধিকার, পরিবেশবাদী বা আইনি সহায়তাকারী সংগঠন) কাজ করার সুযোগ আছে।”

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুডসে অগ্নিকাণ্ডে নিহত ও আহত শ্রমিকদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং কারখানার মান নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ মালিক, কারখানা পর্যবেক্ষণে ব্যর্থ সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বিচার দাবিতে সোমবার ঢাকার পল্টন মোড়ে মানববন্ধন করে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুডস লিমিটেডের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে নিহত শ্রমিকদের প্রত্যেকের পরিবারকে এক কোটি টাকা এবং আহতদের প্রত্যেককে ৩৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে চারটি সংগঠনের পক্ষে গত শনিবার হাই কোর্টে রিট আবেদন করা হয়।

সংগঠনগুলো হচ্ছে- আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), বাংলাদেশ লিগ্যাল অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এবং সেফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটি।

রোববার আংশিক শুনানির পর বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম একক বেঞ্চের এখতিয়ার ও বিচারিক সীমাবদ্ধতা তুলে ধরে নিহত শ্রমিকদের পরিচয় সনাক্ত হওয়া অবধি অপেক্ষা করতে বলেন।

তবে আহত শ্রমিকদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য সচিব ও শ্রম সচিবের সঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেলকে কথা বলতে বলেন বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম।

সেই সঙ্গে কতজন শ্রমিক আহত, চিকিৎসাধীন তার একটি তালিকা জনসমক্ষে প্রকাশ করার বিষয়েও কথা বলতে বলা হয় অ্যাটর্নি জেনারেলকে।

তারই ধারাবহিকতায় বুধবার হতাহত শ্রমিকদের বেতন, বোনাস, বকেয়া দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে সম্পূরক আবেদন করেন আইনজীবী ছিলেন সারা হোসেন।

হতাহত শ্রমিকদের বেতন-বোনাস, বকেয়ার বিষয়ে বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম বলেন, “বেতন-বোনাস দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। পত্রিকায় এসেছে দেখলাম শুক্রবার তাদের বোনাস দিয়ে দেবে। আহত  শ্রমিকদের কিভাবে দেওয়া হবে সে ব্যাপারেও কর্তৃপক্ষের একটা বক্তব্য আছে দেখলাম। পরিশোধের প্রক্রিয়া চলছে। তারিখ উল্লেখ করে দিয়েছে। এ অবস্থায় কোনো আদেশ দিলাম না। দেখা যাক।”