হাসেম ফুডসে অগ্নিকাণ্ড: পোড়া লাশগুলো দেখে ‘চেনার উপায় নেই’

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুডস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে নিহত অধিকাংশের দেহ এতটাই পুড়ে গেছে যে, চোখে দেখে তাদের আর ‘চেনার উপায় নেই’ বলে জানিয়েছে পুলিশ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 July 2021, 12:40 PM
Updated : 9 July 2021, 03:50 PM

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুভাষ চন্দ্র সাহা জানিয়েছেন, নিহতদের পরিচয় শনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য মৃতদেহগুলোর নমুনা সংরক্ষণ করা হবে।

শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে এক সংবাদ বিফ্রিংয়ে তিনি বলেন, “মৃতদেহগুলো পুরোপুরি পুড়ে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবে পরিচয় সনাক্ত করা অসম্ভব। তাই আমরা ডিএনএ পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ডিএনএ পরীক্ষা করে প্রকৃত স্বজনদের হাতে মৃতদেহ বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

“যতদিন লাগে মৃতদেহগুলো মর্গেই থাকবে। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত স্বজনদের কাছে মৃতদেহগুলো বুঝিয়ে দিতে।”

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কর্ণগোপ এলাকায় সজীব গ্রুপের ওই কারখানায় জুস ও বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী তৈরি করা হত। বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে সেখানে ভয়াবহ আগুন লাগে; ২৪ ঘণ্টা পরও তা পুরোপুরি নেভানো যায়নি।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতেই ৩ জনের মৃত্যুর কথা স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছিল। শুক্রবার দুপুরে পোড়া কারখানা থেকে বের করে আনা হয় আরও ৪৮ জনের মৃতদেহ।

বিকেল ৩টার দিকে পাঁচটি অ্যাম্বুলেন্সে করে মৃতদেহগুলো ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয়।

শাহবাগ থানার ওসি মওদুত হাওলাদার বলেন, “মৃতদেহগুলোর সুরতহাল করবে জেলা পুলিশ এবং তারপর ময়নাতদন্ত হবে। সার্বিক পর্যবেক্ষণ করার জন্য মহানগর পুলিশ মর্গে রয়েছে।”

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আগুনে পোড়া হাসেম ফুডস কারখানা থেকে উদ্ধার হতভাগ্য শ্রমিকদের লাশ শুক্রবার বিকেলে ঢাকা মেডিকেলের মর্গে নিয়ে আসেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

এদিকে মর্গে একের পর এক সাজিয়ে রাখা মৃতদেহগুলোর পরিচয় নিশ্চিত করতে বিকালেই কাজ শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি।

বিকাল ৫টার দিকে সিআইডির কর্মীরা ছবি তুলে নম্বর বসানোর প্রাথমিক কাজ শুরু করেন।

সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর মনির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চিকিৎসক ওই নম্বর ধরে মৃতদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে আমাদের দেবেন। আমরা সিআইডির ল্যাবে ডিএনএ পরীক্ষা করব।”

পরিচয় নিশ্চিত করতে নিখোঁজ শ্রমিকদের স্বজনদের নমুনাও নেওয়া হচ্ছে। সেজন্য মর্গের পাশে একটি কক্ষে জড়ো হওয়া স্বজনদের কাছ থেকে নাম ঠিকানা সংগ্রহ করতে দেখা যায় নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশকে।

এর আগে স্বজনদের বক্তব্যের ভিত্তিতে ৪৮ জন নিখোঁজ শ্রমিকের একটি তালিকা করে রূপগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাত সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শামীম বেপারী জানান, তার নেতৃত্বে গঠিত এই কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মৃতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা এবং আহতের ১০ হাজার টাকা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান তিনি।