রাতজুড়ে অপেক্ষায় ছিলেন মায়ের ফিরে আসার। ভয়াল আগুনে কারখানা যখন জ্বলছিল তখন আশেপাশে খুঁজেছেন। হাসপাতাল থেকে সংবাদের প্রত্যাশাতেও ছিলেন।
শুক্রবার দুপুরের পর কারখানা থেকে একে একে যখন সব লাশ বের করা হয়, তখন আর বুঝতে বাকি থাকেনি সব শেষ।
শেষ পর্যন্ত বিধ্বস্ত শরীর আর ভাঙা মন নিয়ে দুপুরের পর ছুটে এসেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
এরপর তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "এক সাথে কারখানায় ঢুকলাম, সারাদিন কাজ করলাম। বিকালে আগুন লাগার পর আর মাকে খুঁজে পাচ্ছি না।"
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাশেম ফুডস অ্যান্ড বেভারেজ কারখানার ১৮ বছরের এই কর্মী চম্পা ধরা গলায় বলে চলেন, “সকাল সাড়ে ৭টার দিকে রূপগঞ্জের গোলাকান্দাইল নতুন বাজার এলাকার বাসা থেকে বের হয়ে কারখানাই যাই।
"মা চারতলায় আর আমি দোতালায় কাজ করি। দুবছর ধরে কাজ করছি। বিকালের দিকে একজনের কার্ডের সমস্যা। তাকে নিয়ে নিচে অফিসে কথা বলার সময় আগুন আগুন চিৎকার। সবাই ছোটাছুটি শুরু করছে। আমিও তাদের সাথে বের হয়ে যাই।"
তার বাবা মনজিল ভূঁইয়ার নতুনবাজারে ফুটপাতে চা দোকান রয়েছে।
চম্পা কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, "দোতালায় থাকলে হয়ত আমিও মায়ের মত হতাম। পরে বাইরে বের হয়ে মায়ের জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলাম। দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। সবাই বের হচ্ছে, সবার মুখের দিকে তাকাই, মায়ের মুখ দেখি না।"
প্রায় সারারাত মায়ের জন্য অপেক্ষায় থাকেন তারা। পরে লাশ উদ্ধারের পর ধরে নেন মা আর নেই। তাইত মায়ের মরদেহ অন্তত পেতে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য রক্ত দিতে এসেছেন।
শুক্রবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়েছে রূপগঞ্জ উপজেলার কর্ণগোপ এলাকায় সজীব গ্রুপের হাসেম ফুডসের এই কারখানায় আগুনে মৃত ৪৯ জনের মৃতদেহ। বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে আগুন লাগার পর রাতে তিনজনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছিল স্থানীয় প্রশাসন।
"মা'র সাথে শেষ কথা কারখানায় যেতে যেতে হয়েছে। এখন লাশ বুঝিয়ে দিলে হয়," আর যেন কথা বলতে পারছিলেন না চম্পা আক্তার।
আরও পড়ুন