কোভিড: টিকা আসার গতিতে ‘সন্তুষ্ট নয়’ সংসদীয় কমিটি

করোনাভাইরাসের টিকা সংগ্রহের গতিতে ‘অসন্তুষ্টি’ প্রকাশ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বলেছে, টিকা আসার যে গতি তাতে বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষকে টিকা দিতে ২০২৪ সাল লেগে যেতে পারে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 July 2021, 02:32 PM
Updated : 11 July 2021, 02:43 PM

এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংসদীয় কমিটিকে জানিয়েছে, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি কোভিশিল্ড টিকার পরবর্তী চালান সেপ্টেম্বর মাসে দেশে আসতে পারে।

রোববার সংসদ ভবনে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশের ‘টিকা কূটনীতি’ নিয়ে আলোচনাকালে এসব বিষয় উঠে আসে।

বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “টিকা আনার অগ্রগতি নিয়ে আমরা আগেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছি। এখনকার গতি নিয়ে সন্তুষ্টির কিছু নেই।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার ফাইজারের টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এক স্বাস্থ্যকর্মী। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

“যেরকম আমরা জেনেছি প্রতিমাসে গড়ে ৫০ লাখের মত আসতে পারে। সেই হিসাবে ১২-১৩ কোটি মানুষের জন্য ২৬ কোটি ডোজ লাগবে। তাহলে দেশের বেশিরভাগ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে তো ২০২৪ সাল লেগে যাবে।”

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কবে নাগাদ টিকা আসবে সে বিষয়ে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ফারুক খান বলেন, “ভারতের সেরামের সঙ্গে আমাদের যে চুক্তি হয়েছে সেই চুক্তির আওতায় টিকা আগামী সেপ্টেম্বর মাসে পাঠানো শুরু করবে।”

গত মে মাসের বৈঠেক সংসদীয় কমিটি এই ইনস্টিটিউটের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছিল। বিষয়টি রোববারের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “মন্ত্রণালয় আমাদের জানিয়েছে, ভারত দুঃখ প্রকাশ করেছে। সেজন্য কমিটি বলেছে, আইনি পথে আর যাব না।”

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে কোভিশিল্ডের তিন কোটি ডোজ টিকা কেনার জন্য গত বছরের শেষ দিকে চুক্তি করেছিল বাংলাদেশ। সেই টিকার প্রথম চালান পাওয়ার পর ৭ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে গণটিকাদান শুরু হয়।

কিন্তু দুই চালানে ৭০ লাখ ডোজ পাঠানোর পর ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দিলে সঙ্কটে পড়ে বাংলাদেশ। পর্যাপ্ত টিকা না থাকায় ২৫ এপ্রিল দেশে প্রথম ডোজ দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। যারা প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তাদের সবাইকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া যায়নি।

এমন পরিস্থিতিতে সরকার চীন ও রাশিয়া থেকে টিকা সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়।

গত জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছিলেন, কোভ্যাক্স কর্মসূচির আওতায় ‘শিগগিরই’ ১০ লাখ ৮০০ ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা বাংলাদেশ পাচ্ছে। সেই টিকা জুলাই মাসে হাতে পাওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

কোভ্যাক্স থেকে ৬ কোটি ডোজের বেশি টিকা পাওয়ার কথা রয়েছে বাংলাদেশের। এর মধ্যে ফাইজার-বায়োএনকেটের তৈরি ১ লাখ ৬২০ ডোজ টিকা এবং মডার্নার তৈরি ২৫ লাখ ডোজ ইতোমধ্যে দেশে এসেছে। তবে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কবে আসবে, তার দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত হয়নি।  

এর বাইরে চীন উপহার হিসেবে সিনোফার্মের ১১ লাখ ডোজ টিকা দিয়েছে এবং এই কোম্পানি থেকে কেনা টিকার একটি চালান দেশে এসেছে।

এদিকে রোববারের সংসদীয় কমিটির বৈঠকে সমুদ্রপথে অবৈধভাবে বিদেশ যাত্রা রোধে পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয়ে যৌথ কমিটি করে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে কমিটির সভাপতি বলেন, “কিছু দিন পর পর খবর আসে অবৈধভাবে বিদেশ যেতে গিয়ে সাগরে বাংলাদেশির মৃত্যু। এটাতো আমাদের জন্য ইজ্জতের ব্যাপার। আমরা যে উন্নয়নশীল দেশের দিকে যাচ্ছি, সেদিক থেকে দেখলে এটা নেতিবাচক।

“যারা আটক হয়ে ফিরে আসছে তাদের রিমান্ডে নিয়ে কারা অবৈধভাবে পাঠাচ্ছে সে বিষয়ে খোঁজ নিতে বলেছি।”

বৈঠকে দেশের বাইরে বাংলাদেশের দূতাবাসে দুর্নীতির নিয়ে আলোচনা হয় বলেও জানিয়েছেন ফারুক খান।

তিনি বলেন, “লেবানন ও ইতালির মিলানে আমাদের দূতাবাসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিয়োগ উঠেছে। সেটা নিয়ে আমরা জানতে চেয়েছিলাম। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মিলানে যে দায়িত্বে ছিল তাকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে।”

ফারুক খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, নুরুল ইসলাম নাহিদ, গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স, মোঃ আব্দুল মজিদ খান, মো. হাবিবে মিল্লাত ও নিজাম উদ্দিন জলিল (জন) অংশ নেন।