হাসেম ফুডসের ভেতরে প্রচুর ‘দাহ্য ভোজ্যতেল’

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আগুনে পোড়া হাসেম ফুডস কারখানার ভেতরে প্রচুর ভোজ্যতেল পাওয়া গেছে, যার কারণে আগুন বেশি সময় ধরে জ্বলেছে বলে মনে করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকগোলাম মর্তুজা, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 July 2021, 10:56 AM
Updated : 9 July 2021, 03:53 PM

বৃহস্পতিবার রাত থেকে সজীব গ্রুপের ওই কারখানায় আগুন নেভানোর কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মনির হোসেন ও পরিদর্শক ফখর উদ্দিন। ক্লান্ত দুজন বসেছিলেন কারখানার পেছনে একটা বেঞ্চে।

মনির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চারতলার দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে একসঙ্গে অন্তত ২৫টি লাশ পাওয়া গেছে। ওই ওই ফ্লোরে এক ধরনের নসিলা তৈরি হতো, যা তৈরিতে ভোজ্য তেল ব্যবহার করা হতো।

“ওই ভোজ্যতেলই মূলত জ্বালানি হিসেবে এতক্ষণ ধরে জ্বলছে। এছাড়া প্রচুর প্লাস্টিক ও কাগজের কার্টুন সেখানে ছিল।”

তিনি বলেন, ভোজ্য তেলপাইপ লাইনের মাধ্যমে পুরো ফ্লোরে বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেই পাইপ ফেটে ভোজ্যতেল মেঝেতে পড়ে সাংঘাতিক পিচ্ছিল হয়ে রয়েছে।

চারতলায় কাজ করতে গিয়ে তিনিসহ ফায়ার সার্ভিসের বেশ কয়েকজন কর্মী পিছলে পড়ে আহত হয়েছেন বলেও জানান মনির।

রূপগঞ্জের কর্ণগোপ এলাকায় সেজান জুস, কোমল পানীয় ও বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী তৈরির ওই কারখানায় বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে আগুন লাগার পর রাতে তিনজনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছিল স্থানীয় প্রশাসন।

ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মী গ্লাভসে লেগে থাকা গাম দেখাচ্ছেন; সবকিছু ভীষণ তেলতেলে ও পিচ্ছিল ছিল।

শুক্রবার বেলা আড়াইটা পর্যন্ত ওই ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে আরও ৪৮ জনের পোড়া মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতের সংখ্যা বেড়ে হয় ৫১।

সজীব গ্রুপর এই কারখানায় জুস, বেভারেজসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য তৈরি হত। ছয় তলা ভবনের ছাদে ওঠার জন্য দুটি সিঁড়ি রয়েছে, যার একটির ছাদের দরজা বন্ধ ছিল বলে এর মধ্যে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

কারখানাটিতে জুস, চকলেট, নসিলা, লিচু, সেমাই, চানাচুর ও বিস্কুটসহ বিভিন্ন খাবার তৈরি হতো বলে মৌমিতা নামে এক কিশোরী কর্মী জানাল।

সে বলল, ভবনটির চার তলা ও পাঁচ তলায় চানাচুর সেমাই ভাজার কাজ চলত। প্রচুর তেল ব্যবহার করা হতো, যার জন্য ফ্লোর সব সময় গরম থাকত।

ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শক ফখর উদ্দিন বলেন, কারখানার কর্মীদের লাশগুলো সরঞ্জামাদির সঙ্গে পুড়ে মেঝেতে পরে ছিল। বেশিরভাগের লিঙ্গ পরিচয় বোঝার কোনো উপায় নেই।

“ভোজ্যতেলের আগুনের প্রচুর গরম এবং ধোঁয়া, যার কারণে ওই ফ্লোরে ঢুকতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে।”

ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বৃহস্পতিবার রাত থেকে কারখানাটিতে আগুন নেভানোর কাজ করছেন। খাওয়া ও বিশ্রামের জন্য তাদের এক দলকে নিচে পাঠানো হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিসের এই দুই কর্মকর্তা জানান, কারখানার ভেতরে অগ্নিনির্বাপনের তেমন কোনো সরঞ্জাম তারা দেখেননি।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মী তারিক ও মনিরুল বলেন, ভেতরে প্রচুর তেল ও গাম জাতীয় বস্তু।